❤ গল্পঃ ভালোবাসি ❤
লেখকঃ হাসান মাহমুদশীতের রাতে বাসে করে ঢাকা যাচ্ছি। গভীর রাত হয়ে গেছে। বাহিরে বেশ কুয়াশা পড়েছে। গরম কাপড় পরার পরও বেশ ঠান্ডা লাগছে। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাপড় মুড়ি দিয়ে জড়সড় ভাবে বসে আছি।
মাঝ পথে যাত্রা বিরতি হলো। যাত্রীরা সবাই নেমে গেলো রেস্টুরেন্টে। আমিও গাড়ি থেকে নামতে যাবো। তখন দেখি আমার ওপাশের সিটে একটি মেয়ে একা বসে আছে। সামনের সিটে বসে আছে কয়েকটি যুবক।
ওরা মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। মেয়েটি আমার দিকে অসহায় চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে ইশারা দিলাম। সেও নেমে গেলো আমার সাথে গাড়ি থেকে।
গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলাম রেস্টুরেন্টে। মেয়েটিও আমার পিছু পিছু গেলো। সে রেস্তোরায় প্রবেশ করে আমার পাশের টেবিলে বসলো। অর্ডার দিলো মনের মত। আমিও কিছু নাস্তা করে রেস্ট নিচ্ছিলাম। তখন ওই ছেলেগুলা মেয়েটির টেবিলে এসে বসতে চাইলো। আমি সাথে সাথে চলে গেলাম ওই টেবিলে। কথা শুরু করলাম তাঁর সাথে। ছেলেগুলো ভাবলো হয়ত আমরা পূর্ব পরিচিত। তাই তাঁরা চলে গেলো।
এভাবে আমরা গাড়িতে উঠে গেলাম। কথা কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। মেয়েটির কথাগুলো ছিলো খুব মিষ্টি। তাঁর হাসি যে কারো মন কেড়ে নিবে। বিদায় নিয়ে নেমে গেলাম বাস থেকে।
হঠাৎ শুনি কে যেন আমাকে ডাকছে। আমি পিছন ফিরে দেখি। ওই মেয়েটি। সে আমার দিকে দৌড়ে আসছে। কাছে এসে আমার হাতে একটি ডায়রি দিয়ে বললোঃ এটি আপনার সিটে পেয়েছি। আমি নোটবুকটি হাতে নিয়ে দেখি এটি আমার। যেটিতে আমি গল্প লেখি। মেয়েটি আবারো বিদায় নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় স্মৃতি হিসেবে রেখে গেলো এক টুকরো মিষ্টি হাসি। বাসায় ফিরে আসলাম। কেটে গেলো একমাস।
একদিন সন্ধ্যায় জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছি। তখন ফোন বেজে উঠলো। আমি কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে কে যেন বলে ওঠলো। লেখক সাহেব কেমন আছেন? আমি বললামঃ কে আপনি? মেয়েটি বললোঃ আমি নাদিয়া। ওইদিনের বাসে আপনার ওপাশের সিটে বসা মেয়েটি।
আমি অবাক হয়ে বললামঃ আমার নাম্বার কীভাবে পেলেন? আর কীভাবেই বা জানলেন আমি লেখি? সে বললোঃ আমি আপনার ডায়রি দেখেছি। ওখান থেকেই নাম্বার পেয়েছি। সেদিন থেকে নাদিয়ার সাথে আমার পরিচয়।
নাদিয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রি। পড়া লেখায় অনেক ভালো। প্রতিদিন আমার খবর নিতো। একদিন বাসা থেকে বের হবো। দেখি নাদিয়া গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে বললামঃ তুমি! সে বললোঃ হ্যাঁ, আমি। এখানে এক বান্ধবীর বাসায় এসেছি। ভাবলাম আপনাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দেখি।
দু'জন মিলে হাটতে লাগলাম। গল্প হলো অনেক বেশি। আমি তাঁর মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখছি তাঁর হাসি। কথা হলো অনেক কিছু নিয়ে। জানা হলো একে অপরের পছন্দ অপছন্দের কথা। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তাকে গাড়িতে তোলে দেই। বাসায় ফিরে কিছুই ভালো লাগছেনা। কেন যেন আজ খুব একা লাগছে। হৃদয়ে শূন্যতা বাসা বেঁধেছে।
পরদিন বিকেলবেলা চলে গেলাম নাদিয়ার কলেজের সামনে। কলেজ শেষে বের হতেই সে আমাকে দেখে। দৌড়ে চলে আসে আমার কাছে। বললোঃ আপনি! আমি তাঁর দিকে গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিতে দিতে বলি " আমি তোমাকে ভালোবাসি "।
সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁর দু'চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। একটুপর সে আমার ফুলটি হাতে নিয়ে বলতে থাকে " আমিও তোমাকে ভালোবাসি "।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন