তরুণীর কান্না
তরুণীর কান্না
পর্ব ১
তখন চলছিল খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনকাল।চারিদিকে শুধু মারধর আর যুদ্ধ চলছিল।সকল খলিফাদের মনে প্রবেশ করেছিল রাজত্বের নেশা।কে কতটুকুর শাসন করতে পারে।কত লোক হবে তার প্রজা।তা নিয়ে যেন লেগে গিয়েছিল তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা।
এদিকে মুসলমান তার ওপর মুসলমান ভাইকে মারছে।কাটছে একে অপরের গলা।এদিকে কারই ভ্রূক্ষেপ ছিলনা।মুসলমানদের অবস্থা হয়ে গিয়েছিল ভয়াবহ।
তখন এইভাবে যুদ্ধ করে খলিফা মালিক ইবনে মারওয়ান তার শাসন ক্ষমতাকে বহুদুর বিস্তৃত করে ফেলেন।ধীরে ধীরে সমস্ত আরব তার শাসনাদীন হতে শুরু করে।
কিন্তু দিন দিন তার সৈন্য শক্তি কমতে ছিল।কারন তাদের মাঝে ছিল অলসতা বেশি।ছিলনা তাদের মধ্যে কোন কাজে তৎপরতা।তাই একদিন খলিফা মালিক তার উজিরকে বললেন।আমার এইদেশে কি? নেই এমন মানুষ। যে এই সৈন্যদেরকে তৎপর করে তুলবে।তাদের মধ্যে সুশৃংখলা এনে দিবে।কারন আমি জানি মুসলমানদের যতটি বিজয় হয়েছে।তা একমাত্র সু শৃংখলতার কারনে।
উজির কতক্ষন নিরব থাকল।পরে বলল আছে মহারাজ এমন একজন।আমি দৃষ্টি রেখেছি অনেক দিন থেকে ওই ছেলটির উপর।খলিফা বললেন যাও ওকে নিয়ে এসো।
উজির চলে গেল। কিছুক্ষন পর নিয়ে এলো এক ছেলেকে।তার চোখ দুটা দেখেই মনে হচ্ছে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন হবে।খলিফা ছেলটাকে কাছে ডাকলেন।আর পরিক্ষা স্বরুপ বললেন যাও সৈন্যদেরকে নিয়ে আসো।কিছুক্ষন পর আমরা সফরে বের হব।এদিকে উজিরকেও বলে দিলেন সৈন্যকে জামায়েত করতে।
যুবকটা চলে গেল সৈন্যদের তাবুতে।আর চিৎকার জুড়ে দিল সবদিকে।খলিফা বলেছেন সবাই প্রস্তুত হতে। খলিফা এখনি বের হতে চান সফরে।দেখা গেল কেউ তার কথা কানে নেয়নি।সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত আছে।কেউ গল্প করছে। কেউবা রুটি খাচ্ছে।
একজন এসে যুবককে টেনে নিয়ে যেতে লাগল তাবুতে।আর বলল বাপু চিৎকার করনা চলে আসো তাবুতে।কেউ এত জলদি বের হবেনা।খলিফা থাকুন অপেক্ষাতে।তা শুনেই যুবক একটা লৌহ দন্ড হাতে নিয়ে সবাইকে পেটাতে থাকে।এমনকি আগুন পর্যন্ত লাগিয়ে দেয় কয়েকটা তাবুতে।এর মধ্যে ছিল উজিরের তাবুটিও।
আর বলতে থাকে। খলিফা বলছেন প্রস্তুত হতে আর তোরা এখনো আড্ডাতে আছ বসে।সবাই সাথে সাথে রেডি হয়ে হাজির হয়ে যায় খলিফার দরবারে।খলিফা সৈন্যদের এত তড়িৎ প্রস্তুতি দেখে পুরাই অবাক।এসব কেমনে হল।কিভাবে আজ সৈন্যরা এত তৎপর হলো।
তখন উজির এগিয়ে এলো আর বলল সব ঘটনা।তখন সৈন্যরা দেখাতে লাগল দেহের অবস্থা।তখন খলিফা যুবককে ডেকে পাঠালেন আর বললেন ওরা যা বলছে তা কি সত্যি! যুবক হাঁ বলল।
তখন খলিফা বললেন এসব তুমি করলে কেন।তোমাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।তখন যুবক বলল মহারাজ আমি এসব করিনি।সব করেছেন আপনি।কারন আপনি বলেছেন এদেরকে জমায়েত করতে তড়িৎ গতীতে। আমি বললাম সবাইকে। কিন্তু কেহ শুনেনি আপনার নির্দেশ। তাই আমি এসব করলাম। তখনের আমার প্রতিটি কাজ যেন আপনিই করছেন।কারন আমি ছিলাম আপনার নির্দেশটি বাস্তবায়নে ব্যস্ত।
খলিফা যুবকের এই জ্ঞান সম্পন্ন জবাব শুনে খুশি হয়ে বলেন যুবক তোমার নাম কি?
তখন ছেলেটি বলল আমি হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। খলিফা তাকে বানিয়ে দেন গভর্নর। সেদিন থেকেই হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বেড়ে যায় মানুষের উপর নির্যাতন।তার হৃদয়ে ছিলনা কোন দয়া। ছিলনা কারো প্রতি একটুও মায়া।নিজের উদ্দেশ্যকে পুর্ণ করতে যা ইচ্ছা তা করতো।
এমন কি সে মক্কা ক্ববজা করতে পর্যন্ত হয়েছিল ব্যস্ত।দিয়েছিল মানুষকে কষ্ট।হত্যা করেছিল বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাযিঃ)কে।উনাকে হত্যা করে লটকিয়ে রেখেছিল একটি গাছে।মানুষজন যেতে পারছিলনা লাশটির কাছে।দিতে পারছিলনা দাফন। নিষ্টুর হাজ্জাজের কারনে।
একদিন আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) এর বৃদ্ধ মাতা হযরত আসমা (রাঃ) চলে যান পুত্রের লাশের কাছে। আর লাঠি দিয়ে টোকা দিয়ে বলেন। এ কোন অশ্বারোহি যে আজ ও নামতেছেনা মাটিতে।
এই নিষ্টুর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ছিলেন এক ভাই।যার নাম হলো কাসিম বিন ইউসুফ।তিনিও ছিলেন বীর সিপাহসালার।ছিলেন সবচেয়ে বড় কামান্ডার।
পর্ব ০২
একবার যুদ্ধে কিছুটা বিরতি হয়।তাই কাসিম বিন ইউসুফ চলে আসেন বাড়িতে।বাড়িতে প্রবেশ করতেই তার প্রিয়তমা গলাটা জড়িয়ে ধরেন।আর শুরু করেন কান্না।
কাসিম তাকে শান্তানা দিলেন।আর বললেন কেন তুমি কাঁদছো ওগো প্রিয়তমা।স্বামীর এমন আদর মাখা ডাক শুনে কিছুটা নিজেকে সামলে নিলেন।আর বলতে লাগলেন তার দেখা গত রাতের স্বপ্নের কথা।বলেন জানো! আমি কাল স্বপ্নে দেখেছি। আকাশ বড়ই অন্ধকার।সাথে আমার ঘরটিও।হঠাৎ দেখি একটা তারা উদয় হয়েছে।ধীরে ধীরে আসতে থাকে আমাদের ঘরের দিকে।যখন আসল তখন সারা ঘর আলোকিত হয়ে গেল।তার আলোক রশ্মি সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে যেতে লাগলো।কিন্তু হঠাৎ সেই আলোটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।পরে স্বামীকে জানালেন তার সন্তান সম্ভাব্যের কথা।
স্বামীতো আনন্দে আত্মহারা।তার প্রিয়তমা এখন সন্তানের মা।তিনি শান্তনা দিতে লাগলেন। আর বললেন ; এসব কিছুই না। তুমি চিন্তা করনা।কিন্তু স্ত্রীতো নাছুড় বান্দি।তাকে জানতেই হবে তার এই স্বপ্নের তাবীর।জানতে হবে তার ব্যখ্যা।তার এই আগত সন্তানেরতো কিছু হবেনা।
স্বামী স্ত্রীকে খুশি করতে বাধ্য হয়ে চলে যান আবু ইসহাক সাহেবের কাছে।উনি স্বপ্নের তাবীর বলতে পারেন।ছিলেন অনেক বড় আলিম।কাসিম যখন স্বপ্নের কথা বলে শেষ করলেন।তখন আবু ইসহাক ভালো দেখেছেন বলে থেমে গেলেন।তিনি যেন আর বলতে চাননা কোন কিছু।কাসিম তাকে জোর করতে থাকেন। আর বলতে থাকেন বলুন হে আবু ইসহাক ! কী তাবীর রয়েছে এই স্বপ্নের। আপনি আমায় বলেন। যতই খারাপ হোক না কেন আমি শুনতে চাই। আমি তার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
তখন আবু ইসহাক বলতে লাগলেন...
(চলবে)
(৩য় পর্ব)
তোমাদের ঘরে একটা পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করবে। যে হবে তারকার মত।তার সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে তড়িৎ গতীতে। তবে এই তারকাটা খুব জলদি ঝরে যাবে।তবে তার সুনাম চির অমর হয়ে থাকবে। প্রতিটি মানব হৃদয়ে।কিন্তু.........
এই বলে ইবনে ইসহাক থমকে যান।আর কিছু বললেন না।যেন তিনি কিছু লোকাচ্ছেন।কাসিম জোর করে ধরেন লোকানো কথাটা বলতে।আর জোর দিয়ে বলেন; হে ইবনে ইসহাক আপনি বলেন কিন্তুটা কী ? আমি ভয় পাবোনা।কোন খারাপ খবর হলেও বিচলিত হবোনা।এরজন্য আমি সম্পুর্ণ প্রস্তুত।
তখন ইবনে ইসহাক বলেন;কিন্তু ছেলেটা তার মায়ের হাতে লালিত পালিত হবে।বাবার হাতে নয়।তা শুনে কাসিম বিন ইউসুফ বললেন; হে ইবনে ইসহাক! কেন ছেলেটা বাবার কাছে লালিত পালিত হবেনা।ইবনে ইসহাক বললেন প্রিয় বৎস! এটাতো আমি জানিনা।
কাসিম চলে যান স্ত্রীর কাছে।আর বললেন তাকে ইবনে ইসহাকের বলে দেওয়া স্বপ্নের তাবীরের কথা। স্বামী স্ত্রী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এই জন্য যে তাদের পুত্রটি বেশ দিন বাঁচবেনা।এইভাবে চলে যায় অনেক দিন।
হঠাৎ আবারও যুদ্ধের দামামা বেঝে উঠে।চলে যান বীর কাসিম রনাঙ্গনে।উভয়দিক থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বীর কাসিম বিরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রবেশ করে নেন শত্রুদের মহড়ার মধ্যে।তখন শত্রুরা তাকে প্রচন্ড আঘাত করে শাহীদ করে দেয়।
মুহুর্তের মধ্যে এই খবরটা চলে আসে কাসিমের স্ত্রীর কাছে।তা শুনেই তিনি স্বামীর শোকে ভেঙ্গে পড়েন।ক'দিন পর তার স্বপ্নে দেখা অন্ধকার ঘরটি আলোকিত করে জন্ম হয় এক ফুটফুটে শিশুর।সে দেখতে মনে হয় সেই তারকার মতই।মা সন্তানটিকে দেখেই বুকে জড়িয়ে নেন।তিনি তো তাকে তার বয়স বেশ হবেনা জেনেই জন্ম দিয়েছেন।তাই সব কষ্টকে মাটি চাপা দিয়ে। সন্তানকে বাবার মত বীর পুরুষ করে তোলতে। সেইভাবে লালন পালন করতে শুরু করে দেন।
তখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আসেন।আর কোলে নেন তারকার মত শিশুটাকে। আর তার নাম রাখেন মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম। আর বলতে থাকেন; বোন আমার তুমি নিজেকে একা ভেবনা। এটা মনে করোনা যে এই শিশুটির লালান পালন কেমন করে হবে।
সে আমার ভাতিজা। আমার জানের টোকরা।তাই সে হবে তার বাবার মত।হবে সে একজন সিংহ পুরুষ। যার নাম এই আরব কেন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।সমস্ত বিশ্বের কাছে মুহাম্মদ বিন কাসিম নামটা অমর হয়ে থাকবে।
এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা আমি করব।তুমি শুধু তাকে দেখে রেখো।তবে কখনো রক্ত বের হলে বুকে আগলে নিয়োনা।তাকে দেখতে দিয়ো ।বুঝতে দিয়ো সে কার রক্ত দেহে ধারন করেছে।সে হল বীর কাসিমের সন্তান হাজ্জাজের ভাতিজা জাতির ভবিষ্যত। মুসলিম উম্মাহের এক আদর্শবান সেনা নায়ক।
এই বলে হাজ্জাজ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামাদি দিয়ে এবং কিছু বড় হলে মুহাম্মদকে শিক্ষা দেওইয়ার জন্য একজন ভাল শিক্ষক রেখে চলে যান তার শহরে।এদিকে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম বড় হতে থাকেন।দিন দিন হতে থাকেন বাবার মত।তার খেলার বস্তু ছিল প্লাষ্টিকের অস্ত্র। ছিল নানান রকম ঘোড়া। যাতে তিনি শিশুকাল থেকে হয়ে যান যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত।দিন কাটতে থাকে।
এদিকে দেশের খলীফা আব্দুল মালিক ইবনে মানসুর মারা যান।তার পদে বসেন বড় পুত্র ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক।তার প্রধান বুদ্ধিমান সাহসিক গভর্নরদের মধ্যে ছিলেন একমাত্র হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।তাই প্রতিটা কাজে তিনি হাজ্জাজের পরামর্শ নিতেন।
হাজ্জাজ দেশের প্রতি খেয়াল রাখার সাথে সাথে ভাতিজার খবর নিতেন।কিছুদিন পর হাজ্জাজ ভাতিজার জন্য লাল রঙ্গের যুদ্ধবাজ তেজস্বী একটা ঘোড়া উপহার পাঠান।
এভাবে চলে যায় প্রায় ষোলটি বছর।একবার হাজ্জাজ গ্রামে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা করলেন।তাই চলে গেলেন গ্রামে।তার আসার খবর শুনে মুহাম্মদের মা ঘর হতে বেরিয়ে আসেন। তাকে দেখে হাজ্জাজ বললেন; বোন তুমি কেন বের হলে ।আমরা তো আসছি তোমার ঘরে।
তবে মুহাম্মদ কোথায়। তাকে তো দেখছিনা কোথাও।তখন মুহাম্মদের মা বললেন ও কোথায় যে সকাল বেলা ঘোড়া নিয়ে গেছে এখনো আসেনি।আসেন ঘরে ও চলে আসবে একটু পর।হাজ্জাজ ফিরলেন ঘরের দিকে ওমনি কে যেন বীর সেনাদের মত ঘোড়া হাকিয়ে নিয়ে আসছে ।দেখতে না দেখতে লোকটা হাজ্জাজের নাকের সামনে দিয়েই চলে গেল।হাজ্জাজ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন।আর মনে মনে বললেন কত বড় স্পর্দা আমার সামনে দিয়ে চলে গেল।একটি বার নামলো না ।ওকে এর শাস্তি পেতেই হবে।হয়ত গ্রামের লোকেরা আমার কথা ভুলে গেছে।
তখনি ঘোড়াটি থেমে গেল।এবং আবার ও হাজ্জাজের দিকে ফিরে আসতে লাগল।
(৪র্থ পর্ব)
ঘোড়াটি এসে থামলো হাজ্জাজের সামনে।দেখা গেল তা থেকে নামছে এক সুদর্শন যুবক।দেখতেই মনে হচ্ছে এ কোন সাধারন মানুষ নয় । হবে কোন বীর বাহাদুর ব্যক্তি।তাই হাজ্জাজ জিজ্ঞাস করলেন মুহাম্মদের মা কে সে কে? তখন মুহাম্মদের মা বললেন।এ তো আপনারই ছেলে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম।তখনি হাজ্জাজ ছেলেটাকে বুকের মধ্যে পরম ভালবাসায় আগলে নেন।আর বলেন হে বীর বাহাদুর ভাতিজা আমার তুমি কেন প্রথমেই আমায় পরিচয় দিলেনা।আমি তোমাকে মারার জন্য কত কিছুইনা ভেবেছি।তখন মুহাম্মদ বিন কাসিম বললেন চাচা আমি আপনাকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছি।তাই চাইলাম আপনাকে দেখাতে আমার প্রিয় ঘোড়াটির দৌড়।তখন মুহাম্মদ বিন কাসিমের মা বললেনঃআর কত দাড়িয়ে গল্প হবে।চলে আসেন ঘরে।চাচা ভাতিজা একে অপরকে ধরে প্রবেশ করলেন ঘরে।
এদিকে হাজ্জাজের একমাত্র মেয়ে যুবায়দা শুয়ে আছে বিছানাতে।রাজকীয় খাটে।তবে তাকে দেখতে মনে হচ্ছে যেন সে নেই আনন্দে ।সে যেন বসে আছে কারো অপেক্ষাতে।
হঠাৎ জানালায় কে যেন নক করলো।যুবায়দা সাথে সাথে উঠে গেল বিছানা থেকে।সে তো এতক্ষন থেকে অপেক্ষা করছে ওই নকটি শুনতে।তাই সে সাথে সাথে জানালাটা খোলে দেয়।বাহিরে খোলা আকাশে জোৎস্না আলো ছড়িয়ে পড়ছে।জোৎস্নার আলো সুন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বাগানের প্রতিটি ফুলে।
তখনি দুটি হাত কে যেন বাড়িয়ে দিল তার দিকে।যুবায়দা ও নেমে যায় জানালা দিয়ে ওই দুটি বাহু ধরে।দেখে তার প্রিয় ভালবাসার মানুষ সালমান বিন আব্দুল মালিক দাড়িয়ে আছে।যে হল বর্তমান খলীফা ওয়ালিদ বিন মালিকের ছোঁট ভাই।দুজনই হারিয়ে গেল ফুল গুচ্ছের মাঝে।
তখন যুবায়দা আপন মাথা সালমানের কাঁদে রেখে হেলান দিয়ে আছে।সালমান ও যুবায়দাকে জড়িয়ে রয়েছে ।তখন সালমান বলল দেখনা যুবায়দা আজকের চাঁদটা কত সুন্দর হয়ে আছে।যেন সে আমাদের বাক্যলাপটা শুনার জন্যই সে আমাদের দিকে উঁকি দিচ্ছে।প্রতিটি ফুল যেন আমাদের ভালবাসাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।তখন যুবায়দা বলল হুম ঠিক তাই।তবে জানো আমার নাকে এই চাঁদ থেকে মুসলমানের রক্তের গন্ধ লাগছে।কানে ভেসে আসছে মুসলমান ভাই বোনদের চিৎকার।আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের মুসলামানদের ভবিষ্যতে যেভাবে করবে হাহাকার।তুমিতো জানো আজ মুসলমান মুসলমানে ভুল বুঝে ঝগড়া করছে। এদিকে ইয়াহুদি খৃষ্টান কাফিররা মুসলমানদেরকে নির্ধিদায় হত্যা নির্যাতন করেই চলছে।
তখন সালমান বলল আমিতো তা দেখতে পাচ্ছি।এতে আমাদের কি? আমিতো ভাইয়ের মৃত্যুর পর হয়ে যাবো রাজা। তুমি হবে আমার রাণী। আমরা দুজন মিলেই করব এদেশে রাজ।মুসলিম হিন্দু যা ইচ্ছা করুক তাতে আমাদের কি যায় আসে ।
তা শুনেই যুবায়দার উজ্জল লাবন্যময় চেহারায় অন্ধকার ছেয়ে গেল।তার মিষ্টি হাসি যেন কোথায় হারিয়ে গেল।সালমান তা আচ করতে পারল।তাই সে বলল।ওগো যুবায়দা তুমি কেন এমন মুধুময় রাতে এমন কথা বাড়িয়ে আমাদের আনন্দকে নষ্ট করছো ।আসো দুজন মিলে আজকের রাতকে স্বরনীয় করে রাখি।দেখিয়ে দেই এই চাঁদকে আমরা দুজন দুজনাকে কত ভালবাসি।
তখনি যুবায়দা দৌড় দিতে দিতে বলে;আমি চাই এমন স্বামী যে হবে বাহাদুর।হবে ইসলামের সৈনিক।করবে তার জীবনকে ইসলামের তরে বিলীন।আমি চাইনা রাজা বাদশাহ। আমি চাই যে করবে সারা বিশ্বে ইসলামের পতাকা উড্ডিন।
তখন সালমান যুবায়দার পিছু পিছু দৌড় দিল আর বললঃ ওগো! এমন রাতকে নষ্ট করনা।আসো আমার কাছে।দেখতে দাও তোমার চাঁদকে হার মানানো মুখটিকে। যুবায়দা দাড়িয়ে যায়। আর বলেঃ ওগো অনেক রাত হয়ে গেছে।ঘরে শুয়ে আছেন মা।যদি জানতে পারেন আমি এখানে।তাহলে বলে দিবেন বাবাকে।আর তুমিতো বাবাকে চিনো।উনি শেষ করে দিবেন আমাকে।আজ না হয় থাক।আরেকদিন দুজন মিলে ডুব দিব ভালবাসার রাজ্যে।
যুবায়দা চলে গেল ঘরে।সুলায়মান ধীরে ধীরে হাটা ধরলো বাগানের দিকে।পরদিন সকালে যুবায়দা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। বসে আছে বাবা হাজ্জাজ আসার অপেক্ষায়। আজ চার পাঁচ দিন হল বাবাকে দেখছেনা।মনে নানান প্রশ্ন বাসা বাঁধে।
হঠাৎ দেখে কে যেন বাড়ির গেইটটি খোললো ।প্রবেশ করলো একটা শাহি ঘোড়ার গাড়ী।মনে হচ্ছে এটা তার বাবার গাড়ী হবে।কিন্তু উনার পাশে যে আরেক ব্যক্তি যে বসা আছে সে কে।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে চলে আসে গাড়ীর সামনে। দেখে তার বাবা নামছেন।সাথে সাথে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। বাবার কাধ দিয়ে দেখতে থাকে একটা সুদর্শন যুবক গাড়ী থেকে নামছে।চলে আসছে তাদের দিকে।বয়সে তার মতই হবে।
যুবায়দা পিছু সরতে লাগলো।হাজ্জাজ তা বুঝতে পেরে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন বললেনঃ যুবায়দা সে তোমার চাচাতো ভাই মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম।সে তোমার চাচার একমাত্র ছেলে।সে এখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে এসেছে।ক’দিন আমাদের সাথে থাকবে।পরে চলে যাবে।
যুবায়দা এবার একটু চোখ তুলে থাকালো।প্রথম দেখাতেই তার মনে হলো এইতো আমার স্বপ্নের সেই বীর বাহাদুর পুরুষ।তখন হাজ্জাজ বললেনঃ যাও যুবায়দা মুহাম্মদকে তার কামরাটা দেখিয়ে দাও।যুবায়দা মুহাম্মদকে মেহমান খানায় নিতে নিতে তার সম্পর্কে সব জেনে নিল।
একদিন মুহাম্মদ ফুল বাগানে পায়চারি করছেন।দেখছেন সুন্দর সুন্দর ফুলদেরকে।হঠাৎ তার চোখে পড়লো এক গুচ্ছ ফুলের জুপের দিকে।কি সুন্দর লাগছে জায়গাটাকে। তাই তিনি সেথায় বসে গেলেন।
তখন হঠাৎ তার পাশে কারো বসে থাকা অনুভব করলেন।দেখলেন যুবায়দা এসেছে।তিনি দাড়িয়ে গেলেন বললেনঃ যুবায়দা তুমি এখানে কেন? তখন যুবায়দা বললোঃ না ভাইয়া একটু হাটছিলাম।দেখলাম আপনি একা বসা তাই আসলাম।তাহলে যাও এখন ঘরে্ সন্ধ্যা নেমে আসছে।বললেন মুহাম্মদ।
তখন যুবায়দা বললোঃ ভাইয়া আপনি কি আমার আসাতে বিরক্ত হলেন?আমাকে কি খারাপ লাগে আপনার কাছে? তখন মুহাম্মদ বললেনঃ না তোমাকে খারাপ লাগবে কেন।অনেক ভালো লাগে। তবে কেউ দেখে ফেললে কি না ভাববে।
আচ্ছা মুহাম্মদ ভাইয়া আপনার কামান্ডার হয়ে কি কোন স্বপ্ন আছে?মুহাম্মদ বললেনঃ আমি চাই ইসলামের তরে নিজেকে কোরবান করতে।মুসলমানদের স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে আনতে।ইয়াহুদি খৃষ্টানদের হাত থেকে তাদেরকে বাঁচাতে।যুবায়দা মুহাম্মদের কথা মন দিয়ে শুনছে। দেখছে তার দেহে ফুটে উঠা জযবাকে।সে তাকে অনেক ভালবেসে ফেলে।আর কত সে খোঁজবে।আল্লাহ যে পাঠিয়ে দিয়েছেন তার স্বপ্নের স্বামীকে।সে যে এখন বাস্তবেই তার সামনে।সে হারিয়ে যায় ভাবনার যগতে।
তখনি মুহাম্মদ বলেন যুবায়দা আমি একা একা চিল্লাচ্ছি আর তুমি কোথায় হারিয় গেলে।চলো এবার ঘরে যাই।এই বলে তারা হাটা শুরু করলেন। যুবায়দা মুহাম্মদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাটছে।মুহাম্মদ বললেনঃ যুবায়দা তুমি আমার পিছু হাটো।লোকে দেখলে কী বলবে।যুবায়দা পিছু পিছু হাটলো। অতঃপর তারা চলে গেলো নিজ কক্ষে।
(ষষ্ট পর্ব)
এভাবে চলে যায় কিছুদিন।একবার খবর আসে খলীফা ওয়ালিদ পয়গাম পাঠিয়েছেন।বলছেন খলীফার দরবারে যাওয়ার জন্য।সেখানে নাকি খলিফা সামরিক অনুষ্টানের আয়োজন করেছেন।এই অনুষ্টান প্রতি বৎসর হয়ে থাকে।লাড়াই করে বীর বাহাদুররা তাতে।আর ঘোষিত করা হয় এই বছরের সেরা যুদ্ধবাজকে।
তাই হাজ্জাজ প্রস্তুত হয়ে যান খলিফার কাছে যেতে।সাথে নিয়ে নেন মুহাম্মদকে।আর বলেন এবার মুহাম্মদ এই সামরিক মহড়ায় লড়বে।প্রকাশ করে দিবে দেশের লোকের সামনে।তার বাহাদুরিকে।
বললেন মুহাম্মদ তুমিও প্রস্তুত হয়ে যাও। এদিকে যুবায়দা ও বাবাকে এসে বলে আমি যাব সাথে।হাজ্জাজ একটি মাত্র মেয়ের কথা ফেলে দিতে পারেননা।তাই তাকেও সাথে নিয়ে নিলেন। যুবায়দা আনন্দে আত্মহারা।সে নিজ চোখে দেখবে তার প্রিয়তমের বাহাদুরিতা।
তিন জনই চললেন খলিফার দরবারে।খলিফা তাদের দেখে অভ্যর্থনা জানালেন। আর দিলেন উন্নত বসার স্থান।হাজ্জাজ মুহাম্মদকে খলিফার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।বললেন এ আমার ভাতিজা মুহাম্মদ।বীর কাসিম বিন ইউসুফের ছেলে সে।কাসিমের কথা শুনতেই খলিফার দুটি চোখ অশ্রুশিক্ত হয়ে যায়। মেতে উঠেন কাসিমের প্রশংসায়।
খলিফা বললেন প্রিয় হাজ্জাজ আপনি কি চান আপনার ভাতিজাও এই সামরিক অনুষ্টানে শরীক হোক।হাজ্জাজ বললেন জ্বী হাঁ।এইজন্যইতো তাকে সাথে নিয়ে এসেছি।তাকে দেখিয়ে দিতে হবে। লোক সমাজের সামনে তার বিরত্ব।উচ্ছ করতে হবে বীর ইউসুফিয় খান্দানের সম্মানকে।খলিফা তার জন্য দুআ করলেন।আর বাদিদেরকে বললেন মুহাম্মদের রুম দেখিয়ে দিতে।
আর যুবায়দার থাকার ব্যবস্থা করলেন রাণীদের সাথে।
সালমান যুবায়দা আসার কথা শুনে আনন্দে মাতোয়ারা।মনে মনে বলছে এখন আমরা দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে যাব। দিবেনা কেউ বাঁধা।তখন সালমান একটা বাদিকে ডাকলো।বলল যুবায়দাকে গিয়ে বলতে যে রাজপুত্র সালমান আপনাকে স্বরন করছেন।বাদি চলে গেল।কিছুক্ষন পর এসে বলল শাহজাদা উনি আসবেননা বলেছেন।সালমান উঠে দাড়ালো।ভাবলো এটা কেমনে হতে পারে।
তাই সে বলল বাদি তুমি কি সত্যিই যুবায়দাকে বলেছ আমার কথা।বাদি বলল হাঁ।তখন সে বলল তার কাছে কি কেউ ছিল।বাঁদি বলল হাঁ ছিল এক যুবক।শুনেছি ও নাকি হাজ্জাজের ভাতিজা।
সালমান বলল আবার যাও বলো আমার কথা।বাদি গেলো কিন্তু একি উত্তর আসলো।তখন সালমান রেগে গিয়ে বলল ছেলেটার সাথে ও কি করছে।বাদি বলল ওরা গল্প তামাশায় মত্ত আছে।ওরা একে অপরের পাশে বসে গল্প করছে।
পরদিন ভোর সকালে যুবায়দা ফুল বাগানে গেল।দেখল কত রকমের ফুল যে ফুটছে।সবাই যেন যুবায়দার আগমনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।যুবায়দা হাটতে লাগল তার মাঝে। পৌছে গেল ফুল বাগানের একেবারেই ভিতরে।তখনি কে যেন তার পিছুটান দিল।দেখল সালমান দাড়িয়ে আছে।বলল তুমি এখানে কেন আসলে।সালমান বলল আমিতো সেখানেই যাব যেখানে আমার ভালবাসা যাবে।
যুবায়দা বলল আমায় তুমি ভুলে যাও।আমি পেয়ে গেছি আমার স্বপ্নের মানুষটার খোঁজ।তখন সালমান বলল কি এমন তার মাঝে রয়েছে।যার কারনে তুমি এই রাজপুত্রকে ভুলে গেলে।তখন যুবায়দা বলল তুমি উনাকে সাধারন মানুষ বলনা। উনি আমার চাচাতো ভাই।বীর কাসিমের ছেলে।আমি দেখেছি এক বীর সৈনিকতা তার মাঝে।হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানদের থেকে মুসলমান জাতিকে সে রক্ষা করবে।
সালমান বলল তুমি এসব কি বলছো।দুদিন পর আমি হব দেশের রাজা।ওকেতো কামান্ডার থেকে নামিয়ে দেব বানিয়ে দিব প্রজা।যুবায়দা বলল তবু আমি উনাকে ভালবাসব।তখন সালমান বলল আমি ওকে ভিখারি বানিয়ে দিব।তখন যুবায়দা বলল তবু ও উনাকে ভালবেসে যাবো।কখনো কারো কাছে হাত পাততে দিবনা উনাকে।
এই বলে যুবায়দা ফিরে যেতে লাগলো। তখন সালমান প্রেমের ভিক্ষা চাইল।বলল আমি ভিক্ষা চাচ্ছি যুবায়দা। তুমি আমার হয়ে যাও। আমি তোমাকে রাণী প্রধান বানাবো।তখন যুবায়দা বলল এখনো তোমার মুখে রাজা রাণীর কথা ভেসে আসছে।বের হয়নি মুসলিম উম্মাহ নিয়ে একটি কথা। বের হয়েছে তোমার মুখ থেকে অহংকারি শব্দ বের হচ্ছে।আমি মুহাম্মদকে ভালবাসি। উনাকেই বিয়ে করবো।
সালমান তখন যুবায়দার হাতটি ধরতে চায়। তখন পিছন থেকে একটি বড় কন্ঠ ভেসে আসে।দুজন চোখ তু্লে দেখে হাজ্জাজ।
(সপ্তম পর্ব)
হাজ্জাজ বলতে লাগলেন ভালই হল।আমি এদিকে আসায়।দেখে নিলাম হে সালমান তোমার চরিত্র।শুনে নিলাম আমার মেয়ের মনের কথা।যা হয়ত কখন ও আমার জানা হতনা।
হে সালমান সে আমার মেয়ে।আমিই ঠিক করব সে কাকে বিয়ে করবে।এতে কারো অধিকার নেই।চলবেনা আমার মেয়ের কোন কথা ও।যুবায়দা চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।হাজ্জাজ আবারও বলা শুরু করলেন।বললেন তোমার মত অহংকারি কাপুরুশের হাতে আমার মেয়েকে দিবনা।আমি বিয়ে দিব তাকে এমন একজনের কাছে যে হবে বীর পুরুষ।আর সে তো হল আমার একমাত্র ভাতিজা মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম।
এই বলে হাজ্জাজ যুবায়দাকে নিয়ে চলে যেতে লাগলেন।সালমান দাঁত ঠোঁট কামড়াতে লাগল।যেন সে মুহাম্মদকে খেয়ে ফেলবে।রাগে সে যেন একেবারেই ফেটে যাচ্ছে।হাত দুটু কচলাতে কচলাতে চলে গেল আপন ঘরে।
পরদিন সামরিক অনুষ্টান শুরু হল।বানানো হল বড় একটা ষ্টেইজ।যার প্রথম ভাগে রয়েছেন খলিফা ওয়ালিদ। ডান পাশে হাজ্জাজ।বাম পাশে যুবায়দা। আর পিছনে রাণীগন।মঞ্চে দেখা যাচ্ছিলনা সালমানকে।সাথে নেই মুহাম্মদ ও।
লড়াই শুরু হয়ে গেল।চারিদিকে শুধুই বালু উড়ছে।কখন ও হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিযগিরা তার মাঝে।একে অপরকে আঘাতের পর আঘাত করছে।কেহবা প্রচন্ড আঘাতের কারনে লুঠিয়ে পড়ছে।সেচ্ছা সেবক দল তুলে নিচ্ছে।চারপাশে লোকজন শুধু হৈ হোল্লুড় করছে।
হঠাৎ দেখা গেল প্রতিযোগিরা একপাশ হয়ে যাচ্ছে।ধোলা বালু উড়া কমে যেতে লাগলো।দেখা গেল দুইটা ঘোড়া দাড়িয়ে আছে মাঠে। দুজনের মুখে স্বর্ণের মুকুট লাগানো রয়েছে।হাতে তরবারী।রয়েছে বর্শাও। কিন্তু তার মুখে লাগানো রয়েছে চামড়া।বুঝাই যাচ্ছে এরা কোন সাধারন মানুষ নয়।এরা হবে কোন রাজা বাদশাহ।
ধোলা কমে গেল। দেখা গেল এরাতো বীর মুহাম্মদ আর রাজপুত্র সালমান।মানুষের চিৎকার থেমে গেল।শুরু হয়ে গেল লড়াই।তারবারীর ঝনঝনি শব্দে আকাশ বাতাস মেতে উঠল।বেলা যতই গড়ালো জয়ের পাল্লাটা মুহাম্মদের দিকেই হেলতে লাগলো।
সালমান পাগলের মত হামলা করছে।মুহাম্মদ শুধু কৌশলে তা ফিরিয়ে দিচ্ছেন।হঠাৎ সালমানের তরবারী পড়ে গেল।তখন সে সাথে সাথে ঘোড়া থেকে নেমে গেল।নেমে গেলেন মুহাম্মদ ও।শুরু করলেন তীব্র হামলা।একসম সালমান মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।ধরে নিলেন মুহাম্মদ তার গলায় তরবারী।গলাটি যখন আলাদা করতে যাবেন। ঠিক তখনি হাজ্জাজ বললেন মুহাম্মদ থেমে যাও।
মুহাম্মদ ছেড়ে দিলেন।আর বললেন আর কখন ও যদি বসরাবাসি সম্পর্কে কোন খারাপ কথা শুনি।সেইদিন হবে তোর শেষ দিন।কারন লাড়াই প্রারাম্ভে সালমান বসরাবাসিকে নিয়ে কটাক্ষ করছিল। বলছিল নানান কথা।আর মুহাম্মদ হলেন সেখানের বাসিন্দা।তিনি তা সহ্য করতে পারলেনা।নেমে পড়লেন নিজ মাতৃভুমির সম্মান রক্ষায়। তাই তার ইচ্ছা ছিল সালমাকে শেষ করে দিতে।কিন্তু চাচা হাজ্জাজ তাকে থামিয়ে দিলেন।
সালমান ছাড়া পেয়ে অগ্নিশর্মা চোখ দিয়ে মুহাম্মদকে দেখে।বলতে থাকে; তোকে আমি দেখে নিব।একদিন তোকে আমিই শেষ করবো।মুহাম্মদ ওর কোন কথায় কান না দিয়ে বিজয়ি বেশে চলে যান।পুরুষ্কার আনতে।তখন খলিফা ওয়ালিদ তার প্রশংসা করলেন।আর বানিয়ে দিলেন তাকে কামান্ডার প্রধান। যে পদটি চাচা হাজ্জাজের চেয়েও উচ্চ।হাজ্জের গর্বের কোন যে শেষ নেই।ভাতিজা কে জড়িয়ে ধরলেন।আর তার হাতে তুলে দিলেন আপন কন্যা যুবায়দাকে।দিয়ে দিলেন তাদের বিবাহ।চলে গেলেন মুহাম্মদ তার কাজে।
৮ম পর্ব
এদিকে খলিফা বিদ্রোহি মুসলমানরা হাজ্জাজের ভয়ে। কেহবা এই খলিফাকে মানতে না পেরে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে।কেহবা আবার ভিন দেশে গিয়ে বসতিি করছে।তেমনি বেলাল নামের এক যুবক ও তার চার সাথি চলে যান সিন্ধু নামক একটি দেশে।যেটা বর্তমানে ভারত।সেখানে তারা একটা পহাড় চুড়ায় দাড়িয়ে আছে।
কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছেনা।নিচে নামলেই কেহ যদি আরব গোয়েন্দা মনে করে হত্যা করে নেয়।তাই দিন রাত বড় কষ্টে তথায় তারা অবস্থান করছে।তখন দেখা গেল হঠাৎ কারা যেন আসছে তাদের দিকে।তারা তরবারী বের করে লুকিয়ে থাকে।
কিছুক্ষন পর দেখলো একটা সুন্দরী মেয়ে ধোলের মধ্যখান থেকে বের হল।সে একটা হরিণের পিছু ছুটছে।সাথে দেখা গেল প্রহরীরা রয়েছে তারাও ঘোড়া নিয়ে দৌড়াচ্ছে।দেখেই বুঝা গেল মেয়েটা রাজ পরিবারের কেউ হবে।
বেলাল তার ঘোড়াটি কাছে এনে উপরে চড়ে বসলো।আর দৌড়াতে লাগলো হরিণের পিছু। মেয়েটা অনেক তীর মারছে তবু পড়ছেনা হরিণের উপর।কখন ও মেয়েটা পড়ার উপক্রম হচ্ছে। তবুও ছাড়ছেনা পিছু।বেলাল তীব্র গতীতে হরিনের কাছে গেল। আর মারল একটা তীর। সাথে সাথে হরিনটা লুঠিয়ে পড়লো।
মেয়েটা এসব দেখে রেগে গেল।প্রহরীরা তাকে ঘেরাও করল।বলল কত বড় স্পর্দা তুমি রাণীর শিকারকে তুমি শিকার করলে।তোমার গর্দান আজ কাটা হবে।এই বলে তাকে ধরে ফেলল।প্রহরিরা তাকে রানীর কাছে নিয়ে আসল। আর বলল রানী হুকুম দেন। এখনই ওর গর্দান কেটে নেব।তখন বেলাল রানীর দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসছে।রানী বলল ওকে ছেড়ে দাও। আমার কাছে আসতে বলো।
বেলাল কাছে গেল।রানী বললঃ আমি কে তুমি কি চিনো।বেলাল বলল হুম চিনি তুমি হলে রানী।তবে কার এটা জানিনা।তখন এক প্রহরি বলল উনি রাজা দাহিরের একমাত্র রানী।তখন রানী বলল আমার নাম মায়া।সবাই মায়া রানী বলে ডাকে।আমি যা করি তাতে কেউ বাঁধা দিলে ওর সর্বনাশ করি।তবে কেন জানি তোমার সাথে কথা বলতে মন চাইল।তোমার এত সুক্ষ ভাবে তীর চালানো সাহসিকতা আমায় মুগ্ধ করল।
তুমি কি চাও এই হরিনটি তুমি নিবে ।তখন বেলাল মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে রাণী।আমি এটাতো তোমার জন্যই শিকার করেছি।আমি দূর থেকে দেখেছি তুমি পারছনা।পড়ে যাচ্ছ অনেক সময়। তাই আমি এটাকে শিকার করলাম তোমার জন্য।যদি এটা আমার জন্য শিকার করতাম তাহলে এটাকে জবাই করতাম।এভাবে মরতে দিতামনা।কারন আমরা মুসলমান এসব মরা জিনিস খাইনা।
রানী এগিয়ে এলো।বলল তুমি কে? লাগছে আরব লোকের মত।তুমি আরব গোয়েন্দা নাকি।তখন বেলাল বলল হাঁ আমি মুসলমান। তবে কোন গোয়েন্দা নয়।চাইলে তুমি পরিক্ষা করে দেখতে পারো। আমি হলাম আমাদের দেশের সরকার বিরোদি।তাই খলিফার ভয়ে আমরা পাঁচ বন্ধু এদেশে এসেছি।তবে এদেশে নেই আমাদের আশ্রয় তাই বনে বনে ঘোরছি।রানী প্রহরিদেরকে ডাকলো। বলল হরিনটি ঘোড়ায় তুলো। আর দুরে গিয়ে দাড়াও আমি আসছি ওর সাথে কথা বলে।প্রহরিরা চলে গেল।
এবার রাণী বেলালকে অভয় দিয়ে বলল।তুমি ভয় করনা আমিই তোমার ব্যবস্থা করবো।আমি জানি তোমাদের বিদ্রোহের খবর।তোমার মত আরো অনেক আছে আমাদের রাজ্যে।যাদেরকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি।তুমিও পাবে তবে তোমারটা অনেক ভাল হবে।কারন আমি জানি তুমি কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে হবে।
তোমার সুন্দর্য্য বাহাদুরি আমায় মুগ্ধ করেছে।তোমার জন্য কিছু করতে মনটা আমায় পাগল করে দিচ্ছে।তুমি কাল অমুক জায়গায় এসো। আমি একটি ব্যবস্থা করে আসব।এবার তুমি আমায় আলিঙ্গন করো। আমায় জড়িয়ে ধরো।বেলাল বাধ্য হয়ে তা করল।মায়ারানী বেলালের হাতটা কাছে এনে চুমু দিল।পরে হারিয়ে গেল আবারও ধোলি কনার মাঝে।
বেলাল অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইল।এই এক মুহুর্তের মাঝে কি হলো।সব স্বপ্নের মত।বেলাল চলে গেল বন্ধুদের কাছে। সব খোলে বলল তাদের কাছে।তারা তাকে বাঁধা দিল ওখানে না যেতে।বেলাল নাছুড় বান্দা সে যাবেই যাবে । এছাড়া তাদের বাচার কোন পথ আর নেই যে।বাধ্য হয়ে সবাই বলল আমরা ও তোর সাথে যাব।বাচলে একসাথে যাব। মরলে একসাথে মরবো।
এইদিন সবাই ঘুমিয়ে গেল।পরদিন সকাল হল।পাখিরা ডাকছে চতুর্দিকে।তারা ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে চলে গেল মায়ারানীর বলা জায়গায়।
(৯ম পর্ব)
তারা সেই জায়গায় গিয়ে পৌছল। কিন্তু এখানে তো বসার কোন জায়গা নেই। চারিদিকে মরুভুমি।জন শুণ্য একটা মাঠ।সবাই ভয় পেয়ে গেল। ভাবল হয়ত এখানে মায়া আমাদেরকে শেষ করার জন্য ডেকেছে।চতর্দিকে সৈন্যরা লুকিয়ে আছে হয়ত।
তাই তারা চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগল।হঠাৎ দেখতে পেল গাছ পালায় ভর্তী একটা জায়গা।সবাই সেদিকেই ছোটলো। গিয়ে দেখে কি সুন্দর একটি জায়গা।চারিদিকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে।পাখিরা মিষ্টি স্বরে গান করছে।
এতদিন পরে এমন একটি জায়গা দেখে সবাই আনন্দিত।চারিদিকে ফল ফুলে ঘেরা।এত সুন্দর একটি জায়গা এখানে থাকবে কেহই ভাবতে পারেনা।
হঠাৎ তাদের আনন্দে ভাটা পড়ল।মনে চিন্তা আসল।মায়া কি আমাদের সাথে কোন চাল খেলছে।না জানি কত সৈন্য গাছের ঝোপে লুকিয়ে রাখছে।তাই তার সবদিক দেখতে লাগলেন। না কেউ তো নেই। কিন্তু কেন মায়া এই জায়গায় আসতে বলল।সবার মনে নানান প্রশ্ন।
হঠাৎ দেখা গেল দুরে ধোলা উড়ছে।ঘোড়ার চলনে বুঝাই গেল সে মায়া হবে।তাই সবাই লুকিয়ে গেল ঝুপ ঝাড়ে।মায়া দ্রুত গতীতে আসছে।সে একা।কোন সৈন্য কিংবা দেহ রক্ষি নেই পাশে।মায়া দুর থেকে চিৎকার করে বলে বেলাল তুমি কেমন আছ।আমি তোমায় না পেয়ে একটি রাতেই যাচ্ছিলাম মরে।এই বলে মায়া ঘোড়া থেকে নেমে বেলাল কে জড়িয়ে ধরে।মিশে যায় বেলালের দেহের সাথে।বেলাল পুরাই অবাক।তাই সে বলল রাণী এসব কি ঠিক হচ্ছে।রাণী বলল হাঁ ঠিক হচ্ছে।আমি তোমায় ভালবেসে ফেলেছি বেলাল।অনেক বেশি।তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবনা বেলাল।বলনা তুমি আমার হবে।আমারই থাকবে সারা জীবন।বেলাল রানীর পাগলামি দেখে। তার চোখ দুটু মোছতো মোছতে বলে।রানী এসব আসলে ঠিক হচ্ছেনা।তোমার স্বামী তোমায় এত আদর করে। তুমি তাকে ধোঁকা দিতে পারনা।
তখন রানী বলল হে আমি উনাকে অনেক ভালবাসি। তিনিও আমাকে।তবে আমরা স্বামী স্ত্রীর মত রাত্রি যাপন করিনা একসাথে।তিনি আমার যৌবন শেষ করে দিচ্ছেন।নষ্ট করে দিচ্ছেন আমার জীবন।তাই আমি নষ্ট করতে চাইনা বগবানের দেওয়া এই যৌবনটাকে।আমি কাটাতে চাই বাকি জীবনটা তোমার সাথে।
বেলাল বলল উনি হিজরা মায়া বলল না।তাহলে কেন একসাথে থাকেননা? বেলাল বলল।তখন মায়া বেলালের কোলে মাথা রেখে বলল শুনবা কি তুমি। আমাদের বিয়ের কাহিনী।বেলাল কৌতহলি স্বরে বলল হাঁ।তখন মায়া বলতে লাগল। তাদের বিয়ের গল্প।
তখন রাজা দাহিরের রাজা হওয়ার প্রারাম্ভ মুহুর্ত চলছে।তিনি ঘোড়ার গাড়ি সাজিয়ে চলছেন মন্দিরের দিকে।প্রজারা ফুলের মালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে।সবাই যেন তাকে আনন্দে নিজ রাজা রুপে বরণ করে নিচ্ছে।
রাজা দাহির প্রবেশ করেন মন্দিরে।শুরু হয় পন্ডিতদের মন্ত্র আর্চনা।কিছুক্ষন পর পন্ডিতরা চোখ খোলে। বলে রাজা দাহির তোমার শাসন ক্ষমতা ভালই যাবে। খুশিতে যাবে সবার জীবন।তবে.......
এই বলে তারা যেন আর কিছুই বলতে চায়না।রাজা অস্তির হয়ে উঠলেন।বললেন পন্ডিত মশাই বলেননা তবেটা কি।পাগলের মত মিনতি করতে লাগল রাজা। তখন পন্ডিত তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।
(দশম পর্ব)
সবি ঠিক আছে।তবে আপনার ক্ষমতাটা বেশি দিন থাকবেনা।কয়দিন পর আপনার বোনের স্বামী এসে তা ছিনিয়ে নিবে।তা শুনতেই রাজা পেরেশান হয়ে যান।কি করতে হবে তাকে ভেবে পাননা।
রাত দিন কাটতে লাগলো।রাজা শুধুই পেরেশান।খাওয়া দাওয়া কিছুই নেই।সব যেন তিনি ভুলে গেলেন।হঠাৎ তিনি তার বুদ্ধিমান উজিরকে ডাকলেন।বললেন এ থেকে বাচার কোন পথ বলে দিতে।উজির যে কিছুই ভেবে পায়না।হঠাৎ তার মনে একটা বুদ্ধি আসল।বলল মহারাজ পেয়েছি একটা রাস্তা।
যদি অনুমতি দেন তো বলব।রাজা বললেন বলো।তখন উজির বলল মহারাজের জয় হোক বলছিলাম আপনি যদি আপনার বোন মায়াকে বিয়ে করে নেন। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর দুর থেকে কেহ আসবেওনা। কেড়েও নিতে পারবেনা কেহ আপনার রাজ্য।
রাজা দাড়িয়ে গেলেন।বললেন উজির লোকে কি বলবে।রাজা তার আপন বোনকে বিয়ে করেছে।তখন উজির বলল তাতে কি হয়েছে।লোক ক'দিন পর এসব মনে রাখেনা।ভুলে যায় সব।তেমনি ভুলে যাবে এই কথা।আর আপনিতো নামে বিয়ে করবেন।রাত্রি যাপন করবেননা।থাকবেন আলাদা আলাদা।রাজা রাজি হয়ে যান।
তিনি আসেন আমার কাছে।বললেন মায়া তোমায় বলব একটি কথা।আমি বললাম কি বলবেন ভাইয়া।তখন রাজা সব খোলে বললেন।আমি কেঁদে উঠলাম।তবে রাজ্য ভাইয়ের কাছে রাখতে গিয়ে।আমি আমার জীবন যৌবনকে বলি দিলাম।
মন্দিরে গিয়ে হাজার হাজার লোকের সামনে।ধুমধামে আমাদের বিয়ে হয়।সেদিন থেকে আমি রাজা দাহিরের স্ত্রী।তিনি আমার প্রিয়তম স্বামী। তবে তিনি যে আমার যৌবনকে বলি দিয়েছেন তা বুঝেন।কেননা উনার যখন প্রয়োজন পড়ে তখন বাদিরা আছে। আমারতো কেউ নেই।তাই ছেড়ে দিয়েছেন যেথায় ইচ্ছা সেথায় যেতে।অন্য রাণীদের মত আমি বন্ধি নই।
এসব শুনে বেলাল পুরাই অবাক।বলল এটা কেমনে করলা ভাই বোনের বিবাহ।তোমাদের কি একটু আত্মসম্মানবোধ ছিলনা বুঝি।তখন মায়া কেঁদে কেঁদে বেলাল আর জোরে জড়িয়ে ধরে বলল।তাইতো আমি তোমার কাছে আসছি।তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।তুমি আমায় একটু আদর করনা।বেলাল বলল আমাদের ধর্মে এসব বিয়ের আগে জায়েয নয়।এসব করা মহা পাপ।
ওগো মায়া আমিও তোমায় ভালবেসে ফেলেছি।খুব বেশি।আটকে দিয়েছ আমায় তোমার মায়া জালে।আসনা আমরা বিয়ে করে নেই।তুমি মুসলমান হয়ে যাও কালেমা পড়ে।
তখন মায়া বলল তুমি আমাদের ভালবাসার ভিতর ধর্ম এননা গো।আমি শুধু তোমায় ভালবাসি। তুমি ভালবাস আমায়। এটাই ধর্ম এটাই সব। তুমি ধর্মের কথা মাঝে এনে আমাদের ভালবাসার আড়াল করনা গো।
আমি হিন্দু তুমি মুসলমান এটা ভুলে যাও।
এই বলে মায়া বেলালকে আর কাছে টানলো।কিছুক্ষন পর মায়া চলে গেল।বলল পরদিন আসবে।বেলল তার সাথিদের কাছে গেল।আর বলতে লাগল আমি মায়াকে ভালবাসি।আর কত কি।তার মুখ দিয়ে মদের গন্ধ আসছিল।সাথিদের বুঝতে বাকি রইলনা যে মায়া তাকে মদ খাইয়ে এসব করেছে।
পরদিন মায়া আসল।দেখা করল দুজনে।হারিয়ে গেল ভালবাসার রাজ্যে।এভাবে চলে গেল চার পাঁচ দিন।একবার বেলাল বলল।এভাবে আর কত।বনে বনে আমরা থাকব।তুমি এসে দেখা করবে।আমাদের জন্য কিছু একটা করো।
তখন মায়া বলল।তাহলে আমার সাথে চলো সাবাই।আজ থেকে রাজার সবাই জানবে তোমরা আমার একান্ত প্রহরি। অন্যরা আজ থেকে বরখাস্ত হয়ে যাবে।সবাই আনন্দে ঘোড়ার উপর সওয়ার হলো।চলে গেল রাজ মহলে।রাজা এদেরকে দেখে ও দেখলেননা।কারন এরা যে রাণীর সাথে।রাতে রাজা দাহির মায়া রাণীর কামরায় ডুকে।
(১১তম পর্ব)
রাজা বলল রাণী তুমি কি জানো এদেরকে।রাণী বলল হাঁ আমি চিনি তাদেরকে।এরা আরব রাজার বিদ্রোহি।এরা আশ্রয় পেতে এদেশে এসেছে।তাই আমি তাদেরকে আমার একান্ত দেহরক্ষি বানিয়ে নিছি।
রাজা বলল রানী তুমি এদের বিশ্বাস করনা।এরা মুসলমান যে কোন সময় বিশ্বাস ঘাতকতা করবে। রাণী বলল রাজা তুমি কিভাবে বলতে পারো মুসলমান বিশ্বাস ঘাতকতা করে।তুমি কি জাননা আমাদের দেশের আরও আসা আরব আশ্রয় গ্রহন কারির কথা।যখন রাজা রামায়ন আমাদের ভাই বোনের বিয়ের কারনে।আমাদের রাজ্যকে ধ্বংশ করে দিতে চেয়েছিল।
তখন সে এনেছিল হাজার হাজার হাতি সহ সৈন্য।যাদের মোকাবেলা করতে হয়েছিল তোমার সৈন্যরা ব্যর্থ।ঠিক সেই মুহুর্তে ওই আশ্রিত মুসলমানরা আমাদের কাজে এসেছিল।এরা নিজের জান বাজি রেখে আমাদের উপকারের বদলা দিয়েছিল।হাতিদের সুড় কেটে রাজা রামায়নকে পরাজিত করেছিল।
বেলাল তো সেই মুসলমানদের থেকে।যার বীর বাহাদুরিতা আমায় মুগ্ধ করেছে।যার সামনে আমাদের হিন্দু প্রহরিরা তুলনাই হতে পারেনা।রাজা দাহির রাণীর কথায় চিন্তায় পড়ে গেল। কি বলবে কিছুই পাচ্ছেনা।সব কথাই যেন হারিয়ে গেল।রাজা দাহির চলে গেল তার কামরায়।
রাণী জোরে একটা হাফ ছাড়লো।বলল যাও এবার বাঁচা গেল।বাদিকে বলল যাও আমার বেলালকে ডাকো।বেলাল আসল আবারও হারিয়ে গেল তারা ভালবাসার স্বপ্নীল ভুবনে।বেলাল বার বার বলত রানী তুমি মুসলমান হয়ে যাও করে নেই আমরা বিয়ে।তখনি রাণী বলত। তুমি এসব বলছ কেন?তুমি আমাদের ভালবাসার আড়াল করনা ধর্মের কথা এনে।এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন। রাতের পর রাত।চলতে থাকে তাদের প্রেম ভালবাসার মুধুর লীলা।
এদিকে একদিন হাজ্জাজ বসে আছেন খানার টেবিলে।সামনে নানান রকম খানা পরিবেশন করা হয়েছে।পাশে রাণীরা ও বসা।পিছনে বাদি বাতাস করে যাচ্ছে।
হঠাৎ বাহির থেকে একটা বিকট চিৎকার আসতে লাগল। আমাকে ছাড় আমি হাজ্জাজের দরবারে যাব।মনে হয় প্রহরিরা বাধা দিচ্ছে ওকে না আসতে।তাই হাজ্জাজ নিজেই চলে গেলেন তার কাছে।দেখলেন জীর্ণ শীর্ণ বস্ত্র পরিহিত এক ব্যক্তি এসেছে।মাথার চোল গুলা এলোমেলো হয়ে আছে।যুবকটা প্রায় মৃত্যু মুখে পতিত।যেন সে মৃত্যুর সাথে লাড়াই করে কথা বলছে।
হাজ্জাজ তাড়াতাড়ি চলে গেলেন তার কাছে।এক হাত রাখলেন তার মাথার নিচে। বললেন কেউ পানি নিয়ে এসো।একটু পানি দাও তার মুখে।লোকটা বলল হাজ্জাজ আমি বাচবনা।পানি আনা এসব বাঁধ দিয়ে দাও।আমার আয়ু শেষ হয়ে আসছে।
মৃত্যুর আগে আমি এক মুসলিম মেয়ের চিৎকারের কথা আমি তোমায় শুনাতে চাই।আমি যে কোন মুল্যে তা বলার আগ পর্যন্ত বেচে থাকব।এরপর বলতে লাগল কাপা কাপা কন্ঠে।হাজ্জাজ আমি যা বলি মন দিয়ে শুনো।
(১২তম পর্ব)
আমরা সিন্ধু পার্শবর্তি এলাকায় থাকি।আমরা ছিলাম সবাই হজ্জ যাত্রি।ক'দিন আগে আমরা সবাই হজ্জে আসার জন্য জাহাজে উঠি।ছিল আমাদের সাথে নারী পুরুষ শিশু সহ অনেক।এদিকে রাজা দাহির হিংস্র হয়ে গেছে।
সমুদ্র দিয়ে আসা সকল হজ্জ যাত্রিকে তারা হত্যা লুঠতরাজ করছে।যুবতিদের ধর্ষন করছে। এই কাজ করার জন্য ডাবেল শহরকে বাছাই করেছে।আমরা সেই খবর শুনি। তাই আমরা ডাবেল থেকে দুর পথ দিয়ে আসার চেষ্টা করি।
পথিমধ্যে ভিষন ঝড় আসে।আমাদের জাহাজ বন্ধ হয়ে যায়।সাগরের ঢেউ।আর বাতাসের টানে। চলে আসে ডাবেল শহরের পাশে।সমুদ্রে থাকা ডাকাত দল আমাদের উপর হামলা করে।ওদেরকে বাঁধা দেওয়ায় আমাদের হজ্জ যাত্রিদের অনেক যুবকদের গলা কেটে সমুদ্রে ছেড়ে দেয়ে।
তারা লুঠতরাজ করা শুরু করে দেয়।মানুষজনকে লৌহার বেল্ট দিয়ে পিটাতে থাকে।আমি দেখছিলাম তাদের দেহ থেকে রক্ত উড়ে উড়ে দুরে পড়ছিল।যুবতিদের কাপড় টেনে টেনে উলঙ্গ করতে লাগল।শুরু করল অবিরাম ধর্ষন।
এদের এমন অত্যাচারে নিরাপরাদ হাজ্জিদের চিৎকারে আকাশ বাতাস যেন কেঁদে উঠছে।যুবতি মেয়েদের আহাজারি যেন আমাদের মত নির্যাতিত মানুষদের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল।তবুও এই হিন্দু ডাকাতদের মনে একটুও দয়া মায়া ছিলনা।ওরা হয়ে উঠেছিল জানোয়ারের চেয়ে হিংস্র।দেখলাম ওরা লোকদেরকে সমুদ্র তীরে নামিয়ে। টেনে হেচড়ে নিতে ছিল এক বন্দিশালার ভিতরে।
যুবতী তরুনিরা শুধুই চিৎকার করছে। শুনলাম এক মুসলিম মেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতেছে হে হাজ্জাজ তুমি আমাদেরকে বাচাতে আস।হে হাজ্জাজ তুমি আমাদের বাচাতে আস।
আমরা চারজন তখন জাহাজের একটা কাঠের নিচে লোকানো ছিলাম।মেয়েটির চিৎকার আমরা আর সহ্য করতে পারলামনা।আমার সামনে আমার মুসলিম বোন ধর্ষিতা হবে মেনে নিতে পারলামনা।তাই অস্ত্র নিয়ে যেই বের হতে যাব।
তখনি একটা নৌকা এসে আমাদের জাহাজের পাশে আটকালো।আমাদেরকে ওর কাছে আসতে বলল।আমরা গেলাম।তখন যুবকটা বলল আমি বেলাল। এই নাও চারটা ঘোড়া তোমরা চলে যাও হাজ্জাজের কাছে। গিয়ে বলো এই ঘটনা।
আরো বলো এসব রাজা দাহির করছে।সে এদেরকে ডাবেল শহরে বন্দি করে রেখেছে।আর বলিও উনি যেন ওদেরকে ছাড়িয়ে নিতে।আমি বড় বিপদে আছি।
তোমরা চলে যাও দ্রুত।কোথাও থেমনা একটা মুহুর্ত। আমরা ছোটে চললাম মরুভুমির দিকে।দিন রাত একাদারে না থেমে আসতে লাগলাম আপনার কাছে।পথিমধ্যে আমার বাকি তিন সাথি পিপাসায় মাটিতে লুঠিয়ে পড়ে। এমনকি তাদের ঘোড়াও। সবাই মারা গেছে।আমি শুধু পিছনে তাকালাম।নামতে পারলামনা দেখতে।
কারন আমার ও যে আয়ু শেষ হতে চলেছে। যে কোন উপায়ে। ★মুসলিম মেয়েটির চিৎকার ★আমাকেই যে পৌছাতে হবে।আপনার কানে।
হাজ্জাজ আমি আর পারছিনা। আমার সাথিরা আমায় ডাকছে। মেয়েটির চিৎকার আমার কলিজাটা টোকরো টোকরো করে দিচ্ছে।বলো হাজ্জাজ কথা দাও তুমি ওদেরকে ছাড়িয়ে আনবে।হাজ্জাজ দ্রুত হাতটা ওর হাতে দিলেন।আর যেই বলতে যাবেন তখনি যুবকটা চলে যায় না ফেরার দেশে।
তখন হাজ্জাজ আল্লাহ বলে একটা চিৎকার দিয়ে যুবকটাকে বুকে চেপে ধরেন।হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।হাজ্জাজ শত চেষ্টা করেন যুবকটাকে কথা বলাতে।সে তো চলে গেছে।আর আসবেনা ফিরে।
হাজ্জাজ চিৎকার করে বলতে লাগলেন। মা'রে আমি আসছি তোমাদেরকে বাচাতে।এদিকে এক মুহুর্তের মধ্যে যুবকটা চোখের সামনে একটা মেয়ের কথা পৌছাতে গিয়ে মরে যাওয়া।এদিকে মেয়েটা হাজ্জাজ বলে চিৎকার করা। যেন তার দেহে জিহাদের আগুন ধরিয়ে দিছে।
চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।তখনি হাজ্জাজ খলিফা ওয়ালিদের কাছে চিঠি লিখলেন। বললেন এখনি সিন্ধু আক্রমনের অনুমতি দিতে।কিন্তু খলিফার কাছ থেকে যে চিঠি আসলো। তা যেন হাজ্জাজের রক্ত আর গরম করে দিল।
(১৩তম পর্ব)
তাতে লেখা ছিল যুদ্ধে না যেতে।কারন হিসাবে লেখা ছিল।এখন দেশের পরিস্থিতি ভাল নয়।চারিদিকে যুদ্ধ লেগে আছে।দেশে অশৃংখলা বিরাজ করছে। হাজ্জাজ চিঠিটা পড়তেই কানে যেন ভেসে আসল।মেয়েটির চিৎকার।হাজ্জাজ আর ঘুমাতে পারেননা।
ঘুমাতে গেলেই মেয়েটা যেন কানের কাছে এসে বলেছে।হে হাজ্জাজ আমাদেরকে বাচাও।আমাদেরকে এই হিন্দু পিশাচদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নাও।
হাজ্জাজ লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠেন।তখনি চিঠি লিখেন আপনি আমায় যুদ্ধে যেতে দিচ্ছেননা।ভাবছেন দেশের ক্ষতি হবে।আমি কথা দিলাম।আমার এ অভিযানের কারনে যা ক্ষতি হবে। আমি তার দ্ধিগুন অর্থ জরিমানা নিজের কাছ থেকে দিব।এই বলে চিঠি পাঠান খলিফার দরবারে।উত্তর আসার অপেক্ষা না করে। ডেকে পাঠান সেনা প্রধানকে।
আর বলেন যুদ্ধের জন্য সৈন্যদেরকে প্রস্তুত করতে। সৈন্যরা দ্রুত প্রস্তুত হয়ে যায়।সারাদেশ থেকে বাছাই করা হয় হাজার হাজার যুদ্ধাবাজকে।বলা হয় মুসলিম মেয়েটির কথা।সকল যুবক ইমানি চেতনা নিয়ে জাগিয়ে উঠে।সেদিন সমস্থ আরব মুখরিত হয়েছিল।আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে।
হাজার হাজার যুদ্ধাবাজরা চলে যান যুদ্ধতে।হাজ্জাজ তাদেরকে সমুদ্র পথ পর্যন্ত এগিয়ে দেন। ছেড়ে দেন তাদেরকে ফি আমানিল্লাহ বলে।
এদিকে রাজা দাহির গোয়েন্দার মাধ্যমে খবর পেয়ে যায়।তাই সে ডাকে বুদ্ধিমান উজিরকে।উজির এসে ও চিন্তায় পড়ে যায় কি করবে।কারন তাদের ভিতর মুসলমানের ভয় লেগে আছে।চোখ বুঝলেই রোম পারস্যদের মত শক্তিধর দলকে মুসলমান যেভাবে হারিয়েছে। সেই দৃশ্য ফুটে উঠে।তাছাড়া সেই দৃশ্য ও মনে পড়ে যায়।যা করছিল মাত্র কয়েকদিন পুর্বে আশ্রিত সামান্য কয়েক মুসলমান রাজা রামায়নের সাথে।
দাহির আর উজির কিছুই ভেবে পায়না।এদিকে মুসলমানরা ডাবেলে হামলা শুরু করে দেয়।ডাবেলের ডাকাত ও সাধারন হিন্দু জনতা যুদ্ধে নেমে পড়ে।দিন যতই গড়াচ্ছে ততই যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে।সাথে বাড়ছে উভয় দলের হতা হতের সংখ্যা।
বেলা যতই গড়াতে লাগলো। মুসলমানদের জয়ের পাল্লা ভারি হতে লাগল।পিছু হটতে লাগল হিন্দু সৈন্যরা।বিকাল গিয়ে সন্ধ্যা নেমে এল।মুসলমানরা প্রায় শহরে প্রবেশ করেই গিয়েছিলেন। ঠিক তখনি অন্ধকার মুসলমানদের পরাজয়ের বার্তা নিয়ে এল।হিন্দু সৈন্যরা পলায়ন করে শহরের সকল হিন্দুদের জমায়েত করতে লাগল।
পরদিন সকাল হতেনা হতেই সকল হিন্দুরা ঝাপিয়ে পড়ল মুসলমানদের উপর।এদিকে মুসাফির যুদ্ধার সামাল দিতে না পেরে। আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে ঝাপিয়ে পড়েন একসাথে।সময়ের সাথে সাথে মুসলমানদের শহিদদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
কিছু সময়ের ভিতর খবর আসে সেনাপতি শাহাদত বরণ করেছেন বিরত্বের সাথে। তখনি মুসলিম সৈন্যদের মাঝে অশৃংখলা দেখা দেয়।নেমে পড়ে লড়াই করতে যে যেভাবে পারে।ধীরে সকল মুসলিম যুদ্ধারা শাহাদত বরন করে।
সমস্থ ডাবেল ভরে যায় মুসলমানদের লাশে।যারা এসেছিল তাদের মা বোনদেরকে বাচাতে।আজ তারা ও চলে গেল না ফেরার দেশে।তবে তারা বাহদুরি করে মৃত্যু বরন করেছে।জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত লড়েছে।শেষ আর রক্ষা গেলনা কাউকে।গ্রহন করতে হল শাহাদাতের মর্যাদাকে।
(১৪তম পর্ব)
পরাজয়ের খবরটা যখন হাজ্জাজের কাছে পৌছল। তখন হাজ্জাজ লাফ মেরে উঠনে।তিনি ভাবতেই পারেননা তার কোন অভিযান ব্যর্থতায় রুপ নিতে।তিনি কখনও চাননা যে কোন পরাজয়ের কথা আসুক কানটিতে। তাই তিনি রাগের স্বরে বলেন।
নিশ্চয় এতে কামান্ডারের কোন ভুল আছে।সে হয়ত কোথাও গাফলতি করেছে।কিংবা ভীতু হয়ে গেছে। তখন খবর দাতা বলল।হে হাজ্জাজ আল্লাহ আপনাকে কমা করুন।কিভাবে আপনি না যেনে একজন শহিদকে কাপুরুষ বলছেন।আমি নিজ চোখে দেখেছি কামান্ডারকে বীরত্বের সাথে লড়তে।শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে।
হাজ্জাজ নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।তখনি তওবা করলেন।সাথে সাথে একটা চিঠি আসে খলিফার কাছ থেকে।লেখা ছিল তাতে।হাজ্জাজ তোমায় বলেছিলামনা যুদ্ধে না যেতে।তা ও তুৃমি সৈন্যদেরকে পাঠালে।তো কি হল। পরাজয়ের মালা পরালে মুসলিম জাহানের গালাতে।
চিঠিটা পড়েই হাজ্জের রক্ত আর গরম হয়ে গেল।এই রাজা দাহিরের কারনে তাকে পরাজয়ের কথা শুনতে হল।শুনতে হল খলিফার ভৎস্না।
তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এবার আর খলিফাকে জানাবেননা।বিজয় হওয়ার পর যানাবেন খলিফাকে।তাই তিনি কামান্ডার প্রধান বোধায়েলকে ডেকে পাঠালেন।বললেন সমস্ত ঘটনা বোধায়েল মা বোনের ইজ্জত বাচাতে রাজি হয়ে গেলেন।তড়িৎ গতীতে একত্রিত করলেন হাজার হাজার সৈন্যকে।
চলে যায় সবাই আবারও যুদ্ধে। বোধায়েলের নেতৃত্বে।তবে এবারও হাজ্জাজ রাগের কারনে ভুল করে বসলেন।তাদেরকে কিছুদিন সময় না দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন দ্রুত গতীতে।আর বললেন বোধায়েল আর যেন পরাজয়ের কথা না শুনি।জয়ের জন্যই আমি তোমার মত বীর বাহাদুরকে কামান্ডার বানিয়েছি।
যদি পারো জয় নিয়ে ফিরো।নয়ত তথায় মরে যেয় এ মুখ আর কখন এসে দেখিয়না আমাকে। বোধায়েল বলল তাই হবে।আসলে হাজ্জাজ কঠোর স্বভাভের লোক ছিল।যা বলছে তাই করে ছাড়বে।তাইতো সে এই করুন মুহুর্তে কামান্ডারকে এমন বলেছে।
বোধায়েল তার সৈন্যদের নিয়ে নেমে পড়লেন সমুদ্রে।এবারও খবর পৌছে গেল রাজা দাহিরের কাছে।গোয়েন্দার মাধ্যমে।যে মুসলমানরা আবার আসছে।খবর শুনেই রাজা দাহির হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়ে দেয় ডাবেলে।তাদের সাথে দেয় বড় বড় হাতি।যাতে তারা এসব দিয়ে মুসলমানদেরকে পৃষ্ট করে ফেলে।
মুসলমানরা যখন সেথায় পৌছলেন তখনি তারা হামলা করা শুরু করে দেয়।মুসলমানরাও শুরু করে তাদের হামলা প্রতিরোদ করতে।মুসলমানদের তাদের হাতি দেখে একটুও ভয় পায়নি। কারন তারা ইতিপুর্বে পারস্যদের সাথে হাতি যুদ্ধে বিজয় বরণ করেছে।
যুদ্ধ চলতে লাগল দিন গিয়ে রাত চলে এল।যুদ্ধ বিরতি হয়ে গেল অন্ধকারের কারনে।চারিদিকে শহিদ আর হিন্দদের লাশ পড়ে আছে।রাতেই শহিদদের দাফন দেওয়া হয়েছে।পরদিন সকাল থেকে আবার শুরু হয় তমুল যুদ্ধ।এইদিনও ফলাফল আসেনি কোন দিকে।শুধুই মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।
পরদিন মুসলমানরা আমরন লড়তে থাকে।কাটতে থাকে হাতিদের সুড়।পালাতে লাগে হাতিরা দিক বেদিকে।তখনি খবর আসে কামান্ডার বোধায়েল শাহাদাত বরণ করেছেন।শুরু হয়ে যায় সৈন্যদের মাঝে অশৃংখলা।কিছু সময়ের ভিতরেই এরা ও শাহাদাত বরন করে নেয়।হিন্দুরা বিজয়টা কেড়ে নেয়। মুসলমানের কাছে থেকে।
খবরটা হাজ্জের কাছে পৌছতেই তিনি বোধায়েলকে কাটক্ষ করে কথা শুরু করে দিলেন।তখনি খবর নিয়ে আসা একজন সৈন্য তার কথা ধরেন।বলেন হাজ্জাজ আপনি না দেখে বোধায়েলকে এসব বলতে পারেন।বৌধায়েল বিরত্বের সাথে মৃত্যু বরণ করেছে।
আমি নিজ চোখে দেখেছি। বোধায়েলকে লড়াই করতে।একটি সময় তিনি বেপরওয়া হয়ে উঠেন। চলে যান হতির সুড় কাটতে। তখনি একটা বর্শা তার ঘোড়ার উপর পড়ে।ঘোড়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।তিনি ও পড়ে যান পাশে।সেই সময় একটা হাতি পদদলিত করে মেরে ফেলে তার ঘোড়াকে।
ঠিক তখনি হিন্দুরা তার উপর হামলা করে।বীর বোধায়েলকে শাহিদ করে দেয়।তখনি হাজ্জাজ চিৎকার দিয়ে তার তরবারীটি বের করে।
(১৫তম পর্ব)
চিৎকার করে বলতে লাগেন। তোমাদের কামান্ডার বীরত্বের সাথে লড়াই করেছে।দিয়ে দিয়েছে মুসলিম জাহানের জন্য নিজেকে কোরবান। আর তোরা চেয়ে চেয়ে দেখেছিস।ওকে ফেলে রেখে তোরা এখানে এছেসিস।এই বলেই তিনি তরবারী চালালেন।খবর নিয়ে আসা এক মুজাহিদের ঘাড়ে।
সাথে সাথে দেহ থেকে মস্তক আলাদা হয়ে।মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করতে থাকে।দেহটা এলিয়ে পড়ে একদিকে।হাজ্জাজ তখন ও শুধু চিৎকার করছে।বলছে আমি শুধু চাই ওই হিন্দুদের রক্ত। চাই রাজা দাহিরের মস্তক।আর কিছুনা।
যারা আমার মা বোনের ইজ্জত হরন করেছে।আমি তাদের কিছুতেই ছাড়বনা।তা করতে গিয়ে যারাই হেরে আসবে।তাদেরকে ও বাচতে দেবনা।সে তখন বলে। এসব আর কারো দিয়ে সম্ভব হবেনা।সম্ভব হবে শুধু আমার ভাতিজা মুহাম্মদকেই।ও পারবে দাহিরের মস্তক আনতে।পারবে করতে ধ্বংশ তার মসনদকে।এনে দিবে বন্দি হওয়া মুসলমানদেরকে।
তাই তিনি চিঠি লিখলেন। মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমের কাছে।মুহাম্মদ তা পেয়ে তো পুরাই অবাক।চাচা এত বাহাদুর এমন হওয়ার পর এই কাজ কেমনে করলেন।কেমনেই বা এই সাধারন একটা যুদ্ধের জন্য আমায় যেতে বলছেন।এটাতো অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন।
তখন চিঠি নিয়ে আসা ব্যক্তি বলল। সিপাহসালার মুহাম্মদ আপনি হয়ত জানেননা।রাজা দাহির অনেক শক্তির অধিকারি।ইতিপুর্বে আমাদের দুটি দল গিয়ে হেরে এসেছে।যুদ্ধ রনাঙ্গনে এদের সাথে পেরে উঠতে পারেনি।তাই হয়ত হাজ্জাজ আপনাকেই বলছেন।আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনিই তা পারবেন।
তা শুনে মুহাম্মদ ঘরে পায়চারি করা শুরু করলেন।হাটতে লাগলেন পিছনে হাত দিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।পিয়ন পিছন পিছন হাটছে।মাঝে মাঝে তিনি তার কাছ থেকে জানতে চাইলেন সিন্ধু রাজ্যের মানচিত্রের কথা।
শুনতে শুনতে তিনি মাটিতে একেও নিলেন একটা মানচিত্র।ভাল করে একবার তা দেখে নিলেন।পরে বললেন যাও। চাচাকে বলো যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠাতে আমার কাছে।তখন মুহাম্মদ ছিলেন একটি যুদ্ধে।তার এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত তার অধিনে যুদ্ধে থাকা কামান্ডাররা চিন্তায় পড়ে যায়।
তারা কি করবে এই মুহুর্তে। কিছুই পাচ্ছিলনা খোঁজে।তাই তারা এসে বলে।মুহাম্মদ আপনি এ কি করলেন।এদিকে আপনার যুদ্ধ চলছে।আর এখন আপনি অন্য কোথাও যাবেন চলে। এটা কিভাবে হতে পারে।
তখন মুহাম্মদ বললেন।তোমরা চিন্তা কেন করছো।আমিতো এই যাব আর এই আসব।আমি আসার আগ পর্যন্ত তোমরাই যুদ্ধ চালিয়ে যাও।বিজয় না আসার আগ পর্যন্ত থেকনা বসে।
এদিকে হাজ্জাজ যখন শুনলেন। ভাতিজা মুহাম্মদ রাজি।তার যে আর আনন্দের অন্ত নেই।উঠেন আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে।জামায়েত করতে থাকেন সৈন্যদেরকে।শুরু করেন এক সামরিক প্রতিযোগিতা।এখনে যারাই বীরত্ব দেখাতে পারবে এরাই যাবে জিহাদে।
সাথে শুরু করেন ট্রেনিং ব্যবস্থা।দিন রাত সৈন্যরা প্রস্তুতি নিতে থাকে।দেওয়া হয় তাদেরকে পর্যাপ্ত খানি ও উন্নত চিকিৎসা।এভাবে চলতে থাকে মাস খানিক।দিন চলে আসে যুদ্ধ যাওয়ার।
হাজ্জাজ ঘোড়া উঠ তরবারী বর্শা বল্লম তীর মিনজানিক ইত্যাদি অস্ত্র একত্রিত করেন।সাথে জামায়েত করেন।সবচেয়ে বড় মিনজানিক উরুস ও।এটা বহন করতে প্রায় হাজার মানুষের দরকার।তা দিয়ে অনেক দুরে পাথর ছুড়ে মারা যায়।ওর একেকটা পাথর তুলতে প্রায় পাঁচশত মানুষের প্রয়োজন।
হাজ্জাজ সৈন্যদের উদ্দেশ্যে এক তেজস্বি ভাষন দেন।তুলে দেন বীর মুজাহিদদের দেহে জযবা। সবাই একই সাথে তাকবির ধ্বনি দিতে থাকে।আকাশে বাতাসে তরু লতা বৃক্ষরাজি পর্যন্ত। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মেতে উঠে।
ধীরে ধীরে সৈন্যরা শহর হতে বের হয়ে। মুহাম্মদের শহরের দিকে যেতে থাকে।হাজ্জাজ তাদের সাথে পঠিয়েছেন অঢেল খাবার। তিনি চলছিলেন রসেদের সাথে।এক পর্যায়ে পৌছে যান শহরের শেষ প্রান্তে।তার পিছু ছিল শহরের সকল লোকজন ও।নারী পুরুষ সবার মুখে শুধু আল্লাহু আকবার ধ্বনি বাজছিল। চোখে ছিল বিদায়ী বিচ্ছেদের অশ্রু।
((পরবর্তি পর্ব পেতে দ্রুত লাইক কমেন্ট করে থাকুন সাথে))
(১৬তম পর্ব)
তবু ও কেহ তা চাচ্ছিলনা মুজাহিদদেরকে।সবাই উৎসাহ দিতে ছিল।ধীরে ধীরে সৈন্যরা চলে যেতে লাগল।দেশের সবাই দাড়িয়ে আছেন হাজ্জাজের পিছনে।আর চেয়ে আছেন মুজাহিদ বাহিনীর গমন পথের দিকে।
মুজাহিদরা কিছু দুর যেতে না যেতেই। পড়ে যায় শহরে কান্নার রোল।চারিদিকে শুধুই অশ্রু পড়ছে। মরুভুমির বালুরা ও যেন এই অশ্রুগুলা চোষে নিতে কষ্ট হচ্ছে।তারাও যেন মুজাহিদদের সাথে যাওয়ার জন্য বাহানা খোঁজছে।কিছু সময় পর বালুরা উড়াউড়ি করা শুরু করে দিল।মুজাহিদরা বহুদুর চলে গেল।হাজ্জাজ সবাইকে নিয়ে শহরে ফিরে গেলেন।
এদিকে মুহাম্মদ মুজাহিদদের অপেক্ষায় রয়েছেন।প্রতিদিন ঘোড়া নিয়ে একা একা মুরুভুমির দিকে ছুঁটে যেতেন।অপেক্ষা করতেন তাদের।কিছু দিন পর তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হল।দেখতে পেলেন আকাশে বালু উড়ছে।বাতাস এদিকে বালুগুলাকে উড়িয়ে নিয়ে আসছে।যেন তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল।কে কার আগে বীর মুহাম্মদের কাছে সংবাদ দিবে।যে হে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম তোমার অপেক্ষার দিন শেষ হয়ে গেছে।মুজাহিদ বাহিনী যে তোমার কাছেই এসে যাচ্ছে।
মুহাম্মদ যখন খবরটা পেলেন।তখন তিনি তাদের আগমনকে স্বাগত জানাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করলেন।পরে যখন মুজাহিদ বাহিনীরা আসল। সবাইকে শুভেচ্ছা জানালেন।
শুরু করেদেন সৈন্যদেরকে নিয়ে কথা বার্তা। কিভাবে কি করা যায়।কোথায় প্রথমে আক্রমন করা যায়।আলোচনা শেষ করেই তিনি জামায়েত করতে থাকেন। তার অধীনে থাকা আর ও যুূদ্ধাদেরকে।
এদিকে এইসব খবর পৌছে যায় রাজা দাহিরের কাছে।গোয়েন্দার মাধ্যমে। তবে এবারের খবরটা ভীত করার মত। গোয়েন্দা বলল মহারাজের জয় হোক! আমি দেখে এসেছি এবার মুসলমানরা আগের চেয়ে অধিক আসছে। শুনেছি এদের কামান্ডাররা নাকি অনেক জ্ঞানী।যুদ্ধে অনেক পারদর্শি।
রাজা দাহির বিদ্রুপের হাসি দিল। সাথে উজিরও। বলল দেখনা ওদের মরার কি শখ উঠেছে। দু চারটা যুবতী বাচাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রান দিচ্ছে।আরে এরা ও তো পৃষ্ট প্রদর্শন করবে।প্রথম দেখাতেই মৃত্যুর পানি পান করে নেবে।
তবে বুূদ্ধিমান উজির হাসলনা।সে বলল রাজা বেশি হাসবেননা।যদি এ কামান্ডার হাজ্জাজ নিজে হয়ে থাকে।তাহলেতো আমাদের ধ্বংশ অনিবার্য হয়ে যাবে।
ওর যুদ্ধে পারদর্শিতা এত বেশি যে।তার জাতির মাঝে ও এমন কেউ নেই যে ওর বুদ্ধিতে পেরে উঠবে।
রাজা দাহির বুদ্ধিমান উজিরের কথা শুনে।তার হাসি যেন আরও বেড়ে উঠে।সে বলতে থাকে।বুদ্ধিমান উজির আজ দেখি হাজ্জাজের নাম শুনতেই তোমার বুদ্ধিলোপ পেয়ে গেল।আমি তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করছি যে ওরা পৌছার আগেই মৃত্যুর কোলে ডলে পড়বে।
এদিকে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম আর সৈন্য। চাচার পাঠানো সৈন্যের সাথে যোগ করেন।রওয়ানা হন প্রথমেই ডাবেলের দিকে।
তবে এই বুদ্ধিমান তরুন কামান্ডার। প্রথম যাত্রাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন।
তিনি ডাবেলে যাওয়ার প্রধান রাস্তা ছেড়ে। জাহাজের নাবিককে বললেন অন্য পথে চলতে।আর একদলকে পাঠিয়ে দিলেন অশ্ব দিয়ে। চলতে লাগলেন ডাবেলের দিকে।যতই এগুচ্ছেন ততই যেন মুজাহিদদের জযবা বেড়েই যাচ্ছে।
(পরবর্তি পর্ব পেতে দ্রুত লাইক কমেন্ট করে থাকুন সাথে)
(১৭তম পর্ব)
সবসময় দিতে থাকলেন আল্লাহু আকবারের ধ্বনি।প্রতিটি আওয়াযে মনে হচ্ছে সকল বস্তুই যেন দিচ্ছে তাদের জয়ো ধ্বনি।সকল কিছুই যেন তাদের অনুকুলে।মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমের মত তরুন কামান্ডার পেয়ে যেন তারা আরো বীর বাহাদুর হয়ে উঠেছে।বয়স মাত্র সতের হলে কী হবে।তারা সম্মান দিতেছেন তাদের সবার প্রধানের মত করে। যেভাবে দেওয়া হয়ে থাকে।
তারা করেনি কেহ তার কথার একটু ও বরখেলাফ।সবাই যেন তার অনুগত।সবাই যেন তার একান্ত বাধ্য।জাহাজ এগুতে লাগল।এদিকে হিন্দু সৈন্যরা ডাবেলে যাওয়ার প্রধান পথে। মুসলমনকে শেষ করে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল।মনে করছিল তারা।এইবারতো শেষ হবে মুসলমান।আর কখন ও এমুখ হওয়ার সাহস করবেনা তারা।মনে মনে কত স্বপ্নে দেখছে।দেখছে এই অভিযান দ্রুতই শেষ করে হামলা করবে আরবে।খুন ধর্ষন করবে ইচ্ছামত। আর কত কি।
এদিকে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম তাদের চোখ ফাকি দিয়ে। অন্য পথ দিয়ে হামলা করতে উদ্যত হলেন।ঠিক সময় মত অশ্বারোহিরাও তথায় উপস্থিত হল। শুরু করল তারা দুদিক থেকে হামলা।এবার হিন্দুরা এই অতর্কিত হামলা আর ঠেকাতে পারলনা।বাড়তে লাগল তাদের মাঝে মৃত্যুর সংখ্যা।অনেকেই চাইল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে । কিন্তু পারলনা। মুসলিম বাহিনী দিক বেদিক তীর ছুড়তে লাগল। পারলনা তার ঠিকতে। একটি সময় তারা পালাতে লাগল দুর্ঘের দিকে।কিছু সংখ্যক চলে গেল।সাথে সাথে বন্ধ করে দিল দুর্ঘের ফটক সমুহ।
মুসলিম বাহিনী যেই এগুতে লাগলেন।তখনি তারা ফটকের উপর থেকে তীর ছুড়া শুরু করল।আর এগুতে পারলেননা কেহ।বাড়তে লাগলো শহিদদের সংখ্যা।এভাবে যতবারই যান ততবারই সবাইকে হয় শহিদ হতে হয় নয়ত কোন অঙ্গ কাটিয়ে আসতে হয়।নারীরা তাদের সেবা সশ্রুষা করতেন।আহতদের কাটা যায়গায় পট্টি বেঁধে দিতেন।
এভাবে চলে যায় অনেক দিন।কিন্তু খোলা যায়নি একটি ফটক ও।তাই মুহাম্মদ কিছুদিনের জন্য দুর্গ অবরোধ করে রাখলেন।আসেনি কোনই ফলাফল। দীর্ঘ হতে থাকে অবরোধের দিন সমুহ।তিনি চেয়েছিলেন যাতে করে তারা পিপাসার্ত তৃষ্ণার্ত ক্ষুদার্থ হয়ে যায়।বাধ্য হয় ফটক খোলতে। তাকলেন সেইদিন আসার অপেক্ষাতে।
এদিকে বেলাল মায়ারাণীকে প্রতিদিন বলত।মায়া তুমি ওই আরব নিরপরাধ লোকদেরকে ছাড়াতে কিছু একটা করো।তুমি বলো রাজা দাহিরকে।তিনি যেন ছেড়েদেন ওদেরকে।ওরা কি দোষ করেছে।কিই বা ক্ষতি করেছে তোমাদেরকে।তুমি ভাবতে পার।আমি মুসলমান বলে এমন বলছি।তুমি নিজে একটু ভেবে দেখ।নিজের বিবেককে একটু নাড়া দিয়ে দেখ।
একটা নিরপরাধ মানুষকে তারা কি না করছে।কোন কারন ছাড়া যুবকদেরকে শিকলের বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে।ছিলে ফেলা হচ্ছে তাদের চামড়া।যুবতিদেরকে বিবস্ত্র করা হচ্ছে।করা হচ্ছে দিনের পর দিন গণ ধর্ষন।কারো বা কেটে ফেলা হচ্ছে গলা।মায়ের সামনে শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে।শিশুর সামনে মা'কে শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে।
এটা কি কোন মানুষ করতে পারে।এদের দোষ কি। এরা মুসলমান বলে। মায়া তোমায় আমাদের ভালবাসার দোহাই দিয়ে বলি।মায়া তুমি একটিবার বলনা রাজাকে।এদেরকে ছেড়ে দিতে।
মায়া কোন কথাই বলেনা।কিছুক্ষন পর বলে বেলাল তুমি তো দেখছই রাজার কাছে আমার সব কথাই চলে।আমি যা বলি তা মানে।তবে এসব বিষয়ে চলেনা আমার কথা। আমার স্বামী আমার কথা শুনেনা।আমি অপারগ।বেলাল আমি তোমার কাছে দুঃখিত।তুমি আমায় এত ভালবাসার পরও তোমার এই আবদারটা রাখতে পারলামনা।এই বলে মায়া হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।
বেলাল ভাবে সত্যিইতো রাজা যা বলছে।এ বিষয়েতো সে অপারগ।তবে কি করবে।কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা সে।চলে গেল বন্ধুদের কাছে।বসে গেল পাঁচ বন্ধু গভীর পরামর্শে।
(১৮তম পর্ব)
কেউতো কিছুই ভেবে পায়না যে ওরা এখন কি করবে।কিভাবেই বা রক্ষা করবে বন্দিদেরকে।কিছুক্ষন সবাই নিরব থাকলো।পরে বেলাল বলল যা হবার হবে।এভাবে কাপুরুষের মত বেচেই বা লাভ কি হবে।আমাদের সামনে আমার ভাই বোন নির্যাতিত নিপীড়িত হবে। এটা কিভাবে হতে পারে।আমরা আরব মায়ের সন্তান। বীর বাহাদুরদের ছেলে।
আমরা কিভাবে সহ্য করতে পারি। আমার স্বজাতির রক্ত বেয়ে যাওয়া দেখে।সবাই হাতে হাত মিলালো। দৃত্য শপথ করল তারা বন্দিদেরকে ছাড়িয়েই নিবে।নয়ত শাহাদাতের পানি পান করবে।
সবাই কুলাকুলি করে নেয়।গড়িয়ে পড়ে অশ্রু সবার চোখ দিয়ে।তবে তা খুশির না বিচ্ছেদের কেহই বলতে পারেনা। পরদিন বেলাল চলে যায়। এদেশে আশ্রিত থাকা মুসলমানদের নেতা আলফির কাছে।বলে আমি ছাড়িয়েই নিব বন্দিদেরকে।আপনি দুআ করবেন আমার জন্য।আর আপনার যেভাবেই পারেন সেভাবেই সাহায্য করুন। আরব থেকে আসা নতুন এই দলটিকে।
আলফি কথা দিলেন।বললেন তিনি যতটুকু সম্ভব করবেন সহায়তা ক্বাসিমকে।আর বললেন সাবধানে কাজ করতে।বেলাল সালাম দিয়ে চলে যায় সাথিদের কাছে।দিন চলে গিয়ে রাত এসে পড়ে।বেলাল আর তার চার বন্ধ তরবারী হাতে নেয়।ধীরে ধীরে বন্দিশালার দিকে চলতে থাকে।
চারিদিকে অন্ধকার বিরাজ করছে। আশপাশ কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।তবুও তারা চলছে।একসময় তার পৌছে যায় বন্দিদের রাখা ওই ঘরের পাশে।তারা দেয়াল চেপে চেপে হাটতে থাকে। কেহই যে দেখা যাচ্ছেনা আশপাশে।পাওয়া যাচ্ছেনা তাতে প্রবেশ করবার কোন পথ।
তাই তারা কিছুক্ষন দাড়িয়ে যায় একটি জায়গায়।দেখে উপরে রয়েছে একটি রড। তাই বেলাল লম্বা একটা রশি দিয়ে ইটা দেয়। ওই রডটিতে।আটকে যায় তাতে। প্রথমে বেলাল পরে তার সঙ্গিরা উপরে উঠে।
এবার সাবধানে চলতে লাগল তারা।হঠাৎ দেখা গেল এক প্রহরি হাতে মশাল নিয়ে আসছে তাদের দিকে।সাথে সাথে লুকিয়ে যায়। একটি খুটির পিছনে।লোকটা যখনই তাদের কাছে এলো।তখনই তারা চেপে ধরল তার মুখটা। কেটে দিল গলা।
এবার বেললার তার পোষাকটা পরে নিল।মাথায় বাঁধলো তার পাগড়ীটা।হাতে তরবারী দাড় করিয়ে চলতে লাগল সামনের দিকে।হঠাৎ দেখল আর ও এক প্রহরি এদিকে আসছে।হাতে রয়েছে মশাল। ও কাছে এলেতো দেখে নিবে। কি করবে কিছুই যে আসছেনা বুঝে।ওমনি লোকটা বলতে লাগল কেরে এখানে।
সাথিরা বেলালকে বলল।সে আমাদেরকে দেখেনিতো।বেলাল ক'দিন এখানে থাকায়। ওদের অনেক পরিবাষা শিখে নিল।সে ও বলল গলার আওয়ায কে বড় করে। হা হা হা এখানে আমিরে। আর আছিসনা এদিকে।আমি দেখছি এইদিকটা।সব দেখছি ঠিক আছে।
প্রহরিটা ফিরে যেতে লাগল। ওমনি বেলাল তার মুখটি চেপে ধরল।বেঁধে নিল পাগড়ী দিয়ে তার হাত পাঁ টি।তখনি বেলাল ওর গলায় তরবারী ধরল। বলল বলে দেয় বন্ধীরা কোথায় আছে। কোথায় রয়েছে চাবি।কোথায় কারা রয়েছে। সব বলে দেয়।তখন হিন্দু প্রহরিটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে থাকে।বলে দিচ্ছি আমি সব আমায় মেরনা।আমি প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছি তোমাদের কাছে।
বলল এই পথে আপনারা সামনে যাবেন। দেখবেন সামনে একটা গাত আছে।ওখানে রয়েছে সিড়ি। নেমে যাবেন নিচে।ওখানে গিয়ে দেখবেন একটা রুম। এখানে থাকে কয়েকটা লোক। ওদের কাছেই রয়েছে সব চাবি।তবে জেলের প্রধান জেলার কোবরা কোথায় থাকে কেউ জানেনা।এরপর এখান থেকে নিচে রয়েছে আরেকটা সুড়ুঙ্গ পথ।ওখানে রয়েছে বন্দিখানা।রয়েছে বন্দিরা।
তার এত সহজে সবকিছু বলে দেওয়াতে।বেলাল ও তার সাথি মনে সন্দেহ জাগল।বলল তুই এত জলদি এসব বললি কেমনে।তুইতো এসব মিথ্যাও বলতে পারস।তখন প্রহরিটা বলল আমার এখানে মিথ্যা বলে গলা কেটে কিই বা লাভ হবে।আমিতো এখানে এসেছি দুটা পেটে ভাত দেওয়ার জন্য।মা বাবার মুখে একটু অন্য তুলে দেওয়ার জন্য।
আমার কি বিবেক নেই।একটা নিরপরাধ মানুষকে কত কিছুই না করা হচ্ছে।আমি তা দেখে ভাবছিল ওদের জন্য কিছু একটা করতে। এখন আপনার এসেছেন আমি মিথ্যা বলে আপনাদেরকে প্রতারিত করি কেমনে।বেলাল তরবারী ওর গলা থেকে তুলে নিল।আর ওকে বেঁধে রেখে ছুঁটে চলল সামনের দিকে।বলল বন্ধু তুৃমি এখানে থাকো।আমরা তোমায় বিশ্বাস করতে পারছিনা ক্ষমা করো।কেহ আসলে তোমায় ছাড়িয়ে দিবে কখন।
বেলাল সামনের দিকে তাকালো।দেখল সত্যিই রয়েছে একটা গর্ত। তারা সবাই সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।দেখল কেউ নেই তাতে। নির নিস্তব্দ পরিবেশ।মাঝে মাঝে দেয়ালে মশাল ঝলছে। রয়েছে নানান রকমের তরবারি ক্রছ চিনহ্নের মত করে।
এগুতে লাগলো তারা বীর বাহাদুরির সাথে।মনে মনে রয়েছে যদি কেহ কোথাও লুকিয়ে থাকে।তারা দেখল সামনে একটি ঘর আছে।ভাবল হয়ত সেই ঘরটি যেটিতে চাবি থাকে।তখনি মনে পড়ল এখানে তো আর লোকজন আছে।তাই তরবারী প্রস্তুত করে। ধীরে ধীরে দরজাটা খোলল।দেখল দুইটা লোক বিছানায় শুয়ে। নেই আশপাশে চাবি রাখার চিহ্ন।
তখনি একটা লোক এপাশ থেকে ওপাশ ঘোরল।তখনি বেলাল ওদের গলায় তরবারী চেপে ধরল।ওরা জেগে উঠে কেপে কেপে বলে আমাদের মেরনা।ছেড়ে দাও আমাদেরকে।তখন বেলাল বলল ছাড় পেতে হলে আগে চাবি দেয় আমাদের হাতে।
তখন লোকগুলা একটা ওয়ালের দিকে হাত বাড়ায়। সেখান থেকে একটা পাথর সরায়। বের করে একটা চাবি।অতঃপর তার চলে একটা দেয়ালের দিকে।দেখে তারা ওই চাবিটি দেয়ালের একপাশ দিয়ে প্রবেশ করছে।খোলছে দরজাটা। তারা অবাক হয়ে গেল এমন কোন জায়গা হতে পারে তারা কল্পনাই করতনা।
অতঃপর দেয়ালটা সরে গেল। বের হল শত শত চাবির ঝোটা।ওখান থেকে বাছাই করে কয়টা চাবি দিল তাকে।বলল এগুলোই জেলের চাবি। এবার আমাদেরকে ছেড়ে দিন। বেলাল ওদের পাগড়ী খোলে ওদের হাত পাঁ বেধে ওই রুমে ফেলে রেখে।হাটতে থাকে ওই বন্দিশালার দিকে।
সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই। বন্দি মুসলিমরা চিৎকার ঝোড়ে দেয়।তারা মনে করেছে।হয়ত জেলার এসেছে।না জানি কোন শাস্তি এখন দেওয়া হবে।বেলাল তাদেরকে শান্ত করে দিয়ে বলল।আমরা তোমাদের বন্ধু। তোমাদের নিতে এসেছি।তোমরা ভয় পেয়না।আমি দরজা খোলব। তখনি সবাই বেরিয়ে পড়ো।যদি কেহ আসে তাহলে আমরা সবাই আমরন লড়াই করে যাবো।হয়ত মরব তার আগে লড়াই করে যাব।এই বলে বেলাল একটা তালা খোলার জন্য চাবি প্রবেশ করল।
(১৯তম পর্ব)
কিন্তু তালা যে খোলছেনা।বেলাল ভাবল হয়ত এই তালার এই চাবি নয়।তাই প্রবেশ করল তাতে আরেকটি চাবি। কিন্তু না কিছুইতো খোলছেনা। এভাবে প্রতিটি তালা দেখে নিল।খোলতেই পারলনা।তাহলে কি ওই হিন্দু প্রহরিটা অন্য কোন চাবি দিয়ে আমাদেরকে ধোঁকা দিল।
বেলাল তা বুঝতে না বুঝতেই। পিছন থেকে একটা অট্ট হাসির শব্দ এল।তারা পিছন তাকাতেই দেখে।ওই হিন্দুটা যে বলে দিয়েছিল এখানে আসার পথ।সে দাড়িয়ে আছে।সে যেন তাদেরকে ব্যঙ্গ করে হাসছে।বলছে বন্ধু তুমি সত্যিই বলেছিলে কেউ আমায় ছাড়িয়ে দিবে।
বেলাল দেখল ওর পাশে কাল আর একটা লোক দাড়িয়ে আছে।বুঝাই গেল এ জেলার কোবরা হবে।বেলাল বলল আমি জানতামই কাফিররা বেইমান প্রতারক হয়ে তাকে।ভালই হল তোমরা এখানে এসে।আর তোরা ফিরে যেতে হবেনা ঘরে।এখনই তোদেরকে দোযখে পাঠাব।
এই বলে বেলাল একটা তীর ছুড়ল।গা বিদ্ধ হল একটা প্রহরির গলায়।প্রহরিটা সিড়ি থেকে আছড়ে নিচে পড়ল।তখন বেলালের সাথিরা তারাও সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।ওমনি একটা বর্শা বেলালের সাথির পিঠে প্রবেশ করল।সাথে সাথে তার ভড় বের হয়ে শহিদ হয়ে গেল।দেখতে না দেখতেই আরেক সাথির গলা কেটে।মাটিতে পড়ে গেল।এবার বেলাল আর তার বাকি তিন বন্ধু জীবন পন লড়াই করে যেতে লাগল।কিন্তু ওরা শত শত হিন্দু প্রহরিদের সাথে পেরে উঠলনা।শাহাদাত বরন করল তার অন্যান্য তিন সাথিরাও।
এবার তারা বেলালকে বন্ধি করে নিল।নিতে লাগল একটা রুমে।তাকে টেনে হেচড়ে।এদিকে বন্দিরা হে আল্লাহ তুমি সাহায্য করো বলে ফরিয়াদ করতে লাগল।
বেলালকে মেঝেতে শুইয়ে রাখল।তার সারাটি দেহ রক্তাক্ত হয়ে আছে।কোবরা তার হাত পা দুটিই বেধে নিল।এবার কোবরা বসল একটা চেয়ারে। আর পা রাখল বেলালের বুকে।বলল বল তোর সাথে আর কারা আছে। তুই এখানে আসতে কে পরামর্শ দিয়েছে।বেলাল কিছু বলেনা।
কোবরা তাকে পেঠাতে লাগল।ভেঙ্গে দিল তার একহাত।তবু বলল না কারো কথা।বলল শুধু আমাদের সাথে আর কেউ ছিলনা।তখন কোবরা প্রহরিদেরকে বলল একটা তক্তা আনতে।সাথে আনতে একটা রড।প্রহরি তক্তা এনে তার হাত পা তাতে বেধে নিল। তখন কোবরা শুরু করল রড দিয়ে তার পায়ে বাড়ি।তবুও বেলাল কিছু বলেনা।বলে শুধু আমাদের সাথে কেউ ছিলনা।আমরা এখানে এসেছি একা।শুধু ঈমানের তাগিদে।আমার নিরপরাধ মুসলিম ভাই বোনদেরকে বাচাতে।
এবার কোবরা ব্যর্থ হয়ে। তাকে উপুড় করে পাকায় টানা হেচড়া শুরু করল।এতে বেলালের দেহের সমস্ত চামড়া ছিলে গেল। থোতলে গেল তার মুখের চাড়া গুলো ও।এভাবে তার উপর নির্যাতন সারাদিন চলল।
রাতে তাকে এক অন্ধকার ঘরে।রডের সাথে তার হাত পা টানিয়ে রাখা হল।দেখা গেল তাতে রয়েছে রডের সাথে বাধা মানুষের কঙ্কাল।রয়েছে পচতে থাকা অনেক মৃত মানুষ ও।সাথে রয়েছে কাচা কাচা মানুষের রক্তের গন্ধ।রাত যতই গভীর হল। পোকা মাকড় এসে তার দেহে বাসা বাধতে লাগল।
অনেক পোকা তার নাক দিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল।এভাবেই কেটে গেল সারাটিরাত।এতটাই কষ্ট অনুভূত হল যেন যদি মৃত্যু এসে যেত হয়ত কিছুটা মুক্তি হত।সকাল হয়ে গেল। তাকে কোবরার কাছে টেনে টেনে নেওয়া হল।শুরু হল সেই পুর্বের নির্যাতন।কিন্তু বেলালের মুখেতো একি কথা।
তা জানানো হল রাজা দাহিরকে।পাশে দাড়ানো মায়া রাণীও মাথা নিচু করে।দাহির বলল দেখেছ মায়া। তোমায় বার বার বলছিলাম মুসলমানদেরকে বিশ্বাস না করতে।এবার হলতো।
দাহির খবর নিয়ে আসা লোকটিকে বলল।যদি আজও বেলাল কিছু না বলে।তাহলে কাল জল্লাদকে বলো ওর গলা কেটে দিতে।কোবরা যখন তা জানল।তখন তার সর্ব শক্তি দিয়ে নির্যাতন শুরু করল।তবুও বেলাল কিছু বললনা।তাই পরদিন তার গলা কাটা হবে বলে জল্লাদকে জানিয়ে দিল।
পরদিন তখন বেলা দুপুরের সময় কোবরা আসল।বলল বেলাল এবার তোমার গলা কাটা হবে। মৃত্যুর আগে যা চাও বলো। আমি নিজে তা পুর্ন করব।তখন বেলাল বলল আমায় ছেড়ে দাও।তখন কোবরা বলল না না বেলাল এটা হতে পারেনা।তুমি জাননা রাজা বলছেন।তোমার গলা কেটে দিতে। তা কি আর অমান্য করা যেতে পারে।
এছাড়া কিছু বলো।তখন বেলাল বলল।মায়াকে বলো আসতে।মৃত্যুর পর্বে একটি বার চাই ওকে দেখে নিতে।কোবরা মায়ার কাছে খবর পাঠালো।মায়া খবর শুনে আসার জন্য প্রস্তুত হল।তবে পাগলের মত নয়। বরং সেজে গুজে গায়ে পাতলা নেটের একটা কাপড় পড়ে।যা মাটির সাথে লেগে লেগে যাচ্ছিল।দেখেই বুঝা যাচ্ছিল কোন রাণী আসছে।
পিছনে ছিল অনেক দেহ রক্ষি বাহিনী।প্রবেশ করল সে বেলালের রুমে।বেলাল তাকে দেখে বলল মায়া তুমি এসেছ। আমি জানতাম তুমি আসবে আমার কাছে।দেখনা ওরা আমায় কি করেছে।তুমি আমায় ছাড়িয়ে নাও এখান থেকে।তুমি বললেই ওরা ছেড়ে দিবে।এই বলে বেলাল মায়ার কাছে ভালবাসার দাবি করে প্রাণ ভিক্ষ চাইতে লাগল।এই কয়দিনের নির্যাতনে ওর মস্তিস্কে কিছু অসুবিধা হতে ছিল।তাই সে মৃত্যুকে ভায় পেতে লাগল।
মায়া কাছে এল। বলল ওগো প্রিয়তম।বলে দওনাগো তোমার সাথে আর কে কে ছিল।বেলাল বোঝে নিল এটা মায়ার নতুন কোন চাল।তাই সে বলল না গো আর কেউ ছিলনা আমাদের সাথে।তুমি তো সব কিছুই জানো।তখন মায়া অট্ট হাসি দিল। বলল কি রে বেলাল তুই কি এতকাল ধরে ভেবেছিস।আমি তোকে ভালবাসি।আরে এসব তো আমার দেহের যৌন ক্ষুদা মেটানোর জন্য অভিনয় করেছি।
আরে আমি যদি তোকে ভালই বাসতাম তবে তো হয় আমি মুসলমান হয়ে তোকে বিয়ে করতাম।নয়ত তোকে হিন্দু বানাতে চেষ্টা করতাম।এখন বয়স অনেক হয়ে গেছে।যাও এখন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করো গিয়ে।এই বলে মায়া চলতে লাগল।তখন কোবরা বলল মায়ারাণী কি করব ওকে।মায়া বলল ওর গলা আলাদা করে দাও গিয়ে।
বেলালকে নেওয়া হল জল্লাদের কাছে। হাত পা বাধা হল।মাথাটা রাখা হল।একটা পাথরে।
(২০তম পর্ব)
জল্লাদ তরবারী একবার বেলালের গলায় ছোঁয়ে উপরে তোলল। পরে এক কোপে আলাদা করে দিল মস্তক তার দেহ থেকে।পড়ে গেল মথাটা মাটিতে।দু চোখ উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন সে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।আল্লাহর কাছে যেতে।
পরে তার গলাটা একটা প্রহরি তার চুল ধরে লটকি লটকি নিয়ে আসে বাহিরে।ফেলে দুর একটা জঙ্গলে।এদিকে রাজা দাহির আলফিকে ডেকে পাঠালো। চাইল আলফিকে ক্বাসিমের বিরোদ্ধ যুদ্ধে লাগিয়ে দিতে।
আলফি আসলেন।হাজ্জাজ বলল দেখ আলফি তোমরা অসহায় ছিলে।আমরা আশ্রয় দিয়েছি।দিয়েছি থাকার জায়গা।আজ আরব বাহিনী আমাদের উপর হামলা করছে।তোমরা এসবদেরকে কি উড়িয়ে দিতে পারনা। আলফি একটু হেসে নিলেন। বললেন দাহির তুমি এটা কিভাবে কল্পনা করলে।তুমি আমাদের আশ্রয় দিয়েছ ঠিক। তবে এর বদলা বহু আগে দিয়ে দিয়েছি।মনে নেই রাজা রামায়নের সাথে যুদ্ধের কথা।সেদিনতো আমরা একাই লড়েছি।যদি আমরা সেদিন এগিয়ে না যেতাম। আজ আপনি এখানে নয়।মৃত্যুর শরাব পান করতেন।
তাই এর দোহাই দিয়ে লাভ নেই।মানি আমরা বিদ্রোহি। বর্তমান খেলাফতের আমরা বিরোধি।তবে মুসলমানদের বিরোধি নই।এরা আমাদের স্বজাতি।আমার ভাই আমার বোন।এদের বিরোদ্ধে কিভাবে তরবারী ধরি।
তবে এটা করতে পারি।তোমাদের বিরোদ্ধ আমরা তরবারী ধরতে না পারি।আমরা থাকব নিরপেক্ষ।যে জয় পাবে আমরা তাদের উপর খুশি।এই বলে আলফি চলে গেলেন।রাজা দাহির আলিফর কাছে ব্যর্থ হল।বলল আলফিকে নজরে রাখতে।
এদিকে আলফি সকল খবর জানিয়ে দেন বীর মুহাম্মদকে।মুহাম্মদ কয়েকজন সৈন্য পাঠিয়ে দেন আলফিদেরকে পাহারা দিতে। যাতে কোন শত্রু তাদের কিছু না করতে পারে।
রাজা দাহির উজিরকে বলল।এদেরকে কিভাবে ধ্বংশ করা যাবে।বুদ্ধিমান উজির বলল।মহারাজ শুধুই নারী।নারীই পারে এদেরকে ধ্বংশ করতে।পুর্বেকার যতই বিপর্যয় এসেছে।সবিই নারীর চক্রান্তে হয়েছে।রাজা বলল কিন্তু কিভাবে।উজির বলল।এসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেননা। সুযোগ মত আমিই এর ব্যবস্থা করব।
এদিকে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম ডাবেলের অবরোধের একমাস হয়ে গেল।কিন্তু তাদের মাঝে কোনই পরিবর্তন দেখলেননা। আবার ও শুরু করবেন যুদ্ধ তাই সৈন্যদেরকে প্রস্তুত হতে বললেন।তবে এই যুদ্ধ আগের মত না।হবে অভিনব এক কৈশলে।
(২১তম পর্ব)
মুহাম্মদ বিন কাসিম সৈন্যদেরকে নির্দেশ দিলেন।মিনজানিক গুলাকে দুর্ঘের পাশে নিয়ে আসতে।প্রস্তুত করে নিতে ওগুলো। সৈন্যরা তাতে পাথর তোলা শুরু করল।একেক পাথর তোলতে প্রায় পাচ ছয় শত মানুষের প্রয়োজন পড়ে। টানা হয় মিনজানিকে রশি গুলা।সাথে প্রস্তুত করা হয় সবচেয়ে বড় মিনজানিক উরুস ও।
প্রথমে ক্বাসিম একটা দলকে আগের মত করে আগে পাঠালেন। কিন্তু হিন্দু সৈন্যরা প্রস্তুত থাকায়।সামনে যাওয়া গেলনা।শুরু করল তারা তীর বর্ষন।অনেক আহত নিহত হলেন মুসলমানরা।তাই এবার ব্যবহার করতে ইচ্ছা করলেন মিনজানিক।নির্দেশ দিলেন মিনজানিক চালকদেরকে তা চালাতে।কিন্তু যেই কেউ উঠতে যাবে। তখনি হিন্দুরা তীর ছুড়ে মারে।শহিদ হয়ে যান মিনজানিক চালকরা।
অতঃপর একদলকে বলা হল মিনজানিকের সামনে চলে যেতে।ওরা চলে গেল।যখনই তারা তীর নিক্ষেপ করত তখনি অগ্রগামী মুসলিম সৈন্যরা ডাল দিয়ে প্রতিহত করতো।
রইলনা মিনজানিক চালাতে কোন বাঁধা।শুরু করলেন দুর্ঘের ভিতর পাথর বর্ষন।ভেঙ্গে যেতে লাগল ঘর বাড়ি।নারী পুরুষ সবাই চিৎকার দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল।যোগ দিল তারা হিন্দু সৈন্যদের সাথে।
তাই এবার হিন্দু সৈন্যরা দুর্ঘের একটা ফটক খোলে সামানে আসার চেষ্টা করল।কিন্তু এতে মুসলমানরা তাদেরকে ফিরিয়ে দিল।এভাবে তারা আসা যাওয়া করতে লাগল।ক্ষতি হতে লাগল উভয় দলের ব্যাপক হারে।
এবার হিন্দুরা এগিয়ে এল।তখনি ধরে ফেলেন ওদের এক সৈন্যকে জেন্ত।তখন তাকে আনা হয় মুহাম্মদের কাছে।তাকে বললেন বল এতদিন ধরে তোরা কেন পিছু হটছনা। তোদের সংকট আসার পরও কিসে তোদের শক্তি যোগান দিচ্ছে।
তখন হিন্দুটা মৃত্যুর ভয়ে বলতে লাগলো।আপনাদের পাথর বর্ষনে শহরে অনেক ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই।তবে বাড়ছে আমাদের সৈন্যের সংখ্যা কারন এখানের হিন্দুরা বিশ্বাস করে। ওই মন্দিরের উপরের পতাকাটি যতদিন থাকবে ততদিন কিছুই হবেনা তাদের।কেহ ধ্বংশ করতে পারবেন ওদেরকে।তাদের এই বিশ্বাস দিন দিন তাদেরকে আত্মবিশ্বাসি হয়ে পড়ছে।যেন অজানা কোন শক্তি তাদের দেহে আসছে।যদি ফেলা দেওয়া হয় পতাকাটা। তাহলে এখানেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।
এবার মুহাম্মদ সবচেয়ে মিনজানিক চালাতে পারদর্শি ব্যক্তিকে ডাকলেন।বললেন ওই যে মন্দিরের উপর পথাকা দেখা যাচ্ছে। ওইটাকে তোমাকে ফেলে দিতে হবে।যদি পারো দশটার ভিতর ফেলতে।তবে তোমায় উপহার স্বরুপ দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে।লোকটা বলল তাই হবে।তবে আমার দশটা লাগবেনা হে বীর মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম।আমিতো তিনটি মেরেই গুড়িয়ে দেব।মুহাম্মদ তাই যেন হয়।
উরুসকে রেডি করা হল।তাতে পাথর তোলা হল।একেকটা পাথর তোলতে লাগল সাত আট শত মানুষ।এবার লোকটা উরুসকে গোরিয়ে মন্দির মুখা করল।কতক্ষন পতাকার দিকে ধরে রাখলো পাথরটাকে।সবাই চেয়ে দেখতে লাগল।অনেকেই প্রার্থনা কান্না কাটি আর সেজদায় লুটিয়ে পড়ল।প্রথম পাথর বর্ষন করা হল।পাথরটা ঠিক মন্দিরের চুড়ায় আঘাত হানলো।কেপে উঠল মন্দিরটা।মুসলমানরা দিতে থাকল আল্লাহু আকবার ধ্বানি। আকাশে বাতাসে মুখরিত হতে লাগল সেই মহান রবের বড়ত্বের বাণীটি।
শহরে শুরু হয়ে গেল লোকদের হৈ চৈ।তা বাড়তে লাগল ক্রমাগত।এবার দ্ধিতীয়টা নিক্ষেপ করা হল।তা পড়ল ঠিক পতাকার নিচে।ধসে যেতে লাগল মন্দিরটা।তবু পতাকাটা বাকি থাকল।লোকেরা বিপদ আসন্ন বিপদ আসন্ন বলে পালানোর প্রস্তুতি নিল।তখনি তৃতীয় পাথরটা এসে ঠিক পতাকা আঘাত হানলো।পড়ে গেল তাদের আত্মবিশ্বাসের সেই জায়গাটিতে।
বুঝে নিল তাদের ধ্বংশ অনিবার্য।তাই তারা দিক বেদিক ছুটতে লাগল।খালি হয়ে যেতে লাগল দুর্ঘের ফটকের স্থানটাও।সৈন্যরা পালাতে ব্যস্থ। তখনি মুসলমানরা ফটক বেয়ে উপর দিয়ে নিচে নেমে খোলে দেন দরজাটা। প্রবেশ করেন মুসলিম মুজাহিদরা।শুরু হয় তরবারী চালানো।মিশিনের মত কাটা শুরু হয় তাদের গলা।তখনি দেখলেন মুহাম্মদ এক সৈনিক এক বৃদ্ধ লোককে টেনে হেচড়ে মাঠে আনছেন।পিছনে বৃদ্ধ যুবতি কয়টা নারী চিৎকার করছে।তখন মুহাম্মদ উনাকে ডেকে আনলেন। বললেন তুমি কি জাননা মুসলমানরা কখন ও বৃদ্ধ নারী শিশুদেরকে মারেনা।এটাই আমাদের নবী সাঃ এর শিক্ষা।ছেড়ে দাও উনাকে।আর শহরে জানিয়ে দাও।আর কেউ যেন দিক বেদিক না ছোটে।কোন মুজাহিদ যেন নারী শিশু বৃদ্ধকে হত্যা না করে।যদি করে তাহলে তার গলা কাটা হবে।
শুনিয়ে দেওয়া হল এই কথা।সবাই শান্ত হতে শুরু করল।সবাই অবাক হয়ে গেল এ কোন জাতি যারা এত নিরাপদে আমাদের থাকতে দিল।আমর কত কিছুই না শুনে আসলাম এদের কথা। এরা নাকি খোন ধর্ষন ছাড়া কিছুই বুঝেনা।কই এরা তো কিছুই করছেনা।শুধুই জিযিয়া নিচ্ছে।তা ও অল্প। এমন ভাল জাতির যে কোন তুলনাই হয়না।সবাই মুহাম্মদের প্রশংসায় মেতে উঠল।
এদিকে মুহাম্মদ বন্দিদেরকে বের করতে গেলেন।সৈন্যরা তাতে প্রবেশ করল। দেখল কেউ নেই।সবাই পতাকা নিক্ষেপের পর পালিয়ে গেল।সৈন্যরা চাবি দিয়ে তালা খোলে।বন্দিদেরকে ছাড়িয়ে নিল।সবাই দৌড়ে দৌড়ে বের হতে লাগল।মুখে ছিল শুধু আল্লাহু আকবারের সেই মধুর ধ্বনি।
সবাই যখন বাহিরে এল সাথে সাথে চোখ বুঝে নিল।কারন তারা এতদিন যাবত অন্ধকারে থাকায় চোখের শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল।দুটু হাত দিয়ে তা কচলাতে ছিল।তখন মুহাম্মদ চোখের পানি ছেড়ে দুনু হাটু গেড়ে হাতদুটু বাড়ি পরম আদরে সবাইকে বুকে আসতে বললেন।
প্রথমেই মধ্য বয়সি এক মহিলার জ্যোতি ফিরে এল।তিনি আবেগের বশিভুত হয়ে বাবা বলে মুহাম্মদকে জড়িয় ধরলেন।চুমু খেলেন তার কপালে।বললেন তোরা কই দেখনা কে এসেছে।এতো আরব মায়ের যোগ্য সন্তান। এ জাতির ফেরেশতা যে।তখনি সবাই পৃথিবীটা দেখতে পেল।নারী পুরুষ শিশু সবাই তাকে জড়িয়ে ধরল।সবার চোখে অশ্রু তবে এ কোন দুঃখের অশ্রু নয়।আনন্দ ভালবাসার অশ্রু।
এদিকে তাদের এই কোলাহলের সময়। জেলের প্রধান জেলার পালাতে লাগল।সৈন্যরা তাকে মুহাম্মদের সামনে আনা হল।মুহাম্মদ তাকে বসালেন।বের করলেন চকচক করতে থাকা তরবারীটি।আর তুলে নিলেন তরবারীটা মাথার উপর। কেটে দিবেন গলা।এতদিন যাবৎ মা বোনদেরকে কষ্ট দিতে থাকা পাষানকে।
((পরবর্তি পর্ব পেতে দ্রুত লাইক কমেন্ট করতে থাকুন।কমেন্ট এজন্য করবেন যে আমি বুঝব আপনি ও আছেন আমার সাথে))
(২২তম পর্ব)
যখনি মুহাম্মদ তরবারীটি তার ঘাড়ের কাছে আনলেন।তখনি সে চিৎকার মেরে উঠে। বলে মুহাম্মদ থামো।একটিবার কিছু সময়ের জন্য আমার উপর দয়া করো।তুমি একটিবার জিজ্ঞাস করো তাদেরকে।জেলে আসার পর কি ওদের কোন কষ্ট দেওয়া হয়েছে।কোন মেয়ের কি শ্লিলতাহানি করা হয়েছে।বরং আমি তাদের মাঝে অনেক সুন্দরী তরুনীদের সম্ভ্রম রাক্ষার্থে লুকিয়ে রেখেছি।আড়াল করে রেখেছি যখন রাজা দাহির আসত।তাদেরকে জিজ্ঞাস করুন আমি কি তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেইনি।
যদি তাদেরকে বন্দি করে রাখাই আমার উদ্দেশ্য হত তবে কেন আমি পালিয়ে যাইনি।আমি চাইছিলাম একটিবার ওদেরকে দেখতে।কিভাবে মুসলমানরা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।কিভাবে করে তারা আনন্দ উদযাপন করে।
তখন মুহাম্মদ সবার উদ্দেশ্যে বললেন।লোকটা যা বলছে তা কি সত্যি। সবাই মাথা নেড়ে হ্যা সুচক জবাব দিল।এবার মুহাম্মদ তরবারীটি নামিয়ে নিলেন।বললেন কেন তুমি এমন করলে?যদি তোমার এদের প্রতি এতটাই ভালবাসা হয় তাহলে ছেড়ে কেন দিলেনা?আটকে কেন রাখলে?
তখন কোবরা বলল।সবি রাজা দাহিরের কারনে। যদি ওদের আমি ছেড়ে দিতাম। যখনি দাহির জানতো তখনি ওদের ধরে আনত।কেটে দিত ওদের গলা। সাথে আমারও।তার চেয়ে ভাল ছিল আপনাদের আসার অপেক্ষা করা।
একবার আমি রাতে পায়চারি করছিলাম।মনে মনে বললাম বন্দিদেরকে কিছু পিটিয়ে আসব।ধর্ষন করব কয়টা মেয়েকে।তখনি কি যেন এক অপরিচিত মধুর শব্দ আমার কানে ভেসে আসে। সেই আওয়াজ যেন আমায় পাগল করে তুলে।আমি চলতে লাগলাম ওই আওয়াজটির দিকে।হাটতে হাটতে দেখি আমি চলে আসি বন্দিদের কাছে।দেখি ওরা মাথা দেয়ালের দিকে দিয়ে।সবাই মিলে কাদছে আর কি যেন পড়ছে।তাদের প্রতিটি আওয়াজ যেন অজানা এক ভাল লাগা অনুভূত হচ্ছে। তখনি এক প্রহরি তাদেরকে থামিয়ে দিল।আমি বললা তাদেরকে কাছে আসতে।
কেহ এলনা। তখন এক বৃদ্ধ এগিয়ে এল।বললাম তোমরা এতক্ষন কি করছিলে।কি এমন বাণী পড়ছিলে।সবাই বলল আমরা আমাদের রবের মহা গ্রন্থ আল কোরআন পাঠ করছিলাম।চাইতেছিলাম তার কাছে সাহায্য।আমি বললাম সত্যি কি তোমাদের প্রভু তোমাদের সাহায্যের জন্য আসবেন তারা দেখলাম সবাই চিৎকার মেরে বলে হাঁ আসবেন আমাদের প্রভু সাহায্য করতে।উনি পাঠাবেন এমন একজন সৈনিক যে তোমাদের বর্বরতাকে ধ্বংশ করে দিবে।
আমি বললাম তাছাড়া তোমরা কি পড়তেছিলে।দেখলাম সবাই মিলে। কি এক মধুর বাণী পড়তে লাগল।যা আমার মন ছোয়ে গেল।পাগল করে তুলে আমিও যেন তাদের মত হয়ে যেতে।সবাই বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।আমি আর নিজে ধরে রাখতে পারিনি। মনে মনে ঠিক করে নিলাম। যদি কেহ তাদেরকে সত্যিই নিতে আসে।সেদিন আমি এই বাক্যটি পড়ে ইসলামের সু শীতল ছায়ায় এসে আশ্রয় গ্রহন করে নিব।ছেড়ে দিব এই নোংরা ধর্মকে।
তাই সেদিন থেকে আমি আমার পাপ কর্ম ছেড়ে দেই।প্রস্তুত করতে তাকি নিজেকে।এক যোগ্য যেমন হয়ে থাকে।এই বলে কোবরা কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।তা দেখে মুহাম্মদ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।মুহাম্মদের মত বীর সিপাহসালারের এমন আদর দেখে। সে প্রতিজ্ঞা করল। জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল।হে বিশ্ববাসি এধর্মের চেয়ে শান্তি ও ভাল কোন ধর্মই হতে পারেনা।আমি কোবরা তোমাদেরকে নেংরা ধর্মে ছেরে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার জন্য আহ্বান করছি।
পরে মুহাম্মদ তাকে ডাবেলের গভর্নর বানিয়ে দিলেন। কারন কোবরা শুধুমাত্র এক জেলার ছিলনা।ছিল সে একজন বড় মাপের পন্ডিত ও।এর পর মুহাম্মদ অন্য একটি শহরে আক্রমন করার জন্য ইচ্ছা পোষন করলেন।
এদিকে সিন্ধুতে বসবাস কারি মুসলিম সম্প্রদায়ের তিনজন নারী।দুর একটি জায়গায় গোসল করতে গেল।জায়গাটির চতর্দিকে ফল ফুলে ঘেরা ছিল।ছিল পাখিদের কিচির মিচির শব্দ। ছিল চতুর্দিক থেকে বয়ে আসা এক মিষ্টি বায়ু।এ এক মনোরম পরিবেশ।তাতে রয়েছে একটা ঝরনা। যেখানে এসে আরব রমনীরা গোসল করত।
কিছুক্ষন পর দেখা গেল ওই তিন মেয়ের মধ্যে দুটি মেয়ে কেঁদে কেঁদে আসছে।তাদের সারাটি দেহ আচড়ানো।ছিড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাদের কাপড়।দেখেই বুঝা যাচ্ছিল তাদের সাথে কি ঘটেছে।সবাই এক জায়গায় জামায়েত হতে লাগল।যুবকরা উত্তেজিত হয়ে গেল।বলল বোন আমাদের বলো কে এমন করেছে তোমাদের। আমরা ওদেরকে ধ্বংশ করে ফেলব।তাছাড়া ওই মেয়েটি কোথায়। যে তোমাদের সাথে গিয়েছিল।
তখন মেয়ে দুটি বলতে লাগল।আমাদের সাথে এসব মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমের পাঠানো প্রহরিরা এসব করেছে।তারা আমাদেরকে ধর্ষন করে ছেড়ে দিয়েছে।সাথে ওই মেয়েটিকে টেনে হেচড়ে নিয়ে গেছে।
কিছুক্ষন পর ওই মেয়েটি এক পা টেনে টেনে আসতে লাগলো।তার সারাটি দেহের কাপড় ছেড়া ছিল।মেয়েটি যখনই আসল ওর স্বামী দৌড়ে গেল ওর কাছে।স্বামী যেতে ওরা....বলে ফুপিয়ে কেঁদে। স্বামীর বুকে বেহুশ হয়ে পড়লো।
এদিকে আরব আশ্রিত মুসলিমরা মুহাম্মদের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে গেল।সবাই মেয়েদেরকে ঘোড়ায় তুলে আলফির কাছে নিয়ে গেলেন।সবার হাতে ছিল তীর বল্লম আর তরবারী।তারা চিৎকার করে সবকিছু বলতে লাগলো আলফিকে। আর বলল বলেন আলফি এখনি ওদেরকে শেষ করে দেব।কেটে আনব মুহাম্মদের গলা।আলফি নিরব হয়ে তা শুনলেন।আর বলতে লাগলেন।
((পরবর্তি পর্ব পেতে দ্রুত লাইক কমেন্ট করতে থাকুন।কমেন্ট এজন্য করবেন যে আমি বুঝব আপনি ও আছেন আমার সাথে)
(২৩তম পর্ব)
শুনো হে মুসলিম সমপ্রদায়। আল্লাহ আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত করুন।সত্যিই ঘটনাটা খুবি মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক।এর প্রতিশোধ আমাদের নেওয়া উচিৎ।তবে দেখতে হবে কার বিরোদ্ধে।ঘটনাটা কী।দেখা করতে হবে আমায় মুহাম্মদের সাথে।
হে আমার সমপ্রদায় তোমরা আমায় মাত্র তিনটি দিনের সময় দাও।এর ভিতর আমি মুহাম্মদের কাছে যাব।বলব ঘটনাটা কেন হল।যদি উনি বলেন ভাল হয়েছে।এই সব উনার নির্দেশে হয়েছে।তাহলে আমি খোদার ক্বসম করে বলছি।এই আলফির তরবারী মুহাম্মদের গর্দান কর্তন কারী হবে।এরপর আমার কি হবে বুঝতেই পারছ।হয়ত তোমারা আমায় দাফন করার মত দেহই পাবেনা।
তখন উত্তেজিত জনতারা প্রথমে রাজি হলনা।পরে রাজি হল।কিন্তু বেঁধে দিল মাত্র তিন দিন। এর আগে সমাধান না হলে।মুহাম্মদের গলা আমাদের হাতে হবে।আলফি মেনে নিলেন।দ্রুত চললেন মুহাম্মদের কাছে।
বললেন মুহাম্মদ এ কি শুনছি।তোমার প্রহরিরা নাকি আমার সমপ্রদায়ের মেয়েদেরকে ধর্ষন করছে।এখন এরা তোমার গলা কাটতে চাইছে।আমি হাতে মাত্র তিনদিন নিয়েছি।এর আগে কিছু করতে হবে।
মুহাম্মদ আলফি ও গোয়েন্দা প্রধান ছাকিফকে নিয়ে দ্রুত চললেন সেখানের প্রহরিদের কাছে।মুহাম্মদ প্রথমেই ওই সময়টিতে ডিউটিতে নিয়জিত থাকা তিন প্রহরিকে গরম গলায় বললেন তোমরা একাজ কেন করেছ? তোমাদের আজ গলা কাটা হবে।
তখন ওই তিন প্রহরি চেচিয়ে উঠল।বলল হে মুহাম্মদ আপনি এ কি বলেন।আল্লাহ আপনার উপর লানত দিন।আপনি আমাদের বাড়ি ঘর ছাড়িয়ে এনে।অসহায় অবস্থায় পেয়ে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।এই বলে যা ইচ্ছা তাই বলতে লাগল।যেন মনে হচ্ছে ওরা কিছুই করেনি।মুহাম্মদ আলফি ও ছাকিফকে কাছে ডাকলেন। বললেন দুরে একটি জায়গায় নিয়ে ছাকিফ তুমি ব্যাপারটা একটু তদন্ত করে দেখ।
ছাকিফ আলফি কে বললেন আপনি ওই তিন মেয়ে ও তাদের স্বামীকে এখানে আসতে বলেন।আলফি ওদেরকে আসার নির্দেশ দিলেন। তিন মেয়ের সামনে প্রহিরি সবাইকে দাড় করালেন।বললেন হে মেয়েরা তোমরা কি চিনবে তোমাদেরকে ধর্ষন করতে থাকা প্রহরিদেরকে।তখন এক মেয়ে হাতের ইশারা দিয়ে একজনের দিকে আঙ্গুল দেখালো।তাকে সবার থেকে আলাদা করা হল।এরপর দ্ধিতীয় একটা মেয়ে কিছুক্ষন সবার দিকে চোখ বুলালো।এরপর ইশারা করল একজনের দিকে। তাকে ও সরানো হলো।এরপর তৃতীয় মেয়ে একজনকে দেখালো।তাকেও আলাদা করা হল।
এবার ছাকিফ একটি মেয়েকে নিয়ে গেলেন।ওই বাগানে যেখানে ওদেরকে ধর্ষন করা হয়।তখন ছাকিফ মেয়েটিকে অভয় দিয়ে বললেন।বলো মেয়ে তোমার সাথে কোন জায়গাটিতে কিভাবে ধর্ষন করা হয়েছে।মেয়েটি কিছুই বলেনা। ছকিফ বার বার বললেন বলো মেয়ে।সে বোবার মত বসে থাকে।তখন ছাকিফ বললেন হে আলফি এ কি বোবা মেয়ে। আলফি বললেন না বরং এরা আরবের নয়। তাই আরবী বুঝেনা।এরা মুলত সিন্ধু অধিবাসি হিন্দু মেয়ে ছিল।ক'দিন আগে ওরা আমাদের তিনটা ছেলের সাথে প্রেম করে পরে মুসলমান হয়ে ওদেরকে বিয়ে করে।
তখন ছাকিফ ওর স্বামীকে ডাকলেন। স্বামী এসে দুভাষি হয়ে কথা বলতে লাগল।মেয়েটি একটি জায়গা দেখিয়ে বলল।এখানে আমায় ফেলে ধর্ষন করা হয়েছে।টেনে হিচড়ে আমায় তারা নিয়েছে।
এরপর দ্ধিতীয় ও তৃতীয় মেয়েকে ডাকা হল।সবাইকে আবার একা ডেকে নিয়ে তাদের স্বামীর মাধ্যমে ছাকিফ ধর্ষনের জায়গাটি জানতে চাইলেন।ভাল করে দেখে নিলেন সেই জায়গা গুলো।তখন ছাকিফ ওদের স্বামীদেরকে বললেন।হাঁ ওই তিনজনই ওদের ধর্ষন করেছে।এখনই তাদের গলা কাটা হবে।এই তিনি তাদেরকে সকলের সামনে আনলেন।এবং বললেন।
(২৪তম পর্ব)
হে আরব মায়ের মুসলিম সন্তানেরা।আমরা সবাই মুসলমান।আমরা সবাই ভাই ভাই।হয়ত আজ ভবিন্ন কারনে দেশ ভিন্ন হয়ে আলাদা হয়ে গেছি।কিন্তু এখনও আমাদের মধ্যে বয়ে চলছে আরব মায়ের রক্ত।আপনারা সবাই জানেন আরব সন্তানেরা গোয়ান্দা বিষয়ে কতটুকু পারদর্শি। আপনার এ ও বিশ্বাস করেন এরা পাতালে নিচে চেপে যাওয়া খবর ও বের করতে অভ্যস্থ।তাই মন দিয়ে শুনুন আমার কথা।
আমি যখন এই মেয়ে দেরকে বললাম ধর্ষনের জায়গা গুলা দেখাতে। তখন প্রত্যেকটি মেয়ে আলাদা আলাদা স্থান দেখালো।অথচ সবাই ছিল একসাথে।আমি যখন ওই স্থানটা ভাল করে দেখলাম।দেখি ওই যায়গা গুলাতে এর কোন চিহ্নই নেই।কারন একটা জায়গায় ধর্ষন হলে। জায়গাটার লতাপাতা স্বাভাবিক থাকার কথাইনা।তখন সবাই জায়গা গুলা দেখে আসলেন।সত্যিইতো এই জায়গাগুলাতে ধর্ষনের কোন চিহ্নই নেই।
এরপর ছাকিফ বললেন।তাছাড়া ওরা যে তিন জনের কথা বলল। এরাতো তখন ডিউটিতে ছিলইনা।এসব মিলিয়ে আমার প্রথমেই সন্দেহ জেগেছিল।যখন শুনলাম এরা হিন্দু ছিল।এখানে ভালবেসে বিবাহ করেছে।নিশ্চয় এরা আমাদের মাঝে ঝগড়া বাধানোর কোন চক্রান্ত করতেছে।
তখনি একটি মেয়ের স্বামী। তার চুলের খোপায় ধরে আছড়ে মাটিতে ফেলে।সাথে সাথে অন্য দুজন স্বামী ও তাদের স্ত্রীদের গলায় তরবারী ধরে। বলতে থাকে হিন্দুর বাচ্ছা বল তোমরা এখানে কেন এসেছিস। না হলে এক কোপে গর্দান কেটে ফেলব।
তখন মেয়ে গুলা অনুনয় বিনয় করে বলতে লাগল।আমাদের মেরনা সব বলে দিচ্ছি।এইবলে বলতে লাগল আসল কথা।তারা বলল অনেক দিন আগে। যখন সবাই যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্থ।রাজা দাহির কিছুতেই আটকাতে পারছেননা আপনাদেরকে।ঠিক তখনি মায়ারাণী আমাদেরকে ডেকে পাঠান।বলেন তোমারা যাও। চক্রান্ত কর গিয়ে এখানে আশ্রিত থাকা মুসলমানদের মাঝে।আর বাধিয়ে দাও মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ।যদি পারো তাহলে তোমাদেরকে বড় অংকের উপহার দেওয়া হবে।এরপর উপহারের লোভে আমরা এখানে আসি। ভালবাসার নাটক করি আপনাদের সাথে।
তা বলতেই একজন স্বামী তার তরবারীটা উপরে তুলে।যেই ওর গলায় কুপ মারতে যাবেন। তখনি মুহাম্মদ তাকে থামিয়ে দিলেন বললেন এদের মেরনা।এদের মেরে কী হবে।তার এই আচরন দেকে হিন্দু মেয়েরা মুগ্ধ হয়ে যায়।বলতে থাকে এমন ভাল কি কোন ধর্ম হতে পারে। এখানে যতদিন থেকে আসছি যতটাই দেখছি। এর চেয়ে ভাল এর চেয়ে উন্নত। এর চেয়ে সত্য কি কোন ধর্মই হতে পারে।
তাই তারা আবদার করে বসলো।মুহাম্মদের কাছে।বলল হে বীর সিপাহসালার আমরা এখান থেকে যাবনা।যাবনা এই হিন্দু নোংরা জাতির কাছে।আমরা চাই আপনাদের কাছে থাকতে।
তখন মুহাম্মদ বললেন না তোমরা এখানে থাকবেনা।চলে যাইবা ওদের কাছে যারা তোমাদেরকে পাঠিয়েছে।গিয়ে বলো মুসলমান এমন এক জাতি যারা নারীদেরকে দিয়ে যুদ্ধ বিজয় লাভ করতে চায়না।তারা নারীদেরকে ছলনা করতে ব্যবহার করেনা।তারা নারীকে মৃত্যু মুখে পতিত করেনা।এরা নারীর সম্ভ্রমকে নিজ উদ্দেশ্য হাছিল করতে ব্যবহার করেনা।
বলে দিও দাহিরকে পারলে নিজে যুদ্ধে আসতে। নয়ত পুরুষদেরকে পাঠাতে।নারীদেরকে কাপুরুষের মত না পাঠাতে।এই বলে মুহাম্মদ বললেন তোমরা এখন কোথায় যেতে চাও। আমার লোকেরা স্ব সম্মানে তোমাদেরকে সেথায় রেখে আসবে।
তারা বলল তাদেরকে শহরে দিয়ে আসতে।মুহাম্মদ ক'জন সৈন্যকে বলে দিলেন তাদেরকে শহরে রেখে আসতে। তারা চলে গেল।শহরে গিয়ে তারা চলে যায় রাজা দাহিরের কাছে।
রাজা দাহির তাদের দেখে বলে এরা কারা।তখন মায়ারানী হাসি মুখে তাদের দিকে এগিয়ে আসে বলে এরা হল ওইসব নারী যাকে আমি পাঠিয়েছি মুসলমানদের মাঝে দ্ধন্দ লাগিয়ে দিতে।দেখনা এরা সফল হয়ে এসেছে।এই বলে মায়ারানী তাদেরকে বলল এই তোরা বলনা কি করেছ সেখানে।
তখন তারা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল।তখন একজন বলল। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তবে তাদের এত তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা গিরির কাছে আমরা হেরে গেছি।দেখেছি তাদের মাঝে কেমন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন।আমরা প্রথমে বুঝতেই পারলামনা তাদের মধ্যে প্রধান কামান্ডার কে। যখন আমরা তরবারীর নিচে ছিলাম তখনি দেখি এক আটারো অথবা ঊনিশ বছরি এক যুবক আমাদের স্বামীদের তরবারী থামিয়ে।ওর নির্দেশেই আমরা এখানে বেচে আসি।আমার স্বামী বলেছেন উনার নাম নাকি মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম।হাজ্জাজের ভাতিজা।
রাজা দাহির মুহাম্মদের এত কম বয়সে এসব করতে দেখে অবাক হয়ে যায়।বলে সে কি তেমাদেরকে বলে দিয়েছে।তখন মেয়েরা আবারও একে অপরের দিকে থাকালো।একজন বলল উনি বলেছেন আপনাকে বলতে।কাপুরুষের মত যুদ্ধে নারী দের ব্যবহার না করতে।পারলে পুরুষরা মোকাবেলা করতে। সত্যিই মুসলিমরা উন্নত জাতি। এর চেয়ে সত্য উন্নত কোন ধর্মই হতে পারেনা।তা শুনে দাহির বলল এদেরকে মেরে ফেলতে। বলল এরা মুসলমানদের সংশ্রব থেকে এসেছে। তাই এরা বিগড়ে গেছে।
(২৫তম পর্ব)
মায়ারানী বলল ওদেরকে মারতে হবেনা। আমি এদেরকে পাঠিয়েছি। আমিই ওদেরকে দেখে নিবে।আমি ওদের ডেগ আলাদা করে দিয়েছি।ওরা আমার সাথেই থাকবে।
এদিকে মুহাম্মদ আরেকটা শহরে আক্রমন করার ইচ্ছা পোষন করলেন।তাই সৈন্য ও মিনজানিককে নিয়ে গেলেন ওই শহরের দুর্ঘের কাছে।ওই শহরের সৈন্যরা আগ থেকেই খবর পেয়ে গিয়েছিল।যে মুহাম্মদ তার বাহিনীকে নিয়ে আসছে।তাই তারাও প্রস্তুত ছিল।মুসলমানদের জন্য ওই শহরে প্রবেশ করা দুষ্প্রাপ্য ছিল।যখনই মুসলমানরা আক্রমন করত।তখনই তারা দুর্ঘের উপর থেকে তীর ছুড়ত।
এতে মুসলিম বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হতে লাগল।বেড়েই চলল শহিদদের সংখ্যা।তখন মুহাম্মদ যুদ্ধ অভিযান থামিয়ে দিলেন। অবরোধ করে রাখলেন শহরটিকে অনেক দিন।কিছুদিন পর হিন্দুদের মাঝে খাবারের সংকট দেখা দেয়।লোকেরা সৈন্যদের উপর চাপ দেয়।তখন সৈন্যরা ফটক খোলে এসে একদল একদল করে বের হয়ে যুদ্ধ করতে থাকে।আবারও চলে যায়।তাদের আহত হওয়া সৈন্য গুলো সেখানেই থেকে যায়।কেউ আসেনা তাদের নিতে।
এভাবেই চলল কয়দিন।তবে কোন ফলপ্রসু হলনা।তাই মুহাম্মদ ব্যবহার করা শুরু করলেন মিনজানিক ও উরুসকে।সাথে ছাড়তে থাকলেন শহরের মাঝে অগ্নি তীর ও।চতর্দিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ল।লোকের চিৎকার করে পালিয়ে যেতে লাগল।দিক বেদিক ছুঁটতে লাগল সৈন্যরা। মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম এবার সৈন্যদেরকে নিয়ে তীর ছুড়ে ছুড়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন।প্রবেশ করলেন শহরে।শুরু হল তমুল লড়াই। কিন্তু মুসলমানের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে।হিন্দুদের অন্তর আত্মাটা কেপে উঠছে।কিছু দিনের ভিতরেই শহরটা বিজিত হয়ে যায়।চলে আসে মুসলমানদের হাতে।খোজতে থাকেন মুহাম্মদ এই শহরের রাজা কা'কা কে। তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলনা।
সে নাকি পালিয়ে গেছে।যখন সবাই আমরন যুদ্ধ লিপ্ত। তখন সে তার পরিবার নিয়ে অন্য একটি শহরে পালিয়ে গেল।মুসলমানরা শুধু তাদের কাছ থেকে কিছু টেক্স নিয়ে শান্তুিতে থাকতে দিলো।হিন্দুরা মুসলমানদের এমন আচরন দেখে।পুর্বদের মত এরাও অবাক হল।মুসলমানরা কি এত ভাল।আমরা কেনই বা লড়লাম এদের সাথে।এদের গোলাম হয়ে থাকটাও অনেক সৌভাগ্য মনে করল।
সবার মুখে একি কথা ভেসে আসতে লাগল।সত্যিই এটা সত্য ধর্ম।তাই অনেক হিন্দু দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে লাগল।মুহাম্মদ কিছুদিন ততায় অবস্থান করলেন।
এরপর আবারও পার্শবর্তি শহরে আক্রমন করার ইচ্ছা পোষন করলে।তা গোয়েন্দার মাধ্যমে ওই শহরের রাজা যেনে গেল।রাজা জনগনের কথা ভাবতে লাগল।বলল এদের সাথে যুদ্ধে লেগে যেতে পারি। তবে এটা নিশ্চিত যে আমি পেরে উঠতে পারবনা।প্রজারা অশান্তিতে পড়ে যাবে।তার চেয়ে ভাল হবে। আমি রাজ্যটা তাদের হাতে তুলে দিলে।শুনেছি এরা নাকি প্রজাদেরকে মারেনা।শান্তিতে থাকতে দেয়।
কা'কা পালিয়ে অবস্থান করছিল এ শহরের রাজার কাছে।তাই সে জানতে পারলো।রাজার সিদ্ধান্তের কথা।সে রাজাকে বুঝাতে লাগল। উত্তেজিত করতে লাগল মুহাম্মদের বিরোদ্ধে।রাজা রাজি হতে চাইছিলনা কিন্তু ওর পিড়াপিড়িতে রাজি হয়ে গেল।তখন রাজা দুজন গোয়েন্দাকে বললেন। যাও তোমরা দেখে আসতো মুহাম্মদ আর তার বাহিনী এখন কোথায়।ইচ্ছা করল গেরিলা হামলা করবে।
তাই সে গোয়েন্দাদের পাঠিয়ে।মন্দিরে পন্ডিতদের কাছে চলে গেল।
এদিকে এর পার্শবর্তি শহরটা ছিল। এক বৌদ্ধ রাজার। ততায় বাস করতো অনেক বৌদ্ধ লোকেরা।তাদের রাজার নাম ছিল সুন্দরশ্রী। সে যখন শুনে মুহাম্মদ বাহিনী এদিকে আসার কথা।সে ভয় পেয়ে গেল।বলল আমরা যুদ্ধ বিদ্রোহ করিনা।
তাই আমরা তাদের সাথে শান্তি চুক্তি করে নেব।এতে অনেক লোক বাধা দিলেও রাজা তার সিদ্ধান্তে অটল রইল।অনেক লোক রাজাকে বলল।এরর জন্য আমাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।না জানি প্রভু কি শাস্তি কপালে লিখে রাখছেন।
রাজা কারো কথায় কান না দিয়ে। আরবে গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে। শান্তি চুক্তি চান বলে চিঠি পাঠান।হাজ্জা চিঠি পেয়ে চুক্তিটি মেনে নিলেন।তখন হাজ্জাজ আরেকটা চিঠি লিখে পাঠান মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমের কাছে।চিঠিতে লেখাছিল।
(২৬তম পর্ব)
প্রিয় বৎস!সত্যিই আমি তোমার এই অভিযানের কথা শুনে আনন্দিত। আমি অনেক গর্বিত তোমার মত এক বীর বাহাদুর আমাদের বংশে জন্ম নেওয়ার জন্যে।
কিছুদিন আগে সিন্ধু এর একটি শহরের বৌদ্ধ রাজা সুন্দরশ্রী।আমার কাছে শান্তি চুক্তির জন্য আবেদন করছেন।তাই সেথায় যুদ্ধ ছাড়াই প্রবেশ করতে পারো।তবে তুমি তাদের হেফাযতের ব্যবস্থা করো।
প্রিয় বৎস!তোমার বিজয়ী বার্তা শুনে আমরা অনেক খুশি।আমরা আশা করি আল্লাহ তোমায় সবকয়টি বিজয় দিবনই।আমরা রাজা দাহিরের মাথাটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
তুমি সারাদিন যুদ্ধ করে যখন রাত্রে বিরতি গ্রহন করো।তখন সৈন্যদের মধ্যে দুদলে ভিবক্ত করে দিও।যারা কোরআন পড়তে পারে তাদেরকে কোরআন পড়তে বলিও। আর যারা তা পারে না তারা শুধু যিকিরে ব্যস্থ করে দিও। সারারাত যেন ইবাদত বন্দেগিতে কাটতে থাকে।দেখবা ইনশাআল্লাহ! আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে।
মুহাম্মদ চিঠিটা পড়ে। চারজন বীর নৌজোয়ানকে পাঠিয়ে দেন সুন্দরশ্রীর হেফাযতে।এদিকে রাজা দাহির সুন্দরশ্রীর শান্তি চুক্তির কথা শুনতে পারে। তাই সে সুন্দরশ্রীকে মুসলমানের বিরোদ্ধে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু তার সে চেষ্টা গুলি ব্যর্থ হতে থাকে। তাই সে সুন্দরশ্রীকে হত্যার চেষ্টা করল।কিন্তু মুসলিম সেই চার নৌজোয়ানের বুদ্ধি মত্তার কারনে বেচে যায়।
এদিকে ওই দুই গোয়েন্দারা মুসলমানদের অবস্থান দেখে চলে যায় রাজার কাছে।রাজাকে গিয়ে সব কিছু বলে।তখন রাজা পন্ডিতদেরকে বলে। আপনারাই বলে দিন কিভাবে? কি করলে আমার সৈন্যরা ওদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারবে।
তখন পন্ডিতরা পুজা আর্চনা শুরু করে দিল।চলে গেল অনেক সময়।শুরু হল ঘন্টার আওয়ায।যতই সময় যেতে লাগল। পন্ডিতদের পুঁজা করা বেড়ে যেতে লাগল।সবাই চোখ বুঝে।মুর্তি গুলোকে প্রনাম করতে লাগল।
হঠাৎ এক পন্ডিত সারা শরীরে লাল রং মেখে নিল। বলল বলি বলি চাই।দেবির জন্য এক কুমারী বলি দিতে হবে।তবেই বীজয় আসবে।রাজা বলল তাই হবে।
কিছুক্ষন পর এক কুমারী মেয়ের মথা কেটে আনা হল।পন্ডিত মেয়েটির মাথাটিকে একট কাটে রাখলো।বলল সৈন্যদেরকে জামায়েত করে।হে সিপাহিরা এই দেখ তোমাদের বিজয়ের জন্য এক কুমারী মেয়ের বলি দেওয়া হয়েছে।দেবি বলছেন তোমাদেরই বিজয় হবে।
তাই আমি এখন ওই কুমারী মেয়ের মাথাটি ঝিলে ফেলে দেব।তোমরা ওই ঝিল থেকে এক চিল্লু করে পানি পান করবা। ফেলে দেওয়া হয় ঝিলে।মেয়েটির মাথাটা।সৈন্যরা সেখান থেকে পানি পান করে।
এরপর তারা সারিবদ্ধ ভাবে মুসলিম বাহিনীদের দিকে আসার জন্য প্রস্তুত হয়।তখন ওই মেয়েটির রক্ত রাস্তায় ছিটিয়ে দেওয়া হয়।তখন পন্ডিত বলল এবার তোমরা ওই রক্তকে পদদলিত করে যাও।সবাই মেয়েটির রক্তের উপর দিয়ে চলতে লাগল।তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। মুসলমান বাহিনীকে দেখে আসা ওই লোক দুটি।
এদিকে এই শহরের রাজা ও কা'কা শহরের প্রধান ফটকে পায়চারি করতে লাগল।অপেক্ষায় থাকল সৈন্যরা মুহাম্মাদের মাথা নিয়ে আসার।যতই সময় যায় রাজার অস্থিরতা ততই যেন বেড়েই চলছে।
কারন হামলাটা রাত্রের মাঝেই করতে হবে।শেষ করে দিতে হবে মুসলিম বাহিনীকে।রাজা বার বার কা'কা কে জিজ্ঞাস করছিলেন। এরা কি পারবে। মুহাম্মদের মাথাটা কি ওরা আনতে পারবে।তখন কা'কা রাজাকে শান্তনা দিল।বলল দেখনা ওরা পারবেই পারবে।
(২৭তম পর্ব)
রাত্র অতিবাহিত হয়ে সকাল হয়ে গেল।এখন ও সৈন্যরা ফিরে আসার খবর নেই।রাজার অস্তিরতা বেড়েই গেল।নাজানি এদের কি হল।
হঠাৎ দেখা গেল ধুলু বালি গুলো উড়ছে।অশ্বদের খোরের শব্দ আকাশ বাতাস একাকার করে দিচ্ছে।বুঝাই গেল সৈন্যরা আসছে।কা'কা আনন্দিত হয়ে চিৎকার করে বলে।রাজা এইতো বীর বাহাদুররা আসছে।দেখবে ওদের হাতে মুহাম্মদের মাথা থাকবে।এই বলে রাজা ও কা'কা কিছু এগিয়ে গেল তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে।
কিছু সময়ের ভিতরেই সৈন্যরা শহরের প্রধান ফটকে এসে পৌছল।সৈন্যরা তাদের ঘোড়াদেরকে থামিয়ে মাথা নিচু করে রইল।রাজা বললেন কোথায় মুহাম্মদের মাথাটা।তোরা একটু আমায় দেখা।দেখে নেই একটু এই বীর বাহাদুরকে।যে তার শির কাটাতে সিন্ধুতে এসেছে।
সৈন্যদের মুখে কোন কথাই ফুটে উঠেনা।সবাই নিরব হয়ে মাথা নিচু করে আছে।রাজা বুঝে নিলেন এরা পারেনি।তবে এদের মধ্যেতো হামলা করার কোন চিহ্নই দেখছিনা।দেখছিনা তাদের মধ্যে কোন আহত কিংবা নিহত।তবে কি এরা হামলাই করেনি।জিজ্ঞাস করলেন কামান্ডারকে।বললেন কি হয়েছে তা স্পষ্ট করে খোলে বলতে।
তখন কামান্ডার বলল। মহারাজ আমরা চলতে ছিলাম একটা জঙ্গল দিয়ে। আমাদেরকে পথ দেখাতে ছিল। আপনারই বলে দেওয়া সেই দুই গোয়েন্দা লোকটি।আমরা তার পিছু চলছিলাম।হঠাৎ ওরা বলে উঠে। ইশ!! আমরাতো পথ হারিয়ে ফেলেছি।চলে এসেছি অন্য এক পথে।আমাদেরকে তো অন্য একটি পথে যেতে হবে।
এভাবে চলতে চলতে ভোর হয়ে গেল।কিন্তু মুহাম্মদের বাহিনীকে দেখতেই পারলামনা।তাই সকাল হয়ে যাওয়ায়। নিরাশ মনে ফিরে আসি আপনার কাছে।রাজা রেগে গিয়ে বললেন।কোথায় সেই দুই গোয়েন্দরা। কামান্ডার বলল।এরাতো ভোর হওয়ার পর থেকেই কোথায় যেন চলে গেছে।আমরা আর তাদের কোন খোঁজ পাইনি।হয়ত এরা আমাদের সাথে কোন প্রতারনা করেছে।
রাজা এসব শুনে রেগে গিয়ে।তার নতুন তরবারীটা বের করেই।এক কুপে কামান্ডারের মাথাটা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।মাথাটা ঘোড়ার উপর থেকে নিচে পড়ে যায়।রক্ত গুলা চতর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।তখন রাজা বলল।এই কাপুরুষের মাথাটা ওই মেয়ের মাথার মত ঝিলে ফেলে দিতে।একজন সৈন্য এসে মাথাটা ফেলে দিল ঝিলে।
রাজা রেগে গিয়ে রাজা ও পন্ডিতদের মাথা গুলা কাটতে চাইলেন।ততক্ষনে তারা কোথায়ে যে পালিয়ে গেছে। কোন খোঁজই পাওয়া গেলনা।
এদিকে ওই দুই গোয়েন্দা মুহাম্মদের কাছে চলে গেল।বলল আমরা অমুক শহর থেকে এসেছি।আমরা তাদের গোয়েন্দা ছিলাম।ওরা আপনাদের উপর গেরিলা হামলা করানোর জন্য আমাদেরকে মোতায়ন করা হল।
আমরা সৈন্যদেরকে নিয়ে আপনাদের কাছে আসতে লাগলাম। আমাদের ইচ্ছা ছিল।রাত্রেই এসে আপনাদের উপর অতর্কিত হামলা করব।কেটে নিব আপনার মাথা।কিন্তু আমরা যখন আপনাদের দলের কাছে পৌছলাম তখনই আমরা দুজন কিছু অগ্রে তাকায় শুনতে পাই।কি এক মধুর বাণী সবাই পড়তেছে।সাবাই মহান রবের যিকিরে মত্ত রয়েছে।কি এক জান্নতি পরিবেশ বিরাজ করছে।আকাশে বাতাশে শুধু কি মধুর বানী যেন মুখরিত হচ্ছে।
আপনাদের প্রতি আমাদের বিদ্ধেষ দুর হয়ে।তাতে মুসলমান হয়ে যাওয়ার প্রতি আগ্রহটা জায়গা করে নিল।বলতে লাগলাম এটাইতো সত্য ধর্ম। এটাই উত্তম ধর্ম। এটাইতো শ্রেষ্ট ধর্ম।
আমরা এতদিন থেকে কি এক নেংরা ধর্মে রয়েছি।যে ধর্মে রয়েছে শুধুই কু সংস্কার আর নোংরামি।তাছাড়া আমরা নিজ চোখে দেখেছি। সেই কুমারী মেয়েটার মা-বাবা ভাই বোনদের চিৎকার। যাকে এই সৈন্যরা আপনার মাথা কাটা হবে বলে জোর করে বলি দেওয়া হয়েছে।এটাতো নিকৃষ্ট ধর্ম।ইসলামই শ্রেষ্ট ধর্ম। আল্লাহর মনোনিত ধর্ম।এই বলে তারা দুজন। কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে যায়।
এরপর তারা বলতে থাকে।আমদের অন্তরে যখন হেদায়ত চলে আসে। তখন আমরা তাদের বলি। আমরাতো পথ ভুলে গেছি।তাদের নিয়ে যাই অন্য পথে।আপনার টিলাটির নিচে থাকায় ওরা আর দেখতে পেলনা।চলতে লাগল আমাদের পিছু পিছু।শেষ পর্যন্ত সকাল হয়ে যায়।ওরা আপনাদেরকে না পেয়ে চলে যায় শহরে।আর আমরা পালিয়ে চলে আসি আপনার কাছে।পরে তারা বলল মুহাম্মদ আমরা ইসলামের তরে আমাদের প্রাণ বিলিয়ে দিতে পারি।বলো মুহাম্মদ আনাদের এখন কি করতে হবে।
(২৮তম পর্ব)
তখন মুহাম্মদ তাদের ইমানি জযবা দেখে বললেন।এতো আমাদের কোন কর্তুত সবিই তো মহান রবের সাহায্য।এরপর মুহাম্মদ তাদেকে বললেন তোমাদের বেশ কিছু করতে হবেনা।শুধু বলো শহরের কি অবস্থা। রাজা আমাদের বিরোদ্ধে এবার কি প্রদক্ষেপ নিতে পারে।
তখন তারা বলল।রাজা এখন আর কি করবে।সে তো প্রথমেই তার রাজ্যকে আপনার হাতে ন্যস্ত করতেছিল।কিন্তু অন্য শহর থেকে পালিয়ে আসা রাজা কা'কা তাকে আপনাদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উস্কানি দিল।সাথে পন্ডিতরাও। তাতে রাজা রাজি হয়ে গেল।আর প্রেরন করছিল আমাদেরকে।এবারতো আর আপনাদের সাথে যুদ্ধ করা ও তো ভুলেই যাবে।
মুহাম্মদ সবাইকে নির্দেশ দিলেন শহরের দিকে এগিয়ে যেতে।মুসলমানরা আসতে লাগল।রাজা তা জানতে পেরে।সে নিজে এগিয়ে এসে মুহাম্মদের হাতে শহরটাকে তুলে দিল।মুহাম্মদ শহর বাসির কাছ থেকে কিছু জিযিয়া আদায় করে শান্তিতে বসবাস করতে দিলেন।এবার তারা ও মুহাম্মদের মত। এমন একজন শাসক পেয়ে বলতে লাগল।এটাইতো সত্য ধর্ম। এ জাতি থেকে কেহ হতেই পারেনা শ্রেষ্ট।দলে দলে মুসলমান হওয়া শুরু হল।
এদিকে শহরের একদল হিন্দু মুসলমানদের বিরোধিতা অটল রইল।রাজা কা'কা ও পন্ডিত এবং ওই হিন্দুরা মিলে হঠাৎ শহরে লঠতরাজ খুন ধর্ষন করা শুরু করে দিল।মুহাম্মদ তা জানতে পেরে।সৈন্যদেরকে বললেন। ওদের বিরোদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।মুসলমানরা ঝাপিয়ে পড়েন ওদের বিরোদ্ধে।কিছু সময়ের ভিতরেই সবাইকে হত্যা করা হল।ফিরে এল শহরে শান্তি।
এভাবে চলে গেল অনেক দিন।মুহাম্মদ সেখানে ক'দিনের জন্য অবস্থান করলেন।সে সময় একদল তরুনীরা আসল তার কাছে।সবাই বলল ওরা নাকি মুসলমানদেরকে দেখতে এসেছে।মুহাম্মদ মুসলিম মেয়েদেরকে ডাকলেন। বললেন ওদেরকে সাথে নিয়ে যেতে। দেখাতে ঘুরে ঘুরে ফুল ফল বাগান গুলো।তাদের মধ্যে একটি মেয়ে বলল।সে মুহাম্মদের সাথে কিছু সময় একা থাকবে।তার নাকি মুহাম্মদের সাথে কিছু জরুরী কথা রয়েছে।
মুহাম্মদ সবাইকে বললেন চলে যেতে।বললেন মেয়েটা কথা শেষ করে আসবে।সবাই চলে গেল।এবার মেয়েটি মুহাম্মদকে তার দিকে আকর্ষিত করার জন্য ভিবিন্ন অঙ্গ ভঙ্গি করতে লাগল।মুহাম্মদ বুঝে নিলেন তার মনের উদ্দেশ্য। তাই তিনি মুচকি হাসতে লাগলেন।দেখতে লাগলেন মেয়েটা কি করে।
মেয়েটা যখন দেখল। তার এই কাজে সে ব্যর্থ এবার সে তার দেহের ভিবিন্ন অঙ্গ কথার মাঝে মাঝে দেখাতে থাকে।তার এই কার্য মুহাম্মদের মধ্যে যেন কোন পরিবর্তনই করতে পারলনা।মেয়েটা মনে মনে আশ্চর্য হয়ে গেল।মনে মনে বলতে লাগল এ কোন পুরুষ। যার সামনে একটা অপরুপা সুন্দরি তার দেহ প্রদর্শন করতেছে।আমন্ত্রন জানাচ্ছে তার দিকে। কিন্তু তার যেন এদিকে কোন খেয়ালই নাই। তার দেহে যেন কোন পরিবর্তনই হচ্ছেনা।নাকি মুহাম্মদ নংপুরুষ।তা ভাবতে লাগল।
হঠাৎ মুহাম্মদ তার ভাবনাকে কাটিয়ে। কাছে ডাকলেন।সে তো মহা আনন্দে মেতে উঠেছে।ভাবছে হয়ত মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমের সেই পুরুষত্ব জেগে উঠেছে।তাই সে তার দেহকে দুলিয়ে দুলিয়ে চলে গেল মুহাম্মদের কাছে।মুহাম্মদ তাকে কাছে টানলেন।নিজ মুখের কাছা কাছি তার মুখ আনলেন।ধরলেন তার হাত দুটি বুলাতে লাগলেন তার আঙ্গুল গুলো।মেয়েটি ভাবছে এই বুঝি কাজ হচ্ছে।
(২৯তম পর্ব)
হঠাৎ মুহাম্মদ মেয়েটির হাতে থাকা আংটিটা খোলতে লাগলেন।তখনি মেয়েটি দুরে সরে যায়।তার সারাটি দেহ যেন ঘর্মে ভরে যায়।কাল হতে থাকে তার উজ্জল দেহটা।
মুহাম্মদ বললেন কি হয়েছে।দুরে সরে গেলে কেন? আংটিতে কি রেখেছ।কি উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছ বলে দাও।মেয়েটি আংটিটি লুকাতে লাগল।তখন মুহাম্মদ তাকে ধমক দিলেন সব খোলে বলতে।তখন মেয়েটি বুঝে নিল মুহাম্মদ সব বুঝে গিয়েছেন। তাই সে বলতে লাগল।
এই আংটিটির ভিতরে আমি বিষ নিয়ে এসেছি।যাতে আপনি যখন আমার দেহটা নিয়ে যৌন লিলায় মত্ত হবেন। তখনি আমি তার ডাকনা খোলে আপনাকে শরাবের সাথে পান করিয়ে দেব।
কিন্তু দেখলাম আপনিতো এক সত্যিকারের বীর পুরুষ।আপনার যৌবনের প্রারাম্ভ বয়সে ও আমার মত রুপসী নারী আপনার এক লোম ও লাড়াতে পারেনি।যেন আপনি কোন মানুষ নয়। বগবানের পাঠানো এক বীর দেবতা।
তখন মুহাম্মদ বললেন। মুসলমান এমন এক জাতি যারা কোন নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করেনা।কোন মা বোনের ইজ্জতের উপর হামলা করেনা।এরা তাদের বাদি কিংবা তাদের স্ত্রী ব্যথিত অন্য কার সাথে তার কামনা পুর্ণ করেনা।এটাই হল আল্লাহর বিধান।মুসলিম জাতি সে এক পবিত্র জাতি।
মেয়েটা মুসলমানের এমন চরিত্র দেখে। নিজের হিন্দু ধর্মের উপর ঘৃনা আসতে লাগল।নিজ দেহের প্রতি তাকতে তার অরুচি হতে লাগল।
সে বলল মুহাম্মদ আমি এখানে নিজে নিজে আসিনি।আমাকে পাঠিয়েছে রাজা দাহিরের বুদ্ধিমান উজির।সে আমাকে বলেছে আমি যেন আমার রুপ লাবন্য ভরাট যৌবন দিয়ে আপনাকে আকর্ষিত করি।এবং আপনাকে আমার ফাদে ফেলে হত্যা করে ফেলি।এর বিনিময়ে দেওয়া হবে আমায় অনেক স্বর্ণ মুদ্রা।
আমি রাজি হয়ে যাই। পরে সে আমাকে নিয়ে চলে এক পন্ডিতের কাছে।বলে পন্ডিত মশাই তোমায় বলে দিবে কি কি করতে হবে।পন্ডিত আমাকে তার রুমে নিয়ে গেল।উপভোগ করল আমার সারাটি দেহ।আমি তার সংশ্রব পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলাম।কারন আমাদের ধর্মে পন্ডিতদের সাথে মেলামেশা পবিত্র ও সৌভাগ্য মনে করা হয়ে তাকে।
পরে পন্ডিত আমার হাতে বিষে ভরা এই আংটিটি দিয়ে বলল।এবার তুমি যাও। গিয়ে মুহাম্মদকে তোমার যৌবনের সাগরে ভাসিয়ে হত্যা করে এসো।আমি সেদিন চলে আসি আপনার কাছে।
এই বলে মেয়েটি কান্না শুরু করে দিল।বলল মুহাম্মদ আমি জানতামনা কখন ও এই হিন্দু নোংরা ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ট কোন ধর্ম আছে।মুহাম্মদ তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।রেখে দাও তোমার সংশ্রবে তোমার স্ত্রী হিসাবে।নয়ত একটা বাদি হিসাবে।
মুহাম্মদ আমি তোমার কাছে কিছুই চাইবনা।শুধু আড়াল থেকে।তোমার মুখটা দেখে আমার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।তখন মুহাম্মদ তাকে বললেন।
(৩০তম পর্ব)
না তুমি এখানে থাকবে না। চলে যাবে তাদের কাছে। যার তোমায় পাঠিয়েছে। মুহাম্মদ বললেন তুমি এখন কোথায় যাবে। আমি বললাম মন্দিরে।
এদিকে রাজা দাহির ও উজির শুনতে পেল তাদের পাঠানো মেয়েটি । পন্ডিতকে মেরে পালিয়েছে। রাজা দাহির তখন একদল সৈন্যকে বললেন। ওকে ধরে নিয়ে আসো।কিছুক্ষন পর মেয়েটিকে ধরে আনল তারা।তখন মায়া রাণী তার খোপা ধরে চাপেটাঘাত করে।তখন রাজা বলল তুই এমন করলি কেন? কিভাবে করলি। মুহাম্মদ তোকে কত টাকা দিয়েছে।
তখন মেয়েটা বলে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম তোদের মত নোংরা নয় যে সে তার উদ্দশ্য সফল করতে নারী ব্যবহার করবে।তখনি রাজা দাহির তার পেঠে একটা লাত্থি মারে। তার মুখ দিয়ে বেয়ে পড়ে রক্ত। তবু ও তার মুখে একটা হাসি লেগেই আছে। তার হাত পা বেধে নেওয়া হয়। তাকে দাড় করানো হয়।তার হাটুর উপর ভর করে রাজা দাহির বলল কিভাবে? কেন তুই এই কাজ করলি?
তখন মেয়েটি বলল পন্ডিত আমায় পাঠালো মুহাম্মদকে মারতে। আমি প্রথমে গিয়ে মুহাম্মদকে ভিবিন্ন রকম ভাবে আকর্ষিত করতে চাই। কিন্তু সে তার পবিত্র ধর্ম ইসলামের খোদার দেয়া বিধানাবলী মানতে অটল অবিচল রইল।সে বুঝে নিল আমার ছলনার কথা।ততাপি সে আমায় কিছুি করেনি।স্ব সম্মানে পঠিয়ে দেয় মন্দিরে। আমি বুঝে নেই ইসলামই হল খাটি ধর্ম ইসলামই হল সত্য ধর্ম।
আমি চলে আসি মন্দিরে। রাত্রে পন্ডিতরা মেয়েদেরকে উপভোগ করে। যেই রুমে শরাব খাইয়ে রাখে। আমি সেখানে গিয়ে ঘুমিয়ে যাই। হঠাৎ সে পন্ডিত আমায় দেখে বলে। তুমি কি ফিরে এসেছ। আমি মাথা নাড়িয়ে হাঁ বললাম।তখন অবার সে বলল। তুমি কি মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমকে হত্যা করেছ। আমি এবার ও হাঁ বললাম সে আমায়। তার কোলে তুলে নিল। আমায় নিয়ে চলল তার কামরায়। খোলে নিল আমার দেহের সম্পর্ন কাপড়।
শুরু করল তার কাজ। ইতিপুর্বে ছোটকাল থেকে। পন্ডিতদের সাথে এই কাজ করে আসছি। মনে করতাম তা সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু এইবার আমার কাছে তা খুবই ঘৃনা লাগে।আমি কিছুতেই তাকে ছাড়াতে পারছিলামনা। হঠাৎ বললাম একটু দাড়ান আমার বড়ই তৃষ্ণা লেগেছে। তখন পন্ডিত বলল আজ কি দাড়াবার সময়। আজতো শুধুই আনন্দের দিবস।
কিছুক্ষন পর সে আমার দেহ থেকে একটু উঠল।বলল এই নাও আমায় শরাব পান করাও। আমি এই সুযোগে শরাবে আংটি থেকে বিষ ছেড়ে দেই। পন্ডিত তা খেয়ে সাথে সাথে গলায় ধরে বলে। তুমি আমায় মেরে ফেললা। এরি মাঝে আমি কাপড় পরে নেই।
ছুটে চলি এক অজানা রাস্তায়। তখনি আপনার লোকেরা আমায় নিয়ে আসে।তখন রাজা দাহির ক্রদে অগ্নিশর্মা হয়ে যায় তাই তার তরবারীটি বের করে তার গলাটা কেটে ফেলে। উড়ে যায় মেয়েটির মাথা।কিছুদুরে গিয়ে পড়ে।তবু ও রক্ত মুখটায় একটা হাসি লেগে আছে।
(৩১তম পর্ব)
এদিকে রাজা সুনদরশ্রী। মুসলমানদের সাথে শান্তি চুক্তি করার কারনে। মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম সেখানে কোন হামলা করেননি।পাঠিয়ে দেন গেয়েন্দাদেরকে ভিবিন্ন শহরে।
রাজা সুন্দরশ্রীর রাজ্য সুন্দর ভাবে চলতে থাকে।হঠাৎ করে একদিন রাতে দেখা যায়। আকাশে একটা আগুন উড়ছে। ঘুরতেছে সারাটি শহর। সাথে রয়েছে একটি মেয়ের চিৎকার। সময় যতই গড়াচ্ছে। ততই যেন মেয়েটির চিৎকার বেড়ে যাচ্ছে।বাড়তে থাকে শহরের মানুষের চিৎকার। মানুষজন দিক বেদিক ছুটতে থাকে।রাজা সুন্দরশ্রী ও বাহিরে বেরিয়ে পড়েন। দেখতে থাকেন মানুষের আর্তনাদ ও আগুনের কান্ড। মাঝে মাঝে একটা পানির ফোয়ারা থেকে আগুনের উল্কি সমস্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ছে।মনে হচ্ছে যেন যদি ওই আগুনের একটা উল্কি শহরে পড়ে। তাহলে সমস্ত শহরটি মুহুর্তের মধ্যে জ্বালিয়ে দিবে।
এভাবে চলে যায় সারাটি রাত। রাত পোহানোর সাথে সাথে। চলে যায় সেই আগুনটি। সাথে সাথে কমে যায় মানুষের চিৎকার ও।মানুষজন ঘর বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। রাজা সুন্দরশ্রী ও ঘরে চলে যান। দেখলেন তার হেফাযতে আসা মুসলিম সৈনিকরা ও দাড়িয়ে দেখছেন।তিনি তাদের বললেন আপনারা কি দেখেছেন।তারা হাঁ সুচক জবাবা দিলেন।
পরদিন সকালে রাজা সুন্দরশ্রীর কাছে।লোকজন এসে বলতে লাগল। রাজা এসব হচ্ছে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ না করার জন্য। না জানি কোন বিপদ আমাদের উপর আসছে।আপনি এ বিপদ থেকে আমাদের মুক্ত করতে যুদ্ধের নির্দেশ দিন।কিন্তু রাজা তার শান্তি চুক্তির উপর অবিচল।এভাবে তিন চার রাতে সমান ভাবে আগুন সারা শহর ঘোরতে থাকে। সাথে থাকে একটা মেয়ের চিৎকার কখন ও বা উড়ে যায় আগুনের উল্কি।মানুষজন রাজাকে যুদ্ধের জন্য চাপ দিতে থাকে।রাজা তাদের এ অবস্থা আর সামাল না দিতে পেরে। মুসলিম সৈনিকদেরকে ডেকে পাঠান।বলেন কিছু একটা করতে।সৈনিকরা বলেন রাজা আমাদেরকে মাত্র তিনটি দিনের সময় দিন।ইনশা আল্লাহ এর ভিতর এর কোন ফলাফল আমরা নিয়ে আসব।
কারন তারা জানতেন আকাশেতে আগুন উঠা।মেয়ের চিৎকার দেওয়া।এটা হয়ত কাফিরদের কোন চাল হবে।যাতে রাজা সুন্দরশ্রী মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করে।নয়তবা এটা কোন জ্বীন করছে।দুটুর যেটিই হোক সমাধান করা যাবে।কিন্তু কি ভাবে? তারা চিন্তায় পড়ে গেল।রাজার কাছ থেকে তিন দিন সময় নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ে। মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম এর কাছে যেতে।সেখান থেকে নিশ্চয় এর কোন সমাধান মিলবে।
তাই তারা ঘোড়া নিয়ে দ্রুত চলতে লাগল।এভাবে ঘোড় আরোহনেই চলে গেল দেড় দিন।পেয়ে গেল একটি জঙ্গলে।গোয়েন্দা প্রধান ছাকিফ বসে আছেন।তারা দ্রুত ছাকিফের কাছে চলল।বলল সমস্ত ঘটনা । তখন ছাকিফ তাদেরকে দুরে একটি জায়গায় নিলেন।এবং কানে কানে কি যেন বলে দিলেন। এরপর তারা দ্রুত চলল শহরের দিকে কারন তাদের কাছে রয়েছে আর মাত্র একটি রাত্র।কোন খানেই না থেমে পিপাসার্ত হয়ে ও তারা ছুটে যেতে লাগল।পৌছে গেল শহরে। কিছুটা দিন থাকতেই।এতটা পথ অতিক্রম করে আসায় তারা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেল।তাই তারা কিছু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ঘুমাল।
(৩২তম পর্ব)
রাত্র যখন গভীর হতে লাগল।বরাবরের মত সেই আগুন ও মেয়েটির চিৎকার চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল।বেড়ে গেল সমস্থ শহরে মানুষের হৈ চৈ।তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল।তুলে নিল হাতের মধ্যে তীর তরবারী ও ভিবিন্ন অস্ত্র।ছোটে চলল চিৎকার টি কোথায় থেকে আসছে তার খোঁজে। আওয়ায টির পিছু পিছু।
হঠাৎ দেখে তারা চলে এসেছে একটি অন্ধকার জঙ্গলে।চারিদিকে নিরব নিস্তব্দ পরিবেশ বিরাজ করছে। যেন এটা কোন ভুতুড়ে রাজ্য হবে।মুসলমান ভুত এই সবকে ভয় পায়না।তাই তারা নিজেকে অভয় দিয়ে চলতে লাগল।আওয়াযটি যেথায় থেকে আসছে সেদিকে।
হঠাৎ তারা দেখে তাদের সামনে একটা মন্দির দাড়িয়ে রয়েছে।আশপাশে কোন লোকই দেখা যাচ্ছিলনা। মনে হচ্ছে ওই মন্দির থেকে কোন দেবি চিৎকার করছে।কিন্তু মুসলমানতো তা বিশ্বাস করেনা।দেবি আবার কিভাবে চিৎকার দিবে।এটাতো জড় পদার্থ মাত্র।তাই তারা কিছুক্ষন মন্দিরের ভিতরে তাকিয়ে রইল।
হঠাৎ দেখে একটা মেয়ে শুধু চিৎকার করছে।আর ভাঙ্গতে চাচ্ছে মন্দিরের উপরে উঠার সিড়িটি।কিছুক্ষন পর তার চিৎকারটি থামতে চাইল।তখনি ক'জন লোক আসে। আর তাকে আবার রেখে যায় মন্দিরের মাঝখানে।বেড়ে যায় মেয়েটির চিৎকার।বুঝে নেন তারাই এসব করছে। নিশ্চয় রয়েছে এর পিছনে বড় কোন রহস্য।
তারা সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন।হঠাৎ দেখা গেল ক'জন লোক এসে মেয়েটিকে কাঁধে তুলে একটা গর্ত দিয়ে যেতে লাগল।তারা ও ওদের পিছু পিছু যেতে লাগল।দেখল ওরা মেয়েটিকে নিয়ে একটি রুমে প্রবেশ করছে।সেখানে রয়েছে তিনটি পুরুষ ও দুটি মেয়ে। সাথে রয়েছে এই ছোট্ট মেয়েটি ও। তারা ওই ছোট্ট মেয়েটিকে মধ্যখানে বসালো।তখন সারা মুখে লম্বা লম্বা মুছে ঘেরা।মথায় লম্বা চুল। উপরের দিকে বাধা।লোকটা মেয়েটির গালে কপালে চুমা খেল।বুলাতে লাগল হাত সারাটি দেহে।মেয়েটি শুধু চিৎকার করে কাদছে।হঠাৎ মুসলিম সৈনিকরা তাদের ঘেরাও করে নেয়।বলতে থাকে সবাই হাত উপরে তোলো। সবাই হাত উপরে তুলল।
মেয়েটা কাকা কাকা বলে একজন মুসলিম সৈনিককে জড়িয়ে ধরল। বলল কাকা আমাকে বাচান। ওরা আমায় ধরে এনেছে।আমার সাথে ওরা প্রতিদিন খারাপ ব্যবহার করে।রাতে ওরা আমাকে মন্দিরে ফেলে রাখে।আমি সিড়ি দিয়ে আমার বের হবার রাস্তা দেখি। তাই আমি সিড়ি ভেঙ্গে বের হওয়ার ইচ্ছা করি।তখনি আমার সারাটি দেহে জ্বলতে শুরু করে।আমি চিৎকার করতে থাকি।
তখন এক সৈনিক এই ছোট্ট মেয়েটির মাথায় হাত রাখলেন। বললেন মা তুমি চিন্তা করনা। একটু পর তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাবে।এরপর তারা ওই পাঁচ জনের গলায় তরবারী ধরে বলে। বল তোদেরকে কে পাঠিয়েছে?কেনইবা তোরা এসব করছিস? তখন চোল ওয়ালা লোকটা বলে। আমরা এসব নিজ ইচ্ছায় করিনি।আমাদের পাঠিয়েছেন রাজা দাহির। বলেছেন মন্দিরে গিয়ে এইসব যাদু করতে। যাতে লোকেরা বুঝে এই চিৎকারটা দেবি করছে।তারা আগুন দেখে মনে করবে দেবির অভিশাপ এসেছে।মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ না করলে বিপদ চলে আসছে।মুলত এটা যাদু মাত্র। এই আগুন কাউকে কিছুই করতে পারেনা। এটা শুধু মানুষের চোখে ধান্দা লাগানো ছাড়া কিছু নয়।চাইলে আমরা তা এখনই করে দেখাতে পারব।
দয়া করো মেরনা আমাদেরকে।ওই হিন্দু যাদুকররা বলতে লাগল।সৈনিকরা বলল তোমাদেরকে তা লোক সম্মুখে করে দেখাতে হবে।নয়ত গলা কাটা হবে। তারা রাজি হয়ে গেল।
(৩৩তম পর্ব)
পরদিন দুপুর বেলা। রাজা সুন্দরশ্রী সকল লোককে একখানে জামায়েত হতে বলেন।সবাই একত্রিত হয়।উপস্থিত করা হয় যাদুকরদেরকে ও।শুরু করে তারা মন্ত্র পাঠ। সামনে বসানো হয় ওই ছোট্ট মেয়েটাকে।
কিছুক্ষন পর মেয়েটার দেহে ওই লম্বা চুল ওয়ালা যাদুকরটা হাত দেয়।সাথে সাথে মেয়েটা চিৎকার দিতে থাকে।মুহুর্তের মধ্যে তার চিৎকার সারাটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বের হতে থাকে পানির ফোয়ারা থেকে আগুন। লোকজন ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। তখন একজন সৈনিক সেই ফোয়ারার মাঝখান দিয়ে হেটে আসলেন। তার কিছুই হলনা। লোকেরা বুঝে নিল এটা নিছক যাদু মাত্র।তখন মেয়েটির মা বাবা চিৎকার দিয়ে এসে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিল।মানুষরা ওই যাদুকরকে মেরে ফেলতে চাইলো।সৈনিকরা তা করতে বাধা দিল। বলল আমরা তাদের কথা দিয়েছি মারবনা।মুসলমান কথা রক্ষা করে।কখন ও মিথ্যা কথা বলেনা।
সে যেই হোক।আমরা তাদের যেমন করে কথা দিয়েছি ওমনি ছেড়ে দেব।তবে এই শহরে তারা বসবাস করতে পারবেনা।দুর করে দেওয়া হল তাদেরকে এই শহর থেকে। উপস্থিত জনতা মুসলমানদের এমন আচরন দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল।ভুলে মুসলমানদের সাথে শত্রুতা।অনেকেই আবার কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।
এদিকে রাজা দাহির শুধুই ব্যর্থতা। তা আর সহ্য করতে পারলনা। চলে গেল পন্ডিতদের কাছে। বলল পন্ডিত মশাই। আমি এখন নিজে যদ্ধে যেতে চাই।দেখুন আমার কুন্ডুলিটা তাতে কি লেখা রয়েছে।
পন্ডিত কুন্ডুলি দেখে বলল। শুভ লক্ষন মহারাজ শুভ লক্ষন। এখন আপনি যুদ্ধে গেলে নিশ্চিত জয় পাবেন।কেটে আনতে পারবেন মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমের গলা।রাজা দাহির মহা খুশি। সে উজিরকে বলল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে।সাজানো হল রাজার জন্য এক হাতিকে। বাধা হল তাতে রেশমের গালিচা। রাখা হল তাতে এক নব যৌবনা সুদর্শন তরুনী।রাজা হাতিতে উঠতে যাবে তখন মায়ারাণী প্রসাদ নিয়ে এলো।সিন্দুর টেনে দিল দাহিরের কপালে। সাথে একটা চুমু খেল।কারন সে দাহিরের বোন হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রী ও।এবার রাজা দাহির হাতিতে চড়ে বসলো।সৈন্যদের উদ্দেশ্যে দিল এক গরম ভাষন।সৈন্যদের রক্ত গরম হয়ে গেল।
বলতে লাগল ভারত মাতার জয়।ছোটাতে লাগল হাতিদেরকে যুদ্ধের উদ্ধেশ্যে। এদিকে মুহাম্মদ দাহির আসার খবর পেয়ে সৈন্যদেরকে নিয়ে আসেন রনাঙ্গনে।উভয়দল যখন সম্মুখিন হয়। তখন শুরু হয়ে যায় তমুল যুদ্ধ। মুসলমানরা হাতিকে যেন ভয়ই পায়না। কারন এরা পারস্যের সাথে হাতি যুূদ্ধ করে অভ্যস্থ।দিন গিয়ে রাত এসে গেল।কোন ফলাফলই আসলনা।পরদিন সকালে হঠাৎ দেখা গেল মায়ারাণী পাগলের মত আসছে।এসেই প্রবেশ করে দাহিরের তাবুতে।
বলল রাজা তুমি যুদ্ধের মধ্যখানে কখন ও যেয়না।রাজা বলল কেন? রাণী বলল আমি কাল রাত স্বপ্নে দেখেছি। আপনি যুদ্ধের মধ্যখানে চলে গেছেন। তখনি একদল মুসলিম বাহিনী আপনাকে পানিতে ফেলে দেয়।পরে দেখি আপনার লোকেরা আপনার গলা কেটে ফেলে।রাজা রাণীকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল এসব তুমি দুস্বপ্ন দেখেছ রাণী এর কোনই যে বাস্তবতা নেই।রাণী তা যে আর মানেনা।এরপর রাজা মায়ারাণীকে খুশি করতে গিয়ে কথা দেয় যাবেনা বলে।এবার রাণী খুশি হয়।চলে যায় তার শহরে।এই দিন ও কোন ফলাফল আসেনি। তৃতীয় দিন ও রাণী আসে।রাজা তাকে যাবেনা বলে ফিরিয়ে দেয়।কিন্তু রাজা দাহিরের তিনদিন যাবৎ যুদ্ধ যে আর ভালো লাগেনা।সকল সৈন্যকে বলে ঝাপিয়ে পড়তে।মুসলমানরাও কৌশলে যুদ্ধ করে যেতে লাগলেন।
হঠাৎ একটা কালো হাবশি যুবক এসে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিমকে বলে। আমি এখন রাজা দাহিরের মাথা কাটতে যাব।এর আগ পর্যন্ত আমার জন্য কিছু খাওয়া হারাম।বলেই যুবকটা চলে গেল।প্রথমেই সে রাজা দাহিরের হাতির সুড়ে আক্রমন করল।হাতিটি বেশ আহত হল।আবার যখন সে ফিরতে লাগল। তখনি দাহির একটা তীর যুবকটির গলায় বিদ্ধ করে দিল।তখন যুবকটির গলার একপাশ কেটে। মাথটা দেহ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে গেল।এবার দাহির দুই হাত দিয়ে মিশিনের মত তীর বর্শা আর বল্লম ছুড়া শুরু করল।কেহই যেতে পারছিলনা পাশে। তাকে ওই সুন্দরী মেয়েটি শরাব পান করাইতে ছিল মাঝে মাঝে।তখনি মুসলিম মুজাহিদরা তার প্রতি অগ্নিতীর নিক্ষেপ করা শুরু করেন।একটা তীর গিয়ে বিদ্ধ হয়। রেশমের তৈরী ওই গালিচায়। সাথে সাথে আগুন ধরে যায়।আরেকটা গিয়ে পড়ে মেয়েটির কাপড়ে। আগুন লেগে যায় তার দেহে।মেয়েটি চিৎকার করা শুরু করে।
তখন রাজা দাহির মেয়েটিকে হাতি থেকে নিচে ফেলে দেয়।তখন হাতি দেহে আগুন লাগা দেখে দাহিরকে নিয়ে পানিতে ঝাপ দেয়।মুসলমানরা মেয়েটিকে আটক করে। মুসলিম নারীদের হাতে পাঠিয়ে দেয়।এবার রাজা দাহির পানি থেকে যখনি উঠতে যাবে তখনি মুসলিম ক'জন সৈনিক তাকে ঘেরাও করে। সে পানি থেকে উঠে দিক বেদিক তরবারী চালনা শুরু করে দেয়।তখনি পিছন থেকে এক সৈনিক এসে তার গর্দান কেটে দেন।সাথে সাথে সে মারা যায়।এদিকে যখনি হিন্দু সৈন্যদের মাঝে রাজা দাহিরের মৃত্যুর খবর পৌছে তখনি সবাই পালাতে থাকে।মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম তার লাশটিকে দেখেন।পরে বলেন তার গলাটা কেটে। তার মাথা ও যুদ্ধে বন্দি হওয়া তার ভগ্নী কে আরবে পাঠিয়ে দিতে। প্রথমে হাজ্জাজের কাছে।
(৩৪তম পর্ব)
যখন রাজা দাহিরের মাথা ও তার ভগ্নী হাজ্জাজের কাছে পৌছলো।তখন হাজ্জাজ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন।বললেন যাও আরব বাসীকে বলো। অমুক জায়গায় জামায়েত হতে।সবাই একটি জায়গায় আসলো।তখন হাজ্জাজ যোহরের নামায পড়ে বের হলেন। তখন দাহিরের মাথাকে একটা বল্লমের মাথায় গেথে। উচু করে তুলে ধরা হয়।
বলা হয় হে আরব বাসি। এই সেই দাহির। যে আমাদের আরব ভাই বোনদেরকে বন্দি করেছিল।ধর্ষন করিয়েছিল আমাদের মা বোনদেরকে।তার জন্য আজ কত ভাইয়েরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই সেই শত্রু।
এইসব বলে পরিচয় দেওয়া হল। পরে তার মাথাটি ও তার ভগ্নীকে। খলিফা ওয়ালিদকে উপহার হিসাবে দেন হাজ্জাজ।বলেন আমি বলছিলাম না একদিন আপনাকে এই যুদ্ধের কারনে যা ক্ষয় ক্ষতি হবে।তার দ্ধিগুন এনে দেব।আজ দ্ধিগুন কেন সারা সিন্ধু আপনার। শুধু তাই নয়।এই দাহিরের মাথা ও তার ভগ্নীটিও আপনার জন্য উপহার।
এবার খলিফা ওয়ালিদ। দাহিরের মাথা ও ভগ্নীর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলেন।এবং মুচকি হাসলেন।তার হাসা দেখে মেয়েটি কেদে উঠে। তার কাদা দেখে ওয়ালিদ বললেন এই মেয়ে কাদছো কেন।তখন মেয়েটি বলল।আমি শুনেছি মুসলমানরা নাকি নারীদেরকে ধর্ষন করে।না জানি আজ আমার কি হবে।তখন ওয়ালিদ তাকে অভয় দিয়ে বললেন। বোন আমার! তুমি কেদনা। তোমায় কিছুই করা হবেনা।তুমি যা শুনছো তা ভুল শুনেছ।
মুসলমান নারীদের ইজ্জত নষ্ট করেনা।বরং যে কোন মেয়ের ইজ্জত রক্ষার জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়।তুমি দেখনা আজ এই কয়েকজন মুসলিম মেয়ের জন্য আরব মায়ের হাজার হাজার মুসলিম জনতা প্রাণ বিলিয়ে দিচ্ছে।মুসলমান তার বাদি কিংবা স্ত্রী ব্যথিত কার সাথেই কাম পুর্ণ করেনা। এটাই আল্লাহর বিধান।
বোন তোমায় সম্মানের সহিত বাচতে দেওয়া হবে।তখন মেয়েটি বলল।আমায় কে বিয়ে করবে । আমিতো নোংরা একটি ধর্মে ছিলাম। কত পন্ডিতদের সাথে পবিত্র মনে করে মেলা মেশা হয়েছে।আমাকে কে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করবে।তখনি একলোক দাড়িয়ে বলে আমি তাকে বিয়ে করব।এরপর মেয়েটি মুসলমান হয়ে যায়। বিয়ে হয় ওই ব্যক্তির সাথে।তার নাম ছিল আব্দুর রহমান।ইতিহাসে পাওয়া যায় তাদের কোন সন্তান জন্ম গ্রহন করেনি।
এদিকে বীর মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম। রাজার আরেক রানী।যার নাম হল প্রীয়সি। তাকে আটক করেন। বলেন তোমার স্বামীতো মারা গেছে। তাহলে তোমাদের কু সংস্কার অনুযায়ি সতিদাহ হিসাবে তুমি জ্বলে গেলানা কেন?তখন প্রীয়সি বলল। আমি কেন মরতে যাব ওর জন্য। আমিতো ছিলাম এক কৃষকের মেয়ে। একদিন রাজা বাজার দিয়ে যেতে আমায় দেখে। এরপর বিয়ে করে নেয়।তখন তার যৌবন প্রায় শেষ হয়ে আসছে।অথচ আমি তখন নব যৌবনা এক মেয়ে।তাই তার প্রতি আমার এতটা ভালবাসা নেই।আমিইতো তাকে যুদ্ধে পাঠিয়ে ছিলাম।সে আমায় অনেক ভালবাসত। তাই একদিন আমি তার ঘরে গেলাম।
বললাম আজ ভারত মায়ের সন্তানদের কি হচ্ছে।এক ছোট্ট ছেলে মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম শহরের পর শহর বিজয় করে আসছে। আর তুমি এখানে কাপুরুষের মত বসে আছ।যাও পারলে গিয়ে নিজে যুদ্ধ করো।এনে দাও আমায় তার মাথা।নয়ত নিজের মাথা সেখানে গিয়ে কেটে দিও।দাহির আচ্ছা তাই হবে বলে যুদ্ধে গেল।কাপুরুষ তার মাথা কাটতে দিল।এতে আমার কি হল।
মুহাম্মদ তাকে বন্দি না করে। মুসলমানদের মধ্যে খুশি ভাবে থাকার অনুমতি দিয়ে দেন।প্রিয়সি মুসলমানের এমন ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।এবার মুহাম্মদ সৈন্যদেরকে বললেন মায়ারানীকে ধরে আনতে।তখন এক পন্ডিত বলল সে নাকি সতিদাহ হিসাবে নিজেকে জালিয়ে দিছে।মুহাম্মদ জানতেন মায়ারাণী তার ভাই স্বামীর জন্য নিজিকে জালিয়ে দেওয়ার মত মেয়ে নয় সে।তাই তিনি আসল ঘটন কী? তা জানতে পাঠান কয়েকজন সৈন্যকে। বনের ভিতর ওই বাড়িতে। যে বাড়িতে সে নিজেকে জালিয়েছে বলে পন্ডিতরা বলছে। সৈনিকরা ওই বাড়িতে যেতে লাগলেন।
(৩৫তম পর্ব)
দেখলেন বনের ভিতর একটা ঘর। রয়েছে এটি তালা বদ্ধ।তাই তারা তালাটি ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করেন।তখন নাকের ভিতর একটা গন্ধ আসতে থাকে।তবে কি?সত্যিই সে নিজেকে জ্বালিয়ে দিছে।তখন দেখা গেল দুটা লোক পালাতে লাগল।ধরে আনা হল ওদেরকে।বলা হল তোমরা এখানে কি করছ? কেন এসেছ।তখন তারা বলল আমরা জানতাম আজ মায়ারানী নিজেকে জালিয়ে দিবে। তাই আমরা এখানে লুকিয়ে ছিলাম। যাতে করে সে পুড়িয়ে যাওয়ার পর ওর সোনা গুলা আমরা নিতে পারি।
এই বলে তারা গলে যাওয়া অনেক সোনা দেখালো।তখন এক সৈন্য তাদেরকে বলল। তোমরা কি জানো মায়ারানী নিজেকে কেন জালালো।তখন তার হাঁ বলল।আর বলল মায়া যখন শুনেছে। আপনারা এই শহরে আসছেন তাই সে এই বনে আশ্রয় নেয়।পরে যখন জানতে পারলো পন্ডিতরা আপনাদের সাথে যুদ্ধ করে পেরে উঠতে পারেনি তখনি সে ও উজির এবং এক বাদি তারা নিজেকে আগুনে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়।
এর পর মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম চলে যান আরেকটি শহর বিজয় করতে।যখন লোকেরা তার আসার কথা শুনলো তখন তারা শহরের ফটক বন্ধ করে নিল।মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম তাদেরকে ফটক খোলার জন্য বললেন। কিন্তু তারা খোললনা। বলল যেদিন রাজা দাহির আসবেন সেদিন খোলব । তখন তাদের জানানো হল রাজা দাহির অনেক আগেই মারা গেছেন। ওর মাথা কেটে ফেলা হয়েছে।ওরা বিশ্বাস করেনা।বলে ওর মাথা কেউ কাটতে পারবেনা।
তখন মুহাম্মদ প্রীয়সিকে বলেন ওদেরকে বলতে।রানী প্রীয়সিকে তারা চিনতো। তাই প্রীয়সি ফটকের কাছে গিয়ে বললেন আমি স্বাক্ষী। আমি জানি রাজা দাহির মারা গেছেন।তখন তারা প্রীয়সি কে নিয়ে বিদ্রোপ করা শুরু করে।বলে প্রীয়সি তুমিও কি ওদের সাথে যোগ দিয়েছ।পরে যখন দেখলেন মুহাম্মদ। এতেও কাজ হবে না তাই তিনি জানিয়ে দিলেন। এবার মিনজানিক ও উরুস ব্যবহার করা হবে।শহর বাসি কিছুটা ভয় পায়।সবাই এক বুড়িমার কাছে চলে যায়।
জিজ্ঞাস করে সত্যিই কি রাজা দাহির মারা গেছে।তখন বুড়ি কিছুক্ষন চোখ বুঝে তার পর বলল।আমি সমস্ত সিন্ধু খোঁজেও দাহিরকে পাইনি।ও মারা গেছে।সাথে সাথে লোকেরা প্রধান ফটকটা খোলে দিল।প্রবেশ করে মুসলমানরা তাতে। বিজয়ী বেসে।মুসলমানরা এসে কোন লুঠতরাজ করেনি।করেনি কোন মেয়েকে ধর্ষন। শুধু অল্প কিছু জিযিয়া নিল।শহর বাসি অবাক হয়ে যায়।এ কোন জাতি।যারা এত সভ্য।কি সুন্দর তাদের আচরন।কতইনা পবিত্র তাদের ধর্ম।এখানের ও অনেক মুসলমান হতে লাগল।
যখন মুহাম্মদ বিন কাসিম শুনতে পেলেন। এক বুড়িমার কথায় শহর বাসি এত সহজে মুসলমানদের হাতে তুলে দিয়েছে।তিনি কৌতুহলি হয়ে উঠলেন ওই মহিলাটিকে দেখার জন্য।চলে যান তার কাছে।বললেন বুড়িমা বলুনতো আপনি কিভাবে জানলেন যে দাহির মারা গেছে।বুড়ি মুহাম্মদের মাথায় হাত রেখে বলল।বাবা এটা আমি কাউকে বলিনা।বাবা তোমার মত এত কম বয়েসে বীর বাহাদুর ভালো প্রতিটি মা জন্ম দিক।বাবা তোমার আয়ু বুঝি আর নেই। তোমার আয়ু যে ঘনিয়ে আসছে। এই বলে বুড়ি মা চোখে পানি নিয়ে চলে যেতে লাগল।
মুহাম্মদ হাত বাড়িয়ে তাকে আটকে দিলেন।বললেন বলুনতো বুড়িমা আমার মৃত্যু কোথায় হবে।তখন বুড়িমা বলল।এটা জানিনা। তবে এটা বলতে পারি যে তোমার মৃত্যু কোন রনাঙ্গনে হবে না।মুহাম্মদ বিন কাসিম হাসতে লাগলেন। কারন সত্যিকারের মুসলিম মৃত্যুকে ভয় পায়না।বরং সে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে।বুড়ি যেতে লাগল।মুহাম্মদ আর তাকে আটকালেননা।
এরপর মুহাম্মদ বিন কাসিম আর ও অনেক শহর বিজয় করতে থাকেন।সমস্ত সিন্ধুতে উড়াতে থাকেন ইসলামের বিজয়ের পতাকা।পৌছে দিতে থাকেন সেই মুধুর বানী। লা ইলাহা ইল্লাল্লহু মুহাম্মাদুর রাসু্লুল্লাহ। কিছুদিন পর খবর এল হাজ্জাজ মারা গেছেন।চাচার মৃত্যু র খবর শুনে।একেবারেই শোকাহত হয়ে যান।তবু ও চালিয়ে যেতে থাকেন যুদ্ধ।
কিছুদিন পর চিঠি আসে খলিফা ওয়ালিদ বিন মালিক অসুস্থ।এর কিছুদিন পর চিঠি আসে। খলিফা ওয়ালিদ মারা গেছেন।এখন খলিফা কে হবে তা নিয়ে দ্ধন্দ লেগে গেছে। লোকেরা চাচ্ছে ওয়ালিদ পুত্র হতে।আর দুষ্ট সালমান বিন মালিক চাচ্ছে সে হতে।মুহাম্মদ চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি জানেন সালমান খলিফা হলে কী হবে।তার সাথে কেমন আচরন করা হবে?কারন মুহাম্মদ সালমানের শত্রু সেই বাল্যকাল পার হবার পর থেকেই।
মুহাম্মদ নিজের মৃত্যুর জন্য একটু ও ভাবতেননা।ভাবতেন এই মুসলিম উম্মাহের জন্য। না জানি কী হবে তাদের আমার অনুপস্থিতিতে।এই জালিম খলিফা সালমানের আমলে।এরি মাঝে সালমান খলিফা হয়ে যায়।শুরু করে মানুষ হত্যা। যেখানে যাকে পায় তাকেই মেরে ফেলে দেওয়া হয়। নয়ত শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।হঠাৎ একটা চিঠি আসে।বলা হয় যুদ্ধ রেখে সবাই আরব দেশে চলে আসতে।সাথে গ্রেফতার করা হয় মুহাম্মদ বিন কাসিমককে।তার গ্রেফতারের পর সকল সৈন্যরা কেঁদে উঠে।তাদের সাথে যেন এই সৃষ্টিকুল কাঁদা শুরু করে দিয়েছিল।সেদিনের কান্না ভাসিয়ে দিয়েছিল এই বিশ্ববাসিকে শোক সাগরে।মুহাম্মদকে বন্দি করে নেওয়া হয় আরবে।সালমানের মহলের পাশের কারাগারে।
(৩৬তম ও সর্বশেষ পর্ব)
শুরু হয় তার উপর অমানবিক নির্যাতন।বেধে নেওয়া হয় তার হাত পা শিকলে।তাকে দিন রাত প্রহার করা হয়ে থাকে।শরীর দিয়ে শুধু রক্তই ঝরছে।যেন ছিড়ে ফেলে দেওয়া হবে তার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে।তা দেখে যে কোন ধরেনের মানুষের বিবেকটা কেঁদে উঠবে।
কিন্তু নিষ্টুর সেই সালমানে হৃদয়ে একটুও দয়া মায়া হলনা।সে এসে মুহাম্মদের সামনে দাড়ালো।বলল আমি বলছিলামনা সেদিন। আমার হাতেই তোর মৃত্যু হবে।তখন মুহাম্মদ বিন কাসিম বললেন। তুই আমায় বাহ্যিক হত্যা করে দিতে পারিস।কিন্তু এই মুহাম্মদ বিন ক্বাসিম থাকবে প্রতিটি মানব হৃদয়ে অমর হয়ে।তার জন্য ভালবাসা থাকবে প্রতিটি মুসলিম উম্মাহের অন্তরে।
এরপর শুরু করা হয় তা উপর আরও কঠোর শাস্তি।যেই শাস্তির কারনে।মুসলিম উম্মাহের মাঝে ইতিহাসের পাতায়। সর্ব কনিষ্ট বীর মুজাহীদ মুহাম্মদ বিন কাসিম। মাত্র ২২ বছর বয়সে শাহাদাত বরন করে।এই মুসলিম উম্মাহ কে কাঁদিয়ে মহান রবের সান্নিধ্যে।।আল্লাহ উনাকে জান্নাতে সু উচ্ছ স্থান দান করুন।আমিন।।
আমি বলি
★সে তো আল্লার সৈনিক বীর মুজাহিদ
সুমুন্নত তার শির।
সে তো নয় কোন ভীত তাগুতের কাছে নত
সে তো এক মহা নায়ক বিপ্লবী বীর।
সে তো মুহাম্মদ বিন কাসিম শুন হে মুসলিম
সে তো আমার তোমার আদর্শ।
তুমি তাকে দেখে নাও তার মত হয়ে যাও
হবেনা কখন ও লাঞ্চিত অপদস্থ।
সে তো বেচে থাকবে আমরন
প্রতিটি মানবের মনিকোঠায়।
তাকে ভালবাসবে সবাই বলনা তুমি হে মুসলিম ভাই
তার মত বানিয়ে দাও আমায়।
সে তো আল্লার সৈনিক বীর মুজাহিদ
সুমুন্নত তার শির।
সে তো নয় কোন ভীত তাগুতের কাছে নত
সে তো এক মহা নায়ক বিপ্লবী বীর।
---------/////সমাপ্ত////______
thanks
উত্তরমুছুন