হারল্যান্ড ডেভিড সন্ডারস
কেএফসি এর তৈরি মাংস ভাজা খেয়ে আংগুল চাটেনি এমন মানুষ বিরল। জানতে চান তাঁর নিজের জীবন কি রকম ছিল? রেসিপির থেকেও কম মজাদার নয় কিন্তু তার জীবনকাহিনী । প্রথম সাফল্যের মুখ দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল 62 বছর বয়স পর্যন্ত। তবু হার মানেননি। তিনি কেএফসি এর প্রতিষ্ঠাতা।
পুরো নাম হারল্যান্ড ডেভিড সন্ডারস।জন্ম 1890 এর 9 সেপ্টেম্বর আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় । তিনি তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় । বাবা উইল বার ছিলেন ফার্মের মালিক । 80 একর জমি ছিল তার । মা মার্গারেট ছিলেন গৃহবধু এবং ধর্মভীরু ক্যাথলিক খ্রিস্টান । ডেভিড যখন পাঁচ বছরের, হঠাৎ মারা যান তার বাবা। মাকে ঘর-সংসার ফেলে বেরুতে হতো কাজে। দুই ভাই-বোনকে খাওয়াতেন বালক ডেবিট। দু'বছরের মধ্যে তিনিশেষে গেলেন পাউরুটি আর মাংসের নানা পদ।
10 বছর বয়সে নিজেই গেলেন খামার বাড়ির কাজে। তার দু বছর বাদে আবার বিয়ে করলেন মারগারেট । কিন্তু সৎ বাবা সহ্য করতে পারতেন না তিন ভাইবোনকে । বীতশ্রদ্ধ ডেভিড স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে দিলেন ক্লাস সেভেনে । মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের ফলে বদলে গিয়েছিল ঠিকানা। এবার নিজেই বাড়ি ছেড়ে ইন্ডিয়ানার অন্য প্রান্তে চলে গেলেন ডেভিড।
কিছুদিন নানা কাজের পরে মায়ের কথায় আশ্রয় নিলেন এক আত্মীয়র বাড়ি । তারপর বিভিন্ন কাজ করেছেন ।বাস কোম্পানিতে কন্ডাক্টর ।সেনাবাহিনীর চাকরি। রেলের কাজ । রেলের ইঞ্জিন থেকে ছাই সাফাই এর কাজ । রেলের ইঞ্জিনে কয়লা যোগানোর কাজ । এর মাঝেই বিয়ে করেন জোসেফিন কে। মাত্র 19 বছর বয়সে। জন্ম হয় 1 ছেলে ও 1 মেয়ে। ছেলে অল্প বয়সে মারা যান টনসিলের সংক্রমণে ।
করেসপন্ডেন্স কোর্সে আইন পড়তে শুরু করলেন । কিন্তু তার মাঝেই রেল বোর্ডের চাকরি। কর্মক্ষেত্রের বিবাদের জেরে। স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন তার বাবা-মায়ের কাছে। আইন পাস করে প্র্যাকটিস শুরু করলেন বটে ভালোই উপার্জন চলছিল । কিন্তু বন্ধ হয়ে গেল বদমেজাজের জন্যই। নিজের মক্কেলের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়লেন ঝামেলায়।
এরপর জীবন বীমা কাজ করেছেন। শুরু করেছেন নিজের ফেরি কোম্পানি। সেটা বন্ধ করে খুললেন অ্যাসিটিলিন বাল্ব তৈরি। তাও চললো না। বাজারে এসে গেলো ইলেকট্রিক বাল্ব। জীবন স্রোতে ভাসতে ভাসতে এলেন কেনটাকিতে । একাজ সেকাজের পরে তিথু হলেন অয়েল কোম্পানির কাজে।পাশাপাশি শুরু করলেন শৈশব থেকে চেনা কাজ রান্না। চিকেন এর নিজস্ব প্রিপারেশন খাওয়াতে লাগলেন স্থানীয়দের । সেই যে মায়ের অনুপস্থিতিতিতে রান্না করে খাওয়াতেন ভাই-বোনদের । সেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ভিতরে। দ্রুত জনপ্রিয় হলো তার মাংস ভাজা রেসিপি। সুখ্যাতির স্বীকৃতিস্বরূপ পেলেন কর্নেল অফ কন্টাকি উপাধি। এর মাঝে আবার জড়িয়ে পড়লেন খুনের মামলাতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বন্ধ হয়ে গেল তার হোটেল ব্যবসা। দীর্ঘ কয়েক বছর পরে নব রূপে আবির্ভূত হলো তার গোপন রেসিপি চিকেন কেএফসি নামে। আমেরিকার উঠাইতে সাউথ সল্টলেক এলাকায় । তখন তার বয়স 62 বছর।বাকিটা ইতিহাস।
তবে এই ব্যবসাতেও কিন্তু বেশিদিন মন বসাননি চির বাউন্ডুলে ডেভিড স্যান্ডার্স। 19 64 সালে দুই মিলিয়ন ডলারে। কেএফসির ব্যবসা তুলনায় এটি কিছুই নয়। লোগোতে তার ছবি থাকবে ,এই মর্মে মোটা বেতন পেতেন তিনি । পরে নিজের লোকসান বুঝতে পেরে কেএফসি কে মামলায় ফাঁসাতে চেয়েছিলেন । কিন্তু করতে পারেননি ।
ফিরে আসি ব্যক্তিগত জীবনে।1947 সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় স্ত্রী জোসেফিন এর সঙ্গে। তখন তিনি পরকীয়া ডুবে আছেন । তার প্রথম রেস্তোরাঁ ক্লডিয়ার সঙ্গে। তারপর ক্লডিয়াকে বিয়ে করেন 1949 সালে । মূলত ক্লডিয়ার উত্সাহ আর অনুপ্রেরণায় বাস্তবায়িত হয় কেএফসি।
১৯৮০ এর ১৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন কর্নেল অফ কেনটাকি , হারল্যান্ড ডেভিড সন্ডারস । মৃত্যুর কয়েক দিন আগে অবধি ছিলেন কর্মঠ । তিনি দেখে যেতে পেরেছিলেন 48টা দেশে কেএফসির 6 হাজার আউটলেট। তখন বার্ষিক ব্যবসা ছিল দুই বিলিয়ন ডলারের । এখন সেটা 5.8 বিলিয়ন ডলার ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন