❤ গল্পঃ ছোট্ট বৌমা ❤
লেখকঃ হাসান মাহমুদ
রাহাত সাহেব ভোরবেলা বাগানে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। প্রভাতে মৃদু বায়ু আর পাখিদের কিচিরমির স্বর তাঁর মনকে সতেজ করে তোলছে। তখন আতিকা বেগম তাঁর স্বামীর জন্য চা নিয়ে এলেন। রাহাত সাহেব পত্রিকা রেখে প্রিয়তমা স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে, তাকে পাশে বসতে বললেন।
আতিকা স্বামীর পাশে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গল্প শুরু করলেন নিজেদের হারিয়ে যাওয়া সুখ-দুঃখে ভরা অতীত নিয়ে। যেগুলো তাঁরা ভাগ করেছেন একসাথে হাসিমুখে। আজ তাঁরা এক সন্তানের বাবা-মা। তাদের সন্তান নিয়ে তাঁরা কত শত স্বপ্ন দেখেছেন। দু'জন মিলে সেই আলোচনা করছিলেন।
হঠাৎ আতিকা বললেনঃ আয়ানের বাবা! আমাদের ছেলেতো এইবার ইন্টার দিয়ে দিয়েছে। তাঁর তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। অথচ এখনো আমরা তাকে টাকা রুজির কোন পথ করে দিচ্ছিনা। পরে তো তাকেও আমাদের মত কষ্ট করতে হবে, বিয়ে করার জন্যে। ছেলের বয়স হয়ে যাবে, বেশি টাকা রুজি না করার বাহানায় মানুষ বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে।
রাহাত সাহেব চায়ের কাপ টেবিলে রাখতে রাখতে বললেনঃ তুমি ঠিক বলেছো। ওর টাকা আয়ের জন্য কিছু একটা করতে হবে। আর তা করতে তাকে আগ্রহী করার জন্য আমাদের বৌমাও দেখতে হবে।
আতিকা মুচকি হাসি দিয়ে বললেনঃ বৌমা আমার ঠিক করা আছে। রাহাত সাহেব জিজ্ঞেস করলেন কে? আতিকা বললেনঃ আমার বান্ধবীর মেয়ে নাঈমা। রাহাত সাহেব বললেনঃ তোমার পছন্দ আমার মনের মত হয়েছে। আজ তাহলে বৌমাকে দেখতে যাবো। আর আয়ানকে ওয়েভ ডেভলাপিং কোর্সে ভর্তি করে দিবো।
দুপুরের খাবার খাওয়া হয়ে গেলে, রাহাত সাহেব আয়ানকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন কোর্সে। আর বললেন মন দিয়ে কাজ শিখতে। অতঃপর তিনি বাসায় ফিরে স্ত্রীকে নিয়ে নাঈমাদের বাসায় চলে গেলেন। নাঈমার বাবা নেই। মা ব্যাংকে চাকরী করেন। অনেকদিনপর দু'বান্ধবী একত্রিত হয়ে গল্প শুরু করে দিলেন। গল্পের ফাঁকে আতিকা নাঈমার মাকে নাঈমাকে পুত্রবধু বানানোর প্রস্তাব দিলেন।
নাঈমার মা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলেন। তাঁর চুখে আনন্দের অশ্রু এসে গেছে। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। তবে তিনি বললেনঃ নাঈমা তো এখনো ইন্টার দেয়নি। আর আয়ানও কোন জব বা ব্যবসা শুরু করেনি।
আতিকা বললেনঃ আমিতো এখনই তাদেরকে বিয়ে দিয়ে সংসার শুরু করার কথা বলছিনা। এখন তাদের আকদ করে রাখবো। পরে আয়ানের জব হয়ে গেলে তাদেরকে একত্রিত করে দিবো। নাঈমার মা রাজি হলেন এই প্রস্তাবে।
অতঃপর আতিকা আর রাহাত সাহেব বাসায় ফিরে ছেলেকে বুঝিয়ে বললেন। আর বলে দিলেন ভালো একটা চাকরি শুরু না করা পর্যন্ত নাঈমাকে বাসায় আনা হবেনা।
একদিনপর আয়ান-নাঈমার আকদ হয়ে গেলো। আয়ান নাঈমাকে কথা দিলো সে ভালো করে পড়াশুনা করে একটি জব পেয়েই তাকে বাসায় নিয়ে যেতে আসবে। দু'জন চোখের জলে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেলো।
আয়ান এখন ওয়েব ডেভলাপিং শিখতে আরো মনোযোগি হয়েছে। ফোনে দু'জন দু'জনের খবর নিচ্ছে। কেউ আর অযথা সময় নষ্ট করছেন। একে অপরের খেয়াল নিচ্ছে। নাঈমাও পড়ায় মনোযোগ দিয়েছে। তাকেও যে ভালো রিজাল্ট করে শশুর-শাশুড়ির সামনে আরো সম্মানিত হতে হবে।
দু'বছরপর আয়ান বাসায় মিষ্টি নিয়ে আসে। তাঁর আনন্দ দেখে বাবা-মা দৌড়ে আসেন। বলেনঃ আয়ান কী হয়েছে? আয়ান বললোঃ আমার আমেরিকার একটি কোম্পানিতে ওয়েভ ডেভলপার হিসেবে চাকরী হয়েছে। রাহাত সাহেব বললেনঃ তাহলে তো আমাদের বৌমাকে নিয়ে আসতে হবে। এদিকে নাঈমার ইন্টার পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছে।
পরদিন রাহাত সাহেব প্রতিবেশিদের নিয়ে একটি বিশাল আয়োজন করে নাঈমাকে বৌমা হিসেবে ঘরে নিয়ে আসলেন। শুরু হলো আয়ান-নাঈমার দাম্পত্য জীবন। যে জীবনটি শুরু হয়েছে সঠিক সময়ে। রাহাত সাহেব আর আতিকার মত জ্ঞানী মা-বাবার কল্যানে।
ছোট্ট বৌমা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন