হাদীস


সূচিপত্র 

     "অধ্যায়ঃ ঈমান"

ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের পরিচয়।

ঈমান এর পরিচয়ঃ

বিশ্বাস ও নিরঙ্কুশ আনুগত্যই হচ্ছে ঈমান। পরিভাষায় ঈমান বলা হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন। সংক্ষিপ্ত হলে তা এইভাবে আর বিস্তারিতভাবে বিধৃত করলে সেটা সেভাবে সত্য বলে মনেপ্রাণে মেনে নেওয়া।

ইসলামের পরিচয়ঃ

আনুগত্য স্বীকার করা মাথা নত করার নাম হচ্ছে ইসলাম পরিভাষা ইসলাম বলা হয় আল্লাহর কর্তিক নির্দেশিত ইবাদত সমূহ সম্পাদন করা।

ঈমান ও ইসলামের পার্থক্যঃ

(ক) ঈমান আন্তরিক বিশ্বাস এর নাম। আর বাহ্যিকভাবে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বাস্তবায়নের নাম ইসলাম।

(খ) ঈমান আন্তরিক আনুগত্য আর ইসলাম বাহ্যিক অনুগত্য।

ইহসান এর পরিচয়ঃ

একনিষ্ঠতা, পরোপকারিতা অর্থে ব্যবহৃত হয়।

কিয়ামত এর পরিচয়ঃ

মহাপ্রলয় পুনরুত্থান ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর সেই দিনে সমস্ত মানব- দানব এর বিচার হবে।


১.হাদীসঃ-হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদিন আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিত,কুচকুচে কালো চুল বিশিষ্ট, এক লোক আমাদের নিকট উপস্থিত হলেন। তারমধ্যে সফরের কোন চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছেল না। আবার আমাদের কেউ থাকে চিনতেও পারছিল না। অতঃপর তিনি নবী করিম সাঃ এর কাছাকাছি বসে পড়লেন। তিনি রাসুলে পাক সাঃ এর খুব নিকটে এসে তার হাঁটুদ্বয়ের সাথে নিজের হাঁটুদ্বয় মিশিয়ে এবং দুহাত তার দু উরুর উপর রাখলেন। এবং বললেন হে মোহাম্মদ আমাকে বলুন ইসলাম কি? উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। নামাজ কায়েম করবে, রমজানের রোজা রাখবে, যাকাত প্রদান করবে, এবং সামর্থ্য হলে বায়তুল্লাহর হজ করবে। তখন ওই ব্যক্তি বললেন আপনি ঠিক বলেছেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন তার ব্যবহারে আমরা বিস্মিত হলাম। প্রশ্ন করছেন আবার সত্যায়ন ও করছেন।

এরপর ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন  এবার আমাকে বলুন ঈমান কাকে বলে? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। ও তাঁর ফেরেশতাগণ কে, তাঁর কিতাবসমূহ কে, তার নবী-রাসূলগণ কে, এবং পরকাল কে, সত্য বলে বিশ্বাস করবে। আর প্রত্যেক ভালো-মন্দ অর্থাৎ তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখবে।  ওই ব্যক্তি এবারও উত্তর কে সঠিক বললেন। এবার তিনি বললেন আমাকে ইহ্সান সম্বন্ধে বলুন! হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ইহ্সান হল তুমি এমন ভাবে আল্লাহপাকের ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি তাকে দেখতে নাও পাও তবে মনে করবে যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? সে সম্পর্কে আমাকে বলুন! উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসকারীর চেয়ে এ বিষয়ে বেশি জানেন না। তাহলে এর কিছু আলামত আমাকে বলে দিন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন। বাদি নিজের মনিবকে জন্ম দেবে, এবং তুমি দেখবে যে কোন এক সময় যাদের পায়ের জুতা ও গায়ে কাপড় ছিলনা, ছিল হতদরিদ্র মেষচালক। সেসময় তার সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করে পরস্পরের গর্ব অহংকার করতে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন অতঃপর লোকটি চলে গেলেন। এরপর আমি দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করলাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন। হে ওমর বলতে পারো প্রশ্নকর্তা কে ছিল? আমি বললাম না হুজুর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন ইনি হযরত জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি তোমাদের নিকট আগমন করেছিলেন।


২.হাদীসঃ- 

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈমানের সত্তরটির ও অধিক শাখা রয়েছে। তারমধ্যে শ্রেষ্ঠটি হলো - আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ঘোষণা করা। আর নিম্নতম শাখাটি হল রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা। এবং লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।

৩.হাদীসঃ-

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেই মহান সত্তার কসম, যার কুদরতি হাতে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জীবন রয়েছে। এই উম্মতের যে কেউ চাই ইহুদি বা খ্রিষ্টান হোক আমার নবুয়্যতের কথা শুনবে। অথচ আমি যা সহকারে প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি ঈমান না এনে ইন্তেকাল করবে, সে নিশ্চয়ই জাহান্নামী হবে।

৪.হাদীসঃ-

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেছেন, তোমরা কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান -সন্ততি এবং সকল মানুষের চেয়েও প্রিয়তর  না হবো


   অনুচ্ছেদঃ ঈমানের নিদর্শনাবলী

৫. হাদীসঃ-

হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছে যে আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বীন, এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট  রয়েছে।

৬. হাদীসঃ-

হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালবাসলো, অথবা আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে শত্রুতা পোষণ করল, আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকল, কিংবা কাউকে দান-খয়রাত করল, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিল।

৭.হাদীসঃ-

হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে, জৈনিক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুল আল্লাহ! ঈমান কি? নবী করিম সাঃ বলেন। যখন তোমার সৎকাজ তোমাকে আনন্দ দান করবে এবং তোমার অসৎ কাজে তোমাকে কষ্ট দিবে, তখন তুমি মুমিন। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, হুজুর! অসৎ কাজ কি? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেনঃ যখন কোন কাজ করতে তোমার অন্তরে খটকা বাদে, তখন তা ত্যাগ করবে অর্থাৎ এই কাজ করবে না।

৮. হাদীসঃ-

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ।যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। তিনটি গুণ হলো-(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পৃথিবীর অন্য সব কিছু থেকে তার কাছে অধিক প্রিয়। (২) সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন বান্দাকে ভালোবাসে। (৩) সে ব্যক্তি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হতে যেমন রাজি নয়, তেমনি ভাবে আল্লাহপাক তাকে কুফর হতে পরিত্রান দানের পর পুনরায় কুফরীতে ফিরে যেতে সে রাজি নয়।


৯/ হাদীসঃ-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। কোন ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার প্রভৃতি আমি যা এনেছি অর্থাৎ (কুরআন হাদীস)  তার অধীন হবে।

১০/ হাদীসঃ-

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তিনটি বিষয় হচ্ছে ঈমানের বুনিয়াদী বিষয় সমূহের অন্তর্গত--(১) যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে, তার উপর আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকা। কোন প্রকার গুনাহের কারণেই তাকে কাফের বলে আখ্যায়িত করবে না। এবং কোন প্রকার আমলের কারণেই তাকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করবে না। যতক্ষণ না সে স্পষ্ট স্বীকার করে।(২) আল্লাহ তাআলা যে দিন হতে আমাকে নবী রূপে প্রেরণ করেছেন, সেদিন হতেই জিহাদের হুকুম দিয়েছেন। আমার উম্মতের লোকেরা দাজ্জালের সাথে জিহাদ না করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কোন অত্যাচারী শাসকের অবিচার কিংবা কোন ন্যায় পরায়ণ শাসকের ন্যায়বিচার এই জিহাদকে বাতিল করতে পারবেনা। (৩)তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা।

১১/ হাদীসঃ-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন ব্যক্তি নিজের গুনাহকে এরূপ মনে করে, যেন সে একটি পাহাড়ের পাদদেশে বসা; আর সেই পাহাড়টি তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে পাপী ব্যক্তি তার পাপকে দেখে মনে করে যেন একটি মাছি তার নাকের ডগা দিয়ে চলে‌। আর সে হাতের ইশারায় সেটা  তাড়িয়ে দিল।


  "তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপন"

১২/ হাদীসঃ-

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন বান্দা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করবে। আর সে পর্যন্ত কোন বান্দা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না সে নিশ্চিত জানবে, যে কল্যাণ বা অকল্যাণ তার কাছে পৌঁছেছে তা এড়াবার ছিল না। আর যা পৌঁছায়নি তা তার নিকট পৌঁছুবার ছিলনা।

১৩/ হাদীসঃ-

হযরত আবু খোযামা তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাঃ এর নিকট এসে আরজ করল ইয়া রাসুলাল্লাহ(সাঃ)! আমরা যে রুগে সুখে ঝাড়ফুঁক করি অথবা ওষুধ দ্বারা কোন উপায়ে আত্মরক্ষা করতে চেষ্টা করি। তা কি তাকদীরের কিছু পরিবর্তন করে? উত্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন। তোমাদের এ ধরনের চেষ্টাও আল্লাহর তাকদীরের অন্তর্গত।

১৪/হাদীসঃ-

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার অবস্থান জান্নাত  বা জাহান্নামে লিখে রাখা হয়নি। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাহলে কি আমরা তাকদীরের সে লিখনীর উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দেব না। রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন তোমরা আমল করতে থাকো। কেননা প্রত্যেকের জন্য তা সহজতর করে দেওয়া হয় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যে সুভাগ্যবান তার জন্য নেক কাজ করা সহজ হয়। আর যে দুর্ভাগা তার জন্য পাপ করাই সহজ হয়। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের একটি আয়াত পাঠ করলেন। অর্থ হলোঃ যে ব্যক্তি দান করেছে, অন্যায় কাজ হতে বিরত রয়েছে, এবং ভালো  কথার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, তার জন্য আমি বেহেশতের কাজ সহজ করে দিচ্ছি।

       ( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

১৫/হাদীসঃ-

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। প্রত্যেক সন্তান সহজাত ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা পিতা তাকে ইহুদী-নাছারা বা অগ্নি পূজারীতে পরিণত করে। যেমনি ভাবে পশুরা পূর্ণাঙ্গ পশু শাবকই প্রসব করে। তাতে তোমরা কোন কানকাটা দেখো কি বরং মানুষ তার কান কেটে নাক ছিদ্র করে বিকলাঙ্গ করে দে। অতঃপর  এটার প্রমাণে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন। আল্লাহর ফিতরাত যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই এটাই মজবুত দীন।

        (বুখারী,মুসলিম,মিশকাত) 


"তাকদীরের ব্যাপারে বেশি চিন্তা       করার  উপর কটিন নিষেধাজ্ঞা"


১৬/হাদীসঃ-

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন। আমরা তখন তাকদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। আমাদেরকে এ অবস্থায় দেখে নবী করিম সাঃ আমাদের উপর এত রাগান্বিত হলেন যে, রাগে তার চেহারা মোবারক রক্তিমবর্ণ হয়ে গেল। দেখে মনে হচ্ছিল যে, তার দুগালে ডালিমের দানা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর নবী করিম সাঃ আমাদেরকে বললেন। তোমাদের কি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নাকি এটা নিয়েই আমি তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্বকালের লোকেরা তখনই ধ্বংস হয়েছে যখন এ বিষয়ে তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে। আমি তোমাদের কসম দিয়ে বলছি, আবারো কসম দিচ্ছি- সাবধান এ বিষয় নিয়ে আর কখনো বিতর্কে লিপ্ত হয়োনা।

          ( তিরমিযী, মিশকাত)




"কাদরিয়া ও মুরজিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে সতর্কবাণী"


১৭/হাদীসঃ-

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। আমার উম্মতের মধ্যে দুই ধরনের লোকের ইসলামে কোন অংশ নেই।(১)মুরজিয়া

(২)কাদরিয়া।

             ( তিরমিজি, মিশকাত)

১৮/হাদীসঃ-

হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কাদেরিয়া সম্প্রদায় হচ্ছে এ উম্মতের অগ্নি পূজারী। সুতরাং তারা যদি পিরিত হয় তাদের দেখতে যাবে না। আর যদি তারা মারা যায় তবে তাদের জানাযায় হাজির হবে না।

   ( আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাত)

১৯/হাদীসঃ-

হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। আমার উম্মতের মধ্যে 'খাসফ'(ভূমিতে ধসিয়ে দেওয়া) এবং'মাসখ'( চেহারা ও আকৃতি পরিবর্তন করে দেওয়া) এর শাস্তি আপতিত হবে। তবে এটা তাকদীরে অবিশ্বাসীদের মধ্যেই ঘটবে। 

    ( আবু দাউদ, আহমদ, মিশকাত)

২০/হাদীসঃ-

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন। কাদরিয়াদের সাথে তোমরা উঠাবসা করো না। এবং তাদেরকে কোন ব্যাপারে সলিস নিযুক্ত করো না।

           ( আবু দাউদ, মিশকাত)

২১/হাদীসঃ-

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। আমার উম্মতের মধ্যে অথবা বলেছেন। এই উম্মতের মধ্যে তাকদীরে অবিশ্বাসীদেরকেই জমিনে ধসিয়ে দেওয়া, আকৃতি পরিবর্তন করা অথবা পাথর বর্ষণের মত শাস্তি দেওয়া হবে।

  ( তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত)

২২/হাদীসঃ-

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। আমি আমার উম্মতের উপর তিনটি কাজের কারণে শাস্তির আশঙ্কা করছি।(১) চাঁদ বা তারকার কক্ষপথের হিসাব অনুযায়ী বৃষ্টি প্রার্থনা করা। (২)রাজা-বাদশাহর অত্যাচার করা(৩) তাকদীর কে অবিশ্বাস করা।

             ( আহমদ, মিশকাত)



"মুমিন মারা গেলে আকাশ ও  পৃথিবী তার জন্য কাঁদে"

২৩/হাদীসঃ

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। প্রত্যেক মুমিনের জন্য দুটো দরজা রয়েছে। এক দরজা দিয়ে তার আমল উপর দিকে উঠে যায়। আরেক দরজা দিয়ে তার রিজিক অবতীর্ণ হয়। অতঃপর যখন সে মৃত্যুবরণ করে, সে দুটো দরজা তখন তার জন্য কাঁদে। এটা হচ্ছে আল্লাহর বাণীর অনুবাদঃ তাদের (কাফের) জন্য আকাশ ও পৃথিবী কাদেনি এবং তাদেরকে সুযোগও দেওয়া হয়নি।

            (তিরমিজি, মিশকাত)

                "মুমিনের সম্মান"

২৪/হাদীসঃ-

হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করে উচ্চ সুরে আহ্বান করে বললেন। ও হে, যারা অন্তরে ঈমান না এনে শুধু মুখে ঈমান এনেছ! তোমরা খাঁটি মুসলমানদের কষ্ট দিওনা, তাদেরকে লজ্জা দিওনা, এবং তাদের গোপন দোষ অন্বেষণ করো না। কেননা কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের দোষ তালাশ করলে আল্লাহ তাআলা তার দোষ তালাশ করবেন। আর আল্লাহ তা'আলা যার দোষ ধরবেন তাকে অপমান করবেন। যদিও সে নিজের ঘরে লুকিয়ে থাকে।

           (তিরমিজি, মিশকাত)

২৫/হাদীসঃ-

হযরত নাফে বলেন, একদা হযরত ইবনে উমর রাঃ বায়তুল্লাহ বা কাবা শরিফের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ তুমি কত মহান! তুমি কত সম্মানের অধিকারী! কিন্তু একজন মুমিন আল্লাহর নিকট তোমার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান ও সম্মানিত। 

               ( তিরমিজি )


            "মুমিনের সংশ্রব"

২৬/ হাদীসঃ-

হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন। তুমি মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী বানাবে না। আর মুত্তাকী ছাড়া অন্য কেউ যেন তোমার খানা না খায়।

           ( মিশকাত, তিরমিজি )

২৭/ হাদীসঃ-

হযরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। উত্তম এবং অধম লোকের সংস্পর্শে দৃষ্টান্ত যথাক্রমে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাপরে ফুঁ দানকারীর অনুরূপ। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই একটু দিয়ে দিবে, অথবা তুমি তার থেকে ক্রয় করবে, আর তা না হলে অন্তত তুমি তার থেকে সুঘ্রান পাবেই। আর কামারের হাপরের ফুলকি তোমার পোশাক পুড়িয়ে দেবে। নয়তো তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ পাবেই।

       ( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ) 


অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের প্রতি মুসলমানের হৃদ্যতা"

২৮/ হাদীসঃ-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। সেই পরিপূর্ণ মুসলমান যার হাত ও জবান থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর আল্লাহ তা'আলা যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করেছে।

              ( বুখারী, মিশকাত )

২৯/ হাদীসঃ-

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। তারা যেন একে অপরের সাথে খেয়ানতের  না করে, মিথ্যা কথা না বলে, এবং মুসিবতের সময় তার সাহায্য ত্যাগ না করে। প্রত্যেক মুসলমানের উপর প্রত্যেক মুসলমানের জান, মাল, মান, ইজ্জত সুসংহত। তাকওয়া ও পরহেযগারীর কেন্দ্রস্থল অন্তর। এখন কোন ব্যক্তির অন্তরে তাকওয়া থাকলে সে যেন নিজ মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান না করে। কেননা কোন ব্যক্তি খারাপ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে।               ( তিরমিযী )

৩০/ হাদীসঃ-

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুনিয়াবী পেরেশানী দূর করে দেবে। আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন অগণিত বিপদ থেকে মুক্ত করবেন। যে ব্যক্তি লেনদেনের ব্যাপারে কোন দরিদ্র লোকের সাথে সহজ ব্যবহার করবে। আল্লাহ তা'আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্য সে রূপ ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে। আল্লাহ তা'আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে লেগে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ তার সাহায্যে লেগে থাকবেন।          (তিরমিযী)  

  


উপরের অংশ পড়তে এখানে ক্লিক ক্রুন।


যে ব্যক্তি রোজা রাখল অথচ নামাজ
পড়ল না, সে যেন সারাদিন ঐ ক্ষুধার্ত
কুকুরের মত ছুটল অথচ খাবার পেল না. . .
.
---- বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন