❤ গল্পঃ লাল পাখি ❤
লেখকঃ হাসান মাহমুদ-এই ওঠো
-হুমম উঠছি
-কই এতক্ষণ ধরে ডাকছি, এখনো উঠছোনা। তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছেতো। আজ কি আমার তিলাওয়াত শুনবেনা?
আজ মায়মুনার তেলাওয়াত করার কথা। স্মরণ হতেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে ওঠি। সাথে সাথে চলে যাই অযু করতে।
মায়মুনা আমার প্রিয়তমা স্ত্রী। আমাদের বিয়ের এক বছর হয়েছে। বিয়েটি পারিবারিক ভাবে হয়েছিলো, কিন্তু মায়মুনার ভালোবাসা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে তাকে ছাড়া কাটানো দিনগুলোর কথা। এখন মনে হয় যেন আমরা চিরচেনা। জন্মেরপর থেকে আছি আমরা একত্রিত।
মায়মুনাকে যেদিন প্রথম দেখতে যাই। সেদিন সে এসেছিলো লাল শাড়ি পরে আমার সামনে। দু'জনের চোখাচোখি হতেই আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। যেন কোন এক অদৃশ্য মায়া আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
মায়মুনা আমার দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হয়ত প্রথম দেখাতেই আমার মনের কথা বুঝে নিয়েছে। আমি নিজেকে একটু সামলে নিলাম। অতঃপর শুরু হলো আমাদের কথাবার্তা। দু'জনের পরিচয় শেষে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। আপনি কি গত পরশু তাহাজ্জুদ পড়েছেন? মায়মুনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। বললামঃ আপনি কি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন? এবারো তার কাছ থেকে হ্যাঁ সূচক উত্তর পেয়ে আমার হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠলো।
যেন আমি সত্যি এমন কিছু পেয়ে গেছি। যা আমি বহুদিন থেকে চাচ্ছি। লালন করছি হৃদয়ের আঙিনায়। কত শত স্বপ্ন দেখেছি তাকে নিয়ে। দেখেছি আমার স্ত্রী একজন দ্বীনদার হবে। সেদিন আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। এক সাপ্তাহপর আমাদের বিয়ে হয়।
বাসর ঘরে আমি সালাম দিয়ে প্রবেশ করি। মায়মুনা বিছানা থেকে মৃদু স্বরে সালামের উত্তর দেয়। সে লাল ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। আমি দোয়া পড়ে ঘুমটা সরাতেই দেখি, যেন আমার ঘরে চাঁদ বসে আছে। যে আমার দিকে ভালোবাসার চাহনি দিয়ে হাসছে। যে হাসি আমার হৃদয় শীতল করে দিচ্ছে। আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলাম।
অতঃপর দু'জন মিলে দু'রাকাত নফল নামায পড়লাম। এরপর দুআ করলাম মন খোলে প্রভুর কাছে। নিজেদের আগত দিনগুলোর জন্যে। দুআ শেষে মায়মুনার আবদার। তাকে কোরআন তেলাওয়াত করে শুনাতে হবে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ শেষে। আমি সম্মতি জানালাম তাঁর আবদারে। তবে আমি বললামঃ একদিন আমি পড়বো, আরেকদিন তুমি পড়বে। আমি কতদিন থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছি। আমি তেলাওয়াত শুনবো আমার প্রিয়তমার মধুর স্বরে।
সে রাজি হয়ে গেলো আমার প্রস্তাবে। শুরু হলো আমাদের দাম্পত্য জীবন। সেদিন থেকে শুরু আমাদের এই যাত্রা। সেই হিসেবে আজ সে পড়বে। মায়মুনার মধুর স্বরে তেলাওয়াত, আমার আত্মাকে প্রশান্ত করে দেয়। আমি তাঁর কোলে মাথা রেখে শুনি। মহান রবের হেরা গুহায় পাঠানো শুরু করা তাঁর অমূল্য বাণী।
-এই কী হলো? এখনো বের হচ্ছোনা যে।
মায়মুনা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি দ্রুত অযু পড়ে বেরিয়ে গেলাম। অতঃপর দু'জন মিলে তাহাজ্জুদ পড়ে নিলাম। নামায ও দুআ শেষে শুনতে থাকলাম তেলাওয়াত আমার লাল পাখিটির স্বরে। যে আমাকে তাঁর জীবন দিয়ে ভালোবাসে। যাকে দেখতাম আমার স্বপ্নে।