❤ গল্পঃ উৎসাহ ❤
লেখকঃ হাসান মাহমুদ
তখন আবির অনেক ছোট। বয়স সাত কিংবা আট হবে। সে তাঁর বাবার কাজে সহযোগিতা করছে। বাবা আবিরের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আবির! তুমি কি আজ স্কুলে যাবেনা? স্কুলের সময় তো হয়ে গেছে। আবির বললোঃ বাবা আজ স্কুল বন্ধ। তাই আজ আমি আপনার কাজে হেল্প করবো।
বাবা কিছুক্ষণ আবিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেনঃ আবির তুমি কি কবিতা লেখতে পারো? আবির বললোঃ হ্যাঁ! বইয়ের সকল কবিতা আমার মুখস্থ। বাবা বললেনঃ ওইগুলো না। তুমি কি নিজে বানিয়ে লেখতে পারো? আবির তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো " হ্যাঁ বাবা আমি লিখতে পারবো। আবিরের এমন সাহসি জবাব বাবাকে মুগ্ধ করলো। বাবা বললেনঃ তুমি পারবে। তুমি এখন গিয়ে একটা কবিতা লেখে এনে দেখাওতো।
আবির দৌড়ে ঘরে গিয়ে খাতা কলম নিয়ে বসলো। জানালা দিয়ে দেখতে থাকলো নীল আকাশ আর সবুজ প্রকৃতি। রয়েছে নানা রকম পাখি আর তাদের মন মাতানো সুর। সে লেখতে লাগলো আপন মনে। প্রতিটি লাইনে যেন ছন্দের মুক্তা বয়ে যাচ্ছে। সে তোলে ধরার চেষ্টা করছে আল্লাহর সৃষ্টির অপরূপ মহিমকে। সৃষ্টির সৌন্দর্য তোলে ধরছে নিষ্পাপ মনের মাধুরী মিশিয়ে।
ইতিমধ্যে আট লাইন লেখা হয়ে গেছে। পরীক্ষায় স্বাভাবিকভাবে আট লাইন লিখে দিলেও হয়। তাই সে আট লাইন লিখে খাতা নিয়ে গেল বাবার কাছে। বাবা নিজের কাজ রেখে গাছের ছায়ায় নিয়ে গেলেন আবিরকে। খাতা হাতে নিয়ে পড়তে থাকলেন, আবিরের লেখা কবিতা আবৃত্তি করে। পড়া শেষ হতেই মা শা আল্লাহ বলে পরম মমতায় আবিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আর চুমে খেলেন তাঁর কপালে। বললেনঃ বাবা খুব সুন্দর হয়েছে। তোমার লেখা কবিতা পুরো কবিদের মত হয়েছে। তুমি পারবে। তুমি কি এই পুরোপৃষ্টা ভরে কবিতার বাকি অংশ লিখতে পারবে? বাবার উৎসাহ পেয়ে আবির বললোঃ ইন শা আল্লাহ! অবশ্যই আমি বাকিটুকুও পারবো।
আবির ঘরে ফিরে পুনরায় লেখতে বসে। তাঁর এক লাইন শেষ হতেই, অন্য লাইনের ছন্দের মালা ঝরছে। এভাবে এক পৃষ্টা, দু'পৃষ্টা, তিন পৃষ্টা লিখে নেয়। বাবা ঘরে আসলে, আবির তাঁর লেখা কবিতা পড়ে শুনায় সবাইকে। সবাই তাকে উৎসাহ দেয়। সেদিন থেকে আবির পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই কবিতা লেখে বাবাকে উপহার দেয়।
একদা এক গল্পের বই আবির দেখতে পায়। সে তা খুব ভালো করে পড়ে। বইটি পড়া শেষে আরেকটি বই হাতে নেয়। যতই গল্প পড়ে ততই তাঁর মাথায় নতুন কোন গল্পের আইডিয়া আসে। সে বাড়ি ফিরে খাতা কলম হাতে নিয়ে লেখতে বসে। ঘণ্টা খানেকপর দেখে তাঁর এক গল্পের পরিধি পাঁচ পৃষ্টা হয়ে গেছে। সে আনন্দের সাথে বাবা বাবা বলে চিৎকার দিয়ে বাবার কাছে যায়। বাবা তাঁর এমন খুশি দেখে তাঁর খুশিতে তিনিও শরীক হলেন। তিনি তাকে পাশে বসিয়ে পড়তে থাকলেন তাঁর প্রিয় ছেলের লেখা প্রথম গল্প। তিনি গল্প পড়ে আনন্দিত হলেন। বললেনঃ বাবা তুমি আমার গর্ব।
সেদিন থেকে কবিতার পাশাপাশি আবির গল্প লেখতে শুরু করে। কিন্তু সে জানতো না ছোট গল্প আর উপন্যাস কাকে বলে। একদিন দেখে তাঁর এক সহপাঠি খুব মনোযোগ দিয়ে কী যেন এক বই পড়ছে। সে তাকে গিয়ে ডাকলো। কিন্তু সহপাঠিটি যেন কিছুই শুনছেনা। হারিয়ে গেছে অজানা কোন এক জগতে।
ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরার সময় হলো। আবির তাঁর সেই বন্ধুকে বলেঃ তোমার বইটি কি আমাকে দেওয়া যাবে? বন্ধু বললোঃ হ্যাঁ, তুমি নিতে পারবে। আমার পুরো বই পড়া শেষ হয়ে গেছে। আবির কৌতূহল স্বরে বললোঃ পুরো বই! আমাকে তো পড়তেই হবে।
বাড়ি এসে বইটি খোললো। দেখে এটি একটি উপন্যাস। যে উপন্যাস পড়ার জন্য সে উদগ্রীব হয়েছিলো। সে একাধারে বসে বইটি পড়ে নিলো। এবার তাঁর আরেকটি বই লাগবে। লাইব্রেরী থেকে আরেকটি উপন্যাস কিনে আনলো। এভাবে অনেক বই পড়া হয়ে গেলে ভাবলো তাঁর মনেও তো এমন কত শত গল্প উঁকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সে কীভাবে শুরু করবে? উপন্যাস লেখার নিয়ম কী তা জানতে অনলাইনে সার্চ দিলো। সাথে সাথে পেয়ে গেলো তাঁর কাঙ্ক্ষিত উত্তর। সে তা আত্মস্থ করে নিলো। এরপর শুরু করলো তাঁর উপন্যাস লেখার যাত্রা।
যেদিন থেকে সে গল্প,কবিতা, উপন্যাস লেখা পুরোদমে শুরু করলো। সেদিন থেকে সে লক্ষ্য করলো তাঁর পড়ার গতী আরো বেড়ে গেছে। সে এখন বড় কোন প্রশ্ন বা বই দেখলে ভয় পায়না। ভাবে এমন বইতো আমি মাত্র দুই, তিনদিনেই শেষ করতে পারি। কোন জিনিসের সারমর্ম জানলে বাকিগুলো অনায়াসে লেখতে পারি। সে দেখলো তাঁর বানান, শব্দ চয়ন আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছে। কারণ বই পড়ার সময় সে বানান, নতুন নতুন শব্দের অর্থ জানার চেষ্টা করে। যাতে লেখতে সুবিধা হয়। নতুন নতুন শব্দ যোগের ফলে লেখনীর সৌন্দর্য বেড়ে উঠে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন